এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া > তৃণমূলের ঘুম উড়িয়ে একের পর এক নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগের লিফলেট “দুঃখী জনসাধারণের”!

তৃণমূলের ঘুম উড়িয়ে একের পর এক নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগের লিফলেট “দুঃখী জনসাধারণের”!

ইতিমধ্যেই ভারতীয় জনতা পার্টির মন্ডল সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে লিফলেট পড়ার মতো ঘটনা নজর কেড়েছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের। বারাসাতের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ করতেও দেখা যায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। কিন্তু এই ঘটনার কয়েকদিন কাটতে না কাটতেই সেই পোস্টারে আতঙ্ক এখন রাতের ঘুম উড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও।

সম্প্রতি রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়কের নামে লিফলেট বেরিয়েছিল এলাকায়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার নিতুরিয়া ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদের নামে একাধিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ করে এলাকায় পোস্টার দেওয়া এই ঘটনার মাত্র দুই দিন আগেই রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির নামে একইরকম পোস্টার পড়তে দেখা গিয়েছিল এলাকায়। কিন্তু সেই সময় পূর্ণবাবুর তরফ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

কিন্তু এদিন ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তি ভূষণ যাদব অবশ্য লিখিতভাবে নিতুয়া থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। দলের বিরুদ্ধে সাধারণ জনমানসে বদনাম করার জন্যই বিরোধীদের তরফ থেকে এই ধরনের কাজ করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, তৃণমূলের এই অভিযোগকে বিরোধী শিবিরের তরফ থেকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। গোটা ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিরোধী নেতারা।

গোটা বিষয়ে সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ এস সিলভা মুরগান বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া, সরবড়ি মোড় এবং রঘুনাথপুর বাজারের কিছু জায়গায় বিতর্কিত লিফলেটগুলি ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেহেতু কয়েকদিন আগেই স্থানীয় বিধায়কের নামে এরকমই কিছু লিফলেট পড়েছিল। তাই ওই লিফলেটগুলোকে পুরনো লিফলেট ভেবে প্রথমে সেগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

কিন্তু পরবর্তীতে লিফলেটে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষনের নাম উল্লেখ থাকায় সকলেই আশ্চর্য্য হয়ে পড়েন। স্থানীয় সূত্রের খবর, লিফলেটে নিজের নাম আছে জানতে পেরে নিজেই পারবেলিয়া বাজারে গিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষণ বাবু। বস্তুত, রঘুনাথপুর এলাকার জনগণের নামে ওই লিফলেটগুলো ছাপানো হয়েছে। যার মধ্যে তৃণমূল সভাপতি এবং তার সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী মহেন্দ্র সাওয়ের নামও উল্লেখ রয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সেখানে লেখা হয়েছে, “শান্তিভূষণবাবু মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করেন না। কালো কাঁচ লাগানো দামি গাড়িতে আসেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে মিটিং করে নিজের ভাগ বুঝে নিয়ে বাড়ি চলে যান। সভাপতি হওয়ার পর তিনি বহু টাকা দিয়ে বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। দলের ক্ষমতা দেখিয়ে চিটফান্ডের নামে গরিব মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। লক্ষাধিক টাকায় চার থেকে পাঁচটি গাড়িতে তিনি যাতায়াত করেন।”

তাঁর সঙ্গীদের দামি দামি মালবাহী গাড়ি ও বেনামী সম্পত্তি, ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় লাইসেন্স বানিয়ে ঠিকাদারি কাজ, ইত্যাদি ভয়ানক দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ থেকে বাদ যায়নি শান্তিপুরভূষনবাবুর অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী মহেন্দ্রবাবু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি দলের তরফ থেকে যতই বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলা হোক না কেন, এই ধরনের অভিযোগ যে নেতার বিরুদ্ধে ওঠে, দলের উচিত তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা।

যদিও ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষণ বাবু বলেন, “দলীয় প্যাডে লিফলেট ছড়ানোর কথা জানিয়ে নিতুরিয়া থানায় অভিযোগ করেছি। সকালে হঠাৎ খবর আসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত একাধিক প্রচারপত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই প্রচারপত্রে আমার নামে কুৎসিত রটনা করা হয়েছে। যেখানে আমাকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ভাবে সম্মানহানি করা হয়েছে। তাই ঘটনার তদন্ত চেয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।”

এদিকে শুধু শান্তিভূষণবাবুই নয়, আত্মপক্ষ সমর্থনে তার সঙ্গী প্রচারপত্রে নাম থাকা মহেন্দ্রবাবু বলেন, “আমি কোনো ঠিকাদারের কাজ করি না। কেউ দলের ও আমাদের নামে এরুপ প্রচার ছড়াচ্ছে।” কিন্তু ব্লক তৃণমূল সভাপতি এবং তার সঙ্গী যাই বলুন না কেন, শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলার এইরকম মওকা যে বিরোধীরা ছাড়বে না, তা বলাই বাহুল্য। গোটা বিষয়ে জেলা বিজেপির সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল দলের প্রতিটি নেতা গরিব মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন।”

তাঁর আরও বক্তব্য, “জনগণ তার জবাব লোকসভা নির্বাচনেও দিয়েছে। এখন নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে একে অপরের নামে কাদা ছড়াচ্ছে।” ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নিজেদের দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় নেতার স্বপক্ষে কথা বললেও এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সমগ্র পরিস্থিতি এবং পোস্টার যন্ত্রণা শেষ পর্যন্ত কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছয়! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!