প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –   সম্প্রতি নারদ কান্ডে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার লক্ষণ বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে তৃণমূল নেত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের অন্যান্য নেতা কর্মীরা দলের নেতা, মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার হওয়ার সাথে সাথেই রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন।

বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরের সামনে। যাকে হাতিয়ার করে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে এই রাজ্যে কোনোমতেই মামলা চালানো সম্ভব নয় বলে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তাই সেই মামলা অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হোক বলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর এই বিষয়টি নিয়ে এখন চিন্তা শুরু হয়েছে তৃণমূলের মধ্যে। যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাপস পালের মত এই মামলাকেও অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেখানে গিয়ে আরও চাপের মুখে পড়ে যেতে পারেন তৃণমূলের ধৃত নেতা-মন্ত্রীরা বলে মনে করা হচ্ছে।

সেদিক থেকে হাইকোর্টে শুনানি যখন বুধবার শুরু হয়েছিল, তখন যাতে সেই হাইকোর্টের সামনে গিয়ে কেউ উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরী না করেন, তার জন্য আগেভাগেই আবেদন করে বসলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম। যেখানে আগাম আশঙ্কাজনক ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে যাতে কেউ কোনো অশান্তি না করেন, তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের কাছে আবেদন করতে দেখা গেল তাকে। স্বাভাবিক ভাবেই হাইকোর্টে শুনানির আগে ফিরহাদ হাকিমের কন্যার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এখন ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর দুটোয় হাইকোর্টে নারদ মামলার শুনানি ছিল। আর তার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেন ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে প্রিয়দর্শনী হাকিম। যেখানে তিনি বলেন, “আমার বাবাকে অসাংবিধানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার মাথাতেও আগুন জ্বলছে। কিন্তু শান্ত থাকুন। দয়া করে কেউ হাইকোর্টের সামনে যাবেন না। ওখানে উত্তেজনাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ওরা আবারও বাইরে নিয়ে গিয়ে টরচার করতে পারে।”

আর প্রিয়দর্শিনী হাকিমের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই এখন শুরু হয়েছে চর্চা। অনেকে বলছেন, ইতিমধ্যেই একপ্রস্থ অশান্তির খবরকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিবিআই দপ্তর চলে যাওয়ার ঘটনাকে হাতিয়ার করে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ তুলেছেন তারা‌। সেক্ষেত্রে অন্য রাজ্যে মামলা নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎপরতা গ্রহণ করতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

আর যদি তা হয়, তাহলে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীদের ভবিষ্যৎ কার্যত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সকলের কাছে। তাই একদিকে তৃণমূল যখন চেষ্টা করছে, কোনোভাবেই যাতে এই মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত না হয়, সেই বিষয়টি দেখার, ঠিক তখনই যাতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে সিবিআইয়ের হাতে বাড়তি কোনো হাতিয়ার তুলে দেওয়া না হয়, সেই কথা বোঝানোর জন্যই প্রিয়দর্শিনী হাকিম এই আবেদন করলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে অন্য রাজ্যে গিয়ে টর্চার করানো হবে বলে প্রিয়দর্শিনী হাকিম যে অভিযোগ করলেন, তা কার্যত মারাত্মক বলেই দাবি করছেন একাংশ। অনেকে বলছেন, এর আগে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস পালকে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মামলা পরিচালনা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এক্ষেত্রে নারদ কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-মন্ত্রীদের যদি অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেখানে অত্যাচার করা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

তাই তা আটকাতে রীতিমত তৎপর ঘাসফুল শিবির। ইতিমধ্যেই অন্য রাজ্যে মামলা নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু হাতিয়ার চলে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। যা প্রয়োগ করতে শুরু করে দিয়েছে তারা। তাই তার মাঝে যাতে নতুন কোনো অশান্তি করে বিষয়টিকে আরও জটিল করে দেওয়া হয়, তার জন্যই প্রিয়দর্শিনী হাকিমের শান্ত থাকার আবেদন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।