এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন করছেন, আপনারা তার পাশে থাকুন এই প্রার্থনা করি: শুভেন্দু

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন করছেন, আপনারা তার পাশে থাকুন এই প্রার্থনা করি: শুভেন্দু


পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের রাজ চললেও মেদিনীপুর লোকসভা আসন রক্ষা করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। বস্তুত, এই আসন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট ছিল। যেখানে বর্তমানে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংসদ নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। দিলীপবাবুকে হারাতে পারলে তৃণমূলের কাছে একটি বড় রাজনৈতিক জয় হত, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের মনে।

কিন্তু ঘাসফুল শিবিরের সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। আর এবার দীলিপবাবুর ছেড়ে যাওয়া খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন মেদিনীপুর পরাজয়ের কন্ঠকে খড়্গপুরের বিজয়ের মাধ্যমে তুলে ফেলতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে দীলিপবাবুর ছেড়ে যাওয়া বিধানসভা আসন নিজেদের দখলে রাখা বিজেপির কাছেও প্রেস্টিজ ফাইট। তাই দুইয়ে মিলে খড়গপুরকে কেন্দ্র করে রীতিমতো জমে উঠেছে বঙ্গ রাজনীতির রনাঙ্গণ।

বস্তুত, খড়্গপুরের দায়িত্বে পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে তৃণমূলের দাপুটে নেতা, তরুণ তুর্কি পর্যটনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঁইয়াকে মেদিনীপুর এলাকার অতিরিক্ত দায়িত্বভার দিলেও মূল দায়িত্ব থাকছে শুভেন্দুবাবুর হাতেই। তাই যেনতেন প্রকারে খড়গপুরবাসীর মন জয় করা শুভেন্দুবাবুর কাছে প্রধান লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এলাকায় একাধিক দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মসূচি সম্পন্ন করতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সম্প্রতি খড়গপুর বাসস্ট্যান্ডে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রবিবার চার-চারটি সরকারি বাসের শুভ উদ্বোধন করেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নতুন উদ্বোধন হওয়া বাসগুলি যথাক্রমে খড়গপুর থেকে কলকাতা, দিঘা, দুর্গাপুর, আসানসোল এবং পানাগর হয়ে তারাপীঠ যাত্রা করবে।

এদিন উদ্বোধনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান থেকে সবুজ পতাকা দুলিয়ে দুটি বাতানুকূল এবং দুটি ডিলাক্স বাসের উদ্বোধন করেন রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী। মহতী এই অনুষ্ঠানে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি, পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার, স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার থেকে শুরু করে অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

পরিবহন মন্ত্রী এদিনের সভা থেকে চারটি বাস উদ্বোধন করার পাশাপাশি খড়্গপুরের ইন্দা কলেজকে উন্নয়নের জন্য 45 লক্ষ টাকার ধনরাশি তুলে দেন। এছাড়াও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পরিবহন মন্ত্রী এবং উক্ত বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের জন্য পৌরসভাকে 60 লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। সব মিলিয়ে সরকারি কর্মসূচিতে ঠাসা এই অনুষ্ঠানে প্রকল্পে এলাকা উন্নয়নের কিছুই বাদ ছিল না।

আগামী শারদ উৎসবকে সামনে রেখে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে রোডম্যাপ ছাড়াও বর্ষীয়ান নাগরিকদের জন্য শ্রদ্ধা ও শিশুদের জন্য স্নেহ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘটে পরিবহনমন্ত্রীর হাত দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, খড়্গপুরের মানুষের মন জয় করতে মরিয়া শাসক শিবির এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্থানীয় ক্লাবগুলিকে চেক প্রদানের পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিক ও পথ শিশুদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করে।

ফলে একপ্রকার বোঝাই যাচ্ছে, শারদ উৎসবের আগে এই বিশাল অনুষ্ঠান খড়্গপুরের পক্ষে একদিকে যেমন প্রভূত উন্নয়নের বার্তা বহন করে এনেছে, অন্যদিকে তেমনই আগত বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এলাকার মানুষকে বার্তা দিতে চেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার খড়্গপুরের উন্নয়ন নিয়ে কতটা ইতিবাচক, তা নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেন মন্ত্রী।

এদিন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে রেলনগরী বলে পরিচিত মিনি ইন্ডিয়া খড়গপুরকে জুড়ে দিলাম। পুজোর আগে খড়্গপুরের বাসিন্দাদের এটা উপহার। 1 মাস আগে একটা অনুষ্ঠানে কলেজে এসেছিলাম। আমাকে কেউ বলেনি, আমি অধ্যক্ষকে বলেছিলাম, কলেজকে ভবন নির্মাণের জন্য টাকা দেব। অধ্যক্ষ পরিকল্পনা পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকা এদিন অধ্যক্ষ বিদ্যুৎ সামান্তের হাতে তুলে দিলাম।”

এদিন এই অনুষ্ঠানে শুভেন্দুবাবু আরও বলেন, “পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার বিদ্যুতায়নের জন্য টাকা চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম প্রকল্প পাঠাতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চৌরঙ্গী সহ শহরের প্রধান প্রধান সরকারি দপ্তরের সামনে শ্মশান, কবরস্থানে আলো লাগানোর জন্য 60 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও এর আগেই গ্রীন সিটি প্রকল্পে শহরে অনেক আলো লাগানো হয়েছে।

শুভেন্দুবাবুর কথামত, খড়গপুরকে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল তা করা যায়নি। রেল এই শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতি পদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে এনওসি নেয়। কিন্তু এখানকার বস্তিতে শৌচালয় নেই, আলো জ্বলে না। আমরা ব্যবস্থা করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কাউন্সিলর আলোর ব্যবস্থা করলে আরপিএফ দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। রেলের এই নেতিবাচক ভূমিকার জন্য খড়গপুর শহরের উন্নয়ন হচ্ছে না।

এদিন অভিযোগের সুরে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যদি এই বাড়িটা আমাদের দিত, তাহলে এখানে রাজ্যের মধ্যে সেরা মডেল বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে দেখিয়ে দিতাম।” তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন করছেন, আপনারা তার পাশে থাকুন এই প্রার্থনা করি। আগে কেউ উন্নয়ন নিয়ে ভাবেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাসজঙ্গল এলাকার এক লক্ষ বাসিন্দার হাতে জমির মালিকানা তুলে দিয়েছেন।”

খড়্গপুরের উন্নয়নে কল্পতরু পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এদিন আরও বলেন, “পৌরসভার চেয়ারম্যান একটা ট্রমা অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছে। আমরা পরিবহন দপ্তর থেকে দশটা অ্যাম্বুলেন্স আনছি। তার থেকে একটি পৌরসভাকে দেওয়া হবে। তিনি এও বলেন, পুলিশ এখানে পুজোর সময় খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। যারা বয়স্ক, তাদের জন্য পথ শিশুদের ঠাকুর দেখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করছে। ছোটদের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গোটা জেলার পুজোগুলির জন্য গাইড ম্যাপ তৈরি করেছে প্রশাসন। আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “সকলকে আনন্দের সঙ্গে ভালোভাবে শারোদৎসব কাটানোর আহ্বান জানাই।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারীর সভাকে কেন্দ্র করে এদিন খড়গপুর বাসস্ট্যান্ডে উৎসাহ চোখে পড়ার মত ছিল। সভামঞ্চে শুভেন্দুবাবু বক্তব্য রাখার সময় যখন একের পর এক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করছিলেন, তখন মুহুমুহু হাততালিতে কেঁপে উঠছিল এলাকা। জনপ্রিয়তার নিরিখে মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দুবাবুর নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই বিশ্লেষকদের মনে।

তবে এদিন প্রবল বৃষ্টিকে অপেক্ষা করে যেভাবে সাধারণ মানুষ তার সভাতে সম্মিলিত হয়েছেন, তাতে তিনি যে কাজ করতে এসেছিলেন, তাতে যে অনেকটাই সফলতার দিকে এগিয়ে গেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দীলিপবাবুর খাসতালুকে শুভেন্দুবাবু ঘাসফুল ফোটাতে পারেন কিনা! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!