এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > কটূক্তি ও কটাক্ষের পরেও কোন ম্যাজিকে “নরমপন্থী” মুকুল? মমতার মন্তব্য নিয়েই প্রশ্ন তৃণমূলের!

কটূক্তি ও কটাক্ষের পরেও কোন ম্যাজিকে “নরমপন্থী” মুকুল? মমতার মন্তব্য নিয়েই প্রশ্ন তৃণমূলের!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –   প্রায় চার বছর বিজেপিতে ঘর করার পর গত শনিবার আবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন মুকুল রায়। তৃতীয়বার তৃণমূল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেই ভোটের আগে বিজেপিতে যাওয়া নেতা-নেত্রীরা আবার তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করতে শুরু করেন। কিন্তু প্রায় চার বছর আগে বিজেপিতে নাম লেখানো এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সাফল্য পাইয়ে দেওয়া মুকুল রায়কে গ্রহণ করতে কোনো কুন্ঠাবোধ দেখাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বরঞ্চ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বুঝিয়ে দেন, অন্যান্য নেতারা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে তার দলকে কটুক্তি করেছিলেন। কিন্তু সেদিক থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম মুকুল রায়। ভোটের আগে সেভাবে একটিও দল বিরোধী কথা শোনা যায়নি তার গলায়। তাই মুকুল রায়কে ‘নরমপন্থী’ বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দলে নরমপন্থীদের গ্রহণ করতে তার কোনো আপত্তি নেই।

আর তৃণমূল দলে যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ কথা, তাই মুকুল রায়কে নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশের আপত্তি থাকলেও, শেষ পর্যন্ত “নেত্রী যা বলছেন, তাই শিরোধার্য” বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতে শুরু করে। তবে অনেকে আবার পুরনো দিনের অনেক ভিডিও থেকে শুরু করে মুকুল রায়ের অনেক মন্তব্য পেপার কাটিংয়ের মধ্যে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে শুরু করেছেন।

যেখানে কোথাও দেখা যাচ্ছে, মুকুল রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে “অযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী” বলে দাবি করছেন, আবার কোথাও বা “ফ্যাসিস্ট সরকার” বলে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই চার বছর আগে যখন তৃণমূল থেকে বেরিয়ে বিজেপির ঘর-সংসার ভরাট করে দিয়েছিলেন মুকুল রায় এবং তৃণমূলকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল, এখন সেই মুকুল রায়কে দলে সাদরে গ্রহণ করে কি পুরোনো দিনের কথা ভুলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! এখন সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের নীচুতলার নেতাকর্মীদের মধ্যে।

অনেকে বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি 77 টি আসন শুধুমাত্র শুভেন্দু অধিকারী বা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পায়নি। এর পেছনে রয়েছে চার বছর আগে মুকুল রায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান। তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর পর তার অনেক অনুগামী আজ যারা বঙ্গ বিজেপিতে অনেক পদ অলংকৃত করেছেন, তারা তৃণমূলের সাংসদ এবং বিধায়ক থাকার পরেও সেই মুকুলবাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে পদ্মফুলের উত্তরীয় নিজেদের গলায় পরে নিয়েছিলেন। ‌ফলে চার বছর আগেকার কথা কি করে ভুলে যেতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কি করে এখন মুকুল রায়কে “নরমপন্থী” নেতা বলে অভিহিত করলেন তিনি?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতি সম্ভাবনাময় শিল্প। আর যিনি বামে থাকেন, কাল যে তিনি রামে যাবেন না, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। তবে মুকুল রায়ের মত হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ যিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, পরবর্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত। সেই মুকুলবাবু যখন 2017 সালের সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ তুলে “পিসি-ভাইপোর কোম্পানি চলছে” বলে তৃণমূল ত্যাগ করলেন, তখন তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসবেন এবং “পিসি- ভাইপোর” বশ্যতা স্বীকার করে নেবেন, সেটা অনেকের পক্ষেই বিশ্বাস করা সম্ভব হয়নি। সমালোচকরা বলছেন, মুকুল রায় তো পিসি-ভাইপোর বশ্যতা স্বীকার করেননি, তিনি তো রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছেন মাত্র।

অনেকে এটাও বলছেন, মুকুলবাবু বশ্যতা স্বীকার করেননি। বরঞ্চ পুত্রকে বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছে তাকে। আসলে গোটা পরিস্থিতি রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় শিল্প। অর্থাৎ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে শুধুমাত্র পুত্রের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্যই মুকুল রায়ের টার্গেটে পৌঁছাতে না পেরে আবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন বলেই দাবি নিন্দুকদের। কিন্তু এ তো গেল মুকুল রায়ের কথা।

তবে এত বড় সিদ্ধান্ত কেন নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন 2017 সালে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুলবাবুর দোষ-ত্রুটিকে কার্যত মাফ করে দিয়ে “মুকুল নরমপন্থী” বলে উল্লেখ করতে দেখা গেল তাকে? অনেকে এর পেছনে বড় কারণ দেখছেন। একাংশের মতে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কোন দলের বিস্তারলাভ ঘটাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! আর এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ক্ষমতায় না আসার পরে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা মুকুল রায়কে আবার দলে নিয়ে একসময় সর্বভারতীয় সংগঠন সামলানো মুকুলবাবুকে দিয়েই অভিষেকবাবুর হাত পাকাপোক্ত করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বলা প্রয়োজন, এক সময় এই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে উত্থান এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জায়গা দখল করার কারণেই কার্যত “তৃণমূলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না” বলে দাবি করেছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু এখন তৃণমূল ভবনে প্রবেশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে “আমার খুব ভাল লাগছে, আমি পুরনো ছেলেদের দেখতে পাচ্ছি” বলে মাইক্রোফোনের মধ্যে দিয়েই তা জোরে শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পেলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তৃণমূলের একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন দল করা লোকের নাম মুকুল রায়। বিগত সরকারের আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন লড়াই আন্দোলনের সাথে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই মুকুল রায় যখন 2017 সালে তৃণমূল কংগ্রেসকে জোর ধাক্কা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করলেন, তখন তিনি যে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করার পর আবার গেরুয়া শিবিরে ফিরে যাবেন না, এই নিশ্চয়তা কোথায়? সেদিক থেকে তৃণমূল ভবনে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক লহমায় কি করে ভুলে গেলেন মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদান করার পর কটুক্তি এবং আক্রমণ! এখন তা নিয়ে আড়ালে-আবডালে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীরা।

অনেকে এটাও বলছেন, ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন এখন তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা প্রতিটি বিষয় তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে আক্রমণ করছেন শান্তিগঞ্জের মেজো ছেলে। যা তৃনমূল কংগ্রেসের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ। কিন্তু মুকুল রায়কে দলে গ্রহণ করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মুকুল রায়ের বক্তব্য ভুলে যেতে পারেন। তবে মনে রাখা দরকার, 2020 সালে ডিসেম্বর মাসের 19 তারিখে গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে নিয়ে বিজেপির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুকুল রায়ের কথা ফুটে উঠেছিল শুভেন্দু অধিকারীর গলা থেকে।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুকুলদা বারবার আমাকে বলেছে, শুভেন্দু যদি মান-সম্মান নিয়ে দল করতে হয়, তাহলে আর তৃণমূল কংগ্রেসে থাকিস না। চলে আয় ভারতীয় জনতা পার্টিতে। আমরা একসাথে আত্মসম্মান নিয়ে দল করতে পারব।” সেদিক থেকে শুভেন্দু অধিকারীর যদি এই কথা সত্যি হয়, তাহলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ভোটের আগে যারা বিজেপিতে নাম লিখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের কাছে “গদ্দার” হয়েছেন, সেদিক থেকে তো সেই তালিকায় যুক্ত হবে এই মুকুল রায়েরও নাম। ফলে এই সমস্ত বিষয় এখন বারেবারে উঠে আসতে শুরু করেছে নীচুতলা থেকে শুরু করে উপরতলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!