এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকলেও ভ্যান চালিয়ে সংসার যাপন প্রাক্তন কাউন্সিলরের

দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকলেও ভ্যান চালিয়ে সংসার যাপন প্রাক্তন কাউন্সিলরের

 

“একবার কাউন্সিলর থাকলেই তিন পুরুষ বসে খাওয়া যায়।” বর্তমান রাজনীতির প্রক্ষাপটে এরকম কথা প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সম্প্রতি গোবরডাঙ্গার এক প্রাক্তন কাউন্সিলার নিজের জীবন জীবিকা নির্বাহ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে রীতিমতো চাঞ্চল্য এবং বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একাংশ। জানা যায়, তিনি সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে রাত্রি নটা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে তার সংসার চলে। বিগত দিনে 2000 সাল থেকে 2010 সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি।

বামপন্থী মতাদর্শ নিয়ে নিজের জীবন এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়েছেন তিনি। কার্যকালের সম্পূর্ণ অংশ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন বলে জানিয়েছেন এই প্রাক্তন কাউন্সিলার। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মতো কার্যকলাপ করেছেন।

পৌরসভার থেকে সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি বাসভবনে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এলাকায় জল নিকাশি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা, চলাচলের জন্য পিচ ঢালাই, রাস্তার ব্যবস্থা সহ একাধিক কার্যকলাপ সম্পন্ন হয়েছে তার হাত দিয়ে। কিন্তু এই মানুষটি কোনোদিন নিজের জন্য সরকারি প্রকল্পে বাসভবন নেননি। তথাপি বিপদে-আপদে চিরকাল সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর প্রাক্তন কাউন্সিলরের কথা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে এলাকার সাধারণ মানুষের বক্তব্যে।

তার এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, অনেক জনপ্রতিনিধিরাই রয়েছেন, যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। কিন্তু বাবুকে এই বয়সেও ভ্যান চালিয়ে পরিবার প্রতিপালন করতে হচ্ছে। প্রাক্তন কাউন্সিলরের পারিবারিক অবস্থাও যথেষ্ট দৈন। এলাকায় তিন কাঠা জমি কিনে বাড়ি করেছেন। কিন্তু প্লাস্টার করতে পারেননি। পাশাপাশি নিজেও পাকা করতে পারেননি। কার্যত কাঁচামাটির মেঝেতেই তার দিন কাটছে। স্বল্প উপার্জনের মধ্যেই নিজের তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এই প্রাক্তন কাউন্সিলর।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

পাশাপাশি তিন মেয়েকে বিয়ে দিতে বাজারে রীতিমতো দেনার মুখে পড়ে আছেন এই ব্যক্তি। নিজের বাসভবনটুকু পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। এলাকায় নিজের সুনামের জেরে যার কাছে বাসভবন বিক্রি করেছেন, তাকে অনুনয়-বিনয় করে এক বছর পর্যন্ত সেই বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। জানা যাচ্ছে, প্রাক্তন কাউন্সিলার প্রথম জীবনে ছিলেন একজন মুদির দোকানদার। 2011 সালে তিনি দমদমের ডেকোরেটার্সের কাজ নেন।

সেখানে তিনি বাশ বাধা থেকে শুরু করে কাপড় লাগানোর কাজ করতেন। একই কাজ তিনি করেছেন পরবর্তীতে গোবরডাঙ্গা এলাকাতে। বর্তমানে বয়স 68 হয়ে যাওয়াতে ওই রকম পরিশ্রমের কাজ আর করতে পারেন না। তাই কার্যত ভ্যান চালিয়ে নিজের পরিবারকে প্রতিপালন করতে ইঞ্জিন ভ্যান কিনে পরিবার প্রতিপালন করছেন।

তার পাশাপাশি তার স্ত্রী জোসনাদেবী নারকেল পাতা বের করে বাজারে বিক্রি করেন। তবে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাবুর কোনো আক্ষেপ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। এই বিষয়ে তার বক্তব্য, নিজের কথা আমি ভাবি না। ভ্যান আমার রুজি-রুটির ব্যবস্থা করে। তবে এলাকাবাসীর কাছে কিন্তু কাউন্সিলর হিসেবে বাবুর সুনাম রয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং নির্বিশেষে মানুষের সেবা করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক এলাকাবাসী।

এদিন এই প্রসঙ্গে বর্তমান পুরপ্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের সুভাষ দত্ত বলেন, “বাবু একজন সৎ মানুষ। তিনি নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার মানুষ নন। ওকে আমরা সব রকমের সহযোগিতা করছি।” রাজনৈতিক মহলের মতে, বর্তমান রাজনীতিতে যখন নিজের ভালোর কথা বুঝে নেওয়ার যুগ চলে এসেছে, সেই সময় এই ব্যক্তি রীতিমতো নজির হয়ে দাঁড়িয়েছেন সকলের কাছে। রাজনীতিতে এরকম ব্যক্তিদের আধিক্য কবে হবে! সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!