এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বিজেপিতে যোগ দিলেও ‘পুরোনো মামলায় প্রাক্তন তৃণমূলীরা’ দলকে পাশে পাবেন না! স্পষ্ট করলেন দিলীপ

বিজেপিতে যোগ দিলেও ‘পুরোনো মামলায় প্রাক্তন তৃণমূলীরা’ দলকে পাশে পাবেন না! স্পষ্ট করলেন দিলীপ

তৃণমূল ছেড়ে একের পর এক নেতা যখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, ঠিক তখনই তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, দুর্নীতিতে জড়িত নেতারাই শ্রীঘরে যাওয়া থেকে বাঁচতে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই! তাহলে কি বিজেপিতে যোগ দিলেই সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে! আর তাই কি তৃণমূলের দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকা নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়ে নিজেদের পাপকে দূরীভূত করতে চাইছেন!

সমালোচক মহলের পক্ষ থেকে এই রূপ দাবি করা হলেও তা সম্পূর্ণরূপে নস্যাৎ করে দিতে দেখা গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। জানা যায়, বিগত বাম আমলে লাভপুরে বালির ঘাটের বিবাদকে কেন্দ্র করে সালিশি সভা ডেকে তিনজনকে খুনের মামলায় নাম জড়িয়েছিল প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপির মনিরুল ইসলামের।

অনেকেই ভেবেছিলেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় হয়ত বা সেই সমস্ত তদন্ত থেকে রক্ষা পাবেন তিনি। কিন্তু সেই মামলায় ফের মনিরুল ইসলাম তদন্তের মুখে পড়লেও আশ্চর্যজনকভাবে তার পাশে দাঁড়াচ্ছে না তাঁর নতুন দল বিজেপিকে। জানা গেছে, ওই মামলায় নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পুলিসি তদন্তে একবার ক্লিনচিট পেলেও নতুন করে কার্যত তাঁর বিরুদ্ধেই যে তদন্ত শুরু হচ্ছে তা স্পষ্ট।

আগামী তিন মাসের মধ্যে সেই তদন্ত রিপোর্টও জমা দিতে বলেছে আদালত। আর হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর মৃতদের পরিবার খুশি হলেও প্রবল চিন্তায় পড়েছেন মনিরুল ইসলাম। কিন্তু তিনি যে তাঁর নতুন দলকে পাশে পাবেন না তা এদিন কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বোলপুরে আসা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সাংবাদিকরা এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “যাঁকে ডেকেছে তাঁকে কোর্টে যেতে হবে। দল হিসেবে বিজেপির এতে কিছু করার নেই।” আর এতেই স্পষ্ট, বিজেপিতে যোগ দিলেও তার ভূতপূর্ব দুর্নীতির জন্য যে বিজেপি সেই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবে না, তা এদিন মনিরুল ইসলামকে দিয়েই সকলকে বার্তা দিয়ে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, লাভপুরের বুনিয়াডাঙা গ্রামে বাড়ি এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের। গত লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। ২০১০সালে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকে থাকার সময় বালি ঘাটের দখল নিয়ে গ্রামে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন তাঁর নিজের বাড়িতে সালিশি সভা ডাকেন মনিরুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গেলে সেই সালিশি সভায় ব একই পরিবারের তিন ভাই কটুল শেখ, ধানু শেখ ও তুরুক শেখকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে।

আর এই ঘটনায় নিহতদের আরেক ভাই জামাল শেখ মনিরুল ইসলাম সহ মোট 52 জনের নামে লাভপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাও শুরু হয়। কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পরেই রাজ্যে পালাবদলের ঠিক আগে সেই মনিরুল ইসলাম ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন।

এমনকি লাভপুর এলাকার তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। আর তৃণমূলের বিধায়ক হিসেবে বিভিন্ন সময় তার বিতর্কিত মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবে সেই খুনের ঘটনার প্রায় সাড়ে চার বছর পর বোলপুর মহকুমা আদালতে ৩০জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় লাভপুর থানার পুলিস। আর সেই চার্জশিট থেকে আশ্চর্যজনকভাবে অন্যতম অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামের নাম বাদ যেতেই রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

যার পরে সেই ঘটনার বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নিহতদের পরিবার। তাদের তরফ থেকে পুনরায় তদন্ত করার আবেদন জানানো হলে সেইমতো হাইকোর্ট থেকে রাজ্য পুলিসকে ঘটনার পুনরায় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার পুলিস সুপারের তত্ত্বাবধানে আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে বলে জানানো হয়। এছাড়াও সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প ২০১৮ অনুযায়ী মামলাকারী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। পুনরায় তদন্ত শুরু হওয়ার কথা জানতে পেরে খুশি নিহতদের পরিবার।

এদিন এই প্রসঙ্গে নিহতদের ভাই জামাল শেখ বলেন, “বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা এবার সঠিক ন্যায়বিচার পাব।” কিন্তু বীরভূমের জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য চলা লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল গত লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। আর তারপরই সেই লাভপুর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য।

অনেকে বলছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়াতেই মনিরুল ইসলামের উপর এহেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেওয়া হচ্ছে। তবে তৃণমূল অতীতের এই লাভপুর হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিলেও বিজেপি যে কোনো নেতা তাদের দলে যোগদান করলেও তার দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেবে না তা এদিন কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মনিরুল ইসলামের পাশে না দাঁড়িয়ে কলকাতা হাইকোর্ট তদন্ত করছে। তাই তদন্ত তদন্তের মচ করে চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এদিন এই প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, “এটা আদালতের বিষয়। আমাদের কিছু বলার নেই।” অন্যদিকে যাকে নিয়ে এত কিছু সেই মনিরুল ইসলাম বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। আমি নির্দোষ হওয়ায় চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন চার বছর পর বলা হচ্ছে, তদন্ত ভুল হয়েছিল। এসব করে কিছু হবে না, আমি নির্দোষ। আমি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এসব করা হচ্ছে।”

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!