এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > মেদিনীপুরে অধিকারহীন অধিকারী পরিবার! জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে!

মেদিনীপুরে অধিকারহীন অধিকারী পরিবার! জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একই পরিবারভুক্ত অথবা ভিন্ন দলের পথ অবলম্বী নিদর্শন কম নেই। কখনও তথাগত রায় বা সৌগত রায়ের মত নিদর্শন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কখনও আবার বহু পরিবার এরকম রয়েছে যাদের একজন বামপন্থী, অন্যজন দক্ষিণপন্থী। ভারতীয় জনতা পার্টিতে মুকুল রায় যখন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই সময় তার ছেলে শুভ্রাংশু রায় তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন। এই রকম জেলায় জেলায় উদাহরণ শেষ নেই। তবে অধিকারীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

অধিকারী পরিবার বলতে এক নিশ্বাসেই বোঝা যায় মেদিনীপুর জেলার শেষ কথা। আর হবে নাই বা কেন, শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে তো নয়, কংগ্রেসী রাজনীতিবিদদের সময় থেকেই মেদিনীপুর জেলায় যে তাদের একটা দাপট ছিল, এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে অধিকারী পরিবারের একটা ভূমিকা ছিল সেই কথায় এক বাক্যে স্বীকার করে নেয় ছোট থেকে মেজো থেকে বড় সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই। সেজন্যই তো পরবর্তীকালে নিজেদের রাজনৈতিক বিস্তারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকেও শরণাপন্ন হতে হয়েছিল অধিকারী পরিবারের।

সম্প্রতি দলের ওপর একরাশ অভিযোগ করে এবং দলে যোগ্যতম মর্যাদা পাচ্ছেন না, এই গুরুতর অভিযোগ এনে তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক সময়কার যুব সভাপতি রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। আর তার তৃনমূল কংগ্রেস ত্যাগ করাটা যে একটা বিশাল বড় ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের ওপর, সেকথা মেনে নিচ্ছেন সকলেই। কেননা সেই শুভেন্দু অধিকারীর মানভঞ্জনের কম চেষ্টা করা হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।

কখনও সৌগত রায়ের মত বর্ষীয়ান নেতাকে দিয়ে তার মান ভঙ্গ করার চেষ্টা হয়েছে, আবার এক সময় তার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান নীতিনির্ধারক প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো ফল হয়নি। গত বছরের 19 ডিসেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে সম্পূর্ণ মায়া মমতা ত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন এই কিংবদন্তী নেতা। আর তারপরেই উঠতে শুরু করে প্রশ্ন।

কেননা শুভেন্দুবাবুর বিজেপিতে চলে গেলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ এবং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিন্তু তারই পিতা শিশির অধিকারী। তাই ছেলের বিরুদ্ধে দল সাজাতে তিনি কতটা সক্ষম হবেন, তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে।অনেকে বলছেন, এটা হতেই পারত। বাবা-ছেলে দুইজনে ভিন্ন রাজনৈতিক পথ অবলম্বন করে এগোতেই পারেন। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে তৃনমূল কংগ্রেস হয়ত ততটা বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি শিশির অধিকারীকে। আর ছেলের বিরুদ্ধে ততটা বেশি মুখ খুলতেও দেখা যায়নি শিশির অধিকারীকে।

মূলত একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেসের অনুষ্ঠান উপেক্ষা করে গিয়েছেন শিশিরবাবু। যদিও বা তার পেছনে কারণ দেখানো হয়েছে তার শারীরিক অসক্ষমতা। আর এবার সেই শারীরিক অসক্ষমতাকে হাতিয়ার করে দীঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি থেকে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে বর্ষীয়ান এই তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে। কথায় বলে, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। এই নিদর্শন বাংলার রাজনীতিতে তথা ভারতবর্ষের রাজনীতিতে কম নেই।

প্রসঙ্গত, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত অশোক ঘোষ ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। শুধু তাই নয়, অতুল্য ঘোষ থেকে শুরু করে করুণানিধি, জয়ললিতা থেকে শুরু করে মুলায়ম সিং যাদব, এমন অনেক নিদর্শন রয়েছে যারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক পদ ধরেছিলেন। মূলত তারা কাজ করতে না পারলেও তাদের নামেই পরিচালিত হত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ অতীতের তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে পাথেয় করেই এড়িয়ে চলত তাদের দল।

কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে সেদিক থেকে কিছুটা সুরভঙ্গ হতে চলেছে। কারন একের পর এক বর্ষিয়ান নেতাকে বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পদ বা সভাপতির মত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিশিরবাবুও তার ব্যতিক্রম নয়। চোখের অপারেশন থেকে শুরু করে শরীর খারাপ, পায়ে চোট পাওয়া থেকে শুরু করে একাধিক শারীরিক অসুবিধা তার রয়েছে। আর এইরকম একটা সন্ধিক্ষণে যখন শুভেন্দুবাবু চলে গিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে, সেই সময়ে শিশিরবাবুর এই সমস্ত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের অধিকারী পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া করতে চাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

কিন্তু তাতে কি খুব একটা উপকার হবে! বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যদি শিশিরবাবুকে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল করার চেষ্টা না করে, বরঞ্চ তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুদায়িত্ব তার ওপর দিয়ে দেওয়া হত, তাহলেই বোধহয় শিশিরবাবু ছেলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে সোচ্চার হতে বাধ্য হতেন। কিন্তু সেই পথে হাঁটেনি তৃণমূল কংগ্রেস। একের পর এক প্রশাসনিক পদ এবং দলীয় পদ থেকে তাকে সরিয়ে ধীরে ধীরে অধিকারী পরিবারকে ছাড়াই পূর্ব মেদিনীপুরের নিজেদের রাজনৈতিক সক্ষমতাকে বিস্তার করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

বলা বাহুল্য, যেদিন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছে শুভেন্দু অধিকারীর, প্রায় সেদিন থেকেই কখনও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবার কখনও ফিরহাদ হাকিম, কখনও আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কুনাল ঘোষের মতো নেতৃত্বরা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। শুধু শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মুখ খোলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও হয়ত রাজনৈতিক তৎপরতার পারদ ততটা ঊর্ধ্বে উঠত না।

কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি সমগ্র অধিকারী পরিবারকে নিয়ে এবং তাদের বিভিন্ন পদে আসীন হওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরেই আক্রমণ করতে দেখা গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতাকে। সেই আক্রমণ কিছু কিছু সময় কুরুচিকর মন্তব্যে পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে রীতিমত সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছেন সেই সমস্ত নেতারা। কেউ কেউ বলছেন, কুণাল ঘোষের মতো নেতা যারা সরাসরিভাবে মাঠে-ময়দানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তারা এভাবে অধিকারী পরিবারকে আক্রমণ করবেন কেন!

অন্যদিকে কল্যানবাবুও কিন্তু দলে ততটা পাত্তা আগে পাননি, যতটা পাত্তা বর্তমানে তিনি পাচ্ছেন। এরা প্রত্যেকেই শুভেন্দু অধিকারীকে অজুহাত করে অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে চলেছেন বলে দাবি একাংশের। যাকে হয়ত বা ভাল চোখে নিচ্ছে না পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর একের পর এক দলীয় এবং প্রশাসনিক পদ থেকে যখন শিশির অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন ব্যথিত শিশির অধিকারী বলেন, “আমি 1999 সালের শুভেন্দুর কথামতই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে কংগ্রেসে যোগদান করেছিলাম। এই জেলায় রাজনৈতিকভাবে আমাদের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। পরিবারের বিরুদ্ধে কটু কথা বললে আমরা কিন্তু বরদাস্ত করে নেব না। যাদের কোনো যোগ্যতা নেই, তারা আমাদের নামে নানা রকম কথা বলছে। সময় মতই সব কিছুর জবাব দেব।”

আর শিশিরবাবুর এই ইঙ্গিতেই কার্যত স্পষ্ট যে, এবার সমগ্র অধিকারী পরিবারেই পদ্মফুল ফুটতে শুরু হয়ে যাবে। আর সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তা যদি হয় তাহলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তার রাজনৈতিক প্রভাব কতটা পড়তে পারে, তাই নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। কারণ সিঙ্গুর থেকে শুরু করে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়, এমনকি কংগ্রেসের সময় কিংবা এমার্জেন্সির সময়, বামেদের বিরোধিতার সময় অধিকারী পরিবার কিন্তু মেদিনীপুর জেলায় নিজেদের দাপট অব্যাহত রেখেছিল।

নির্বাচনে সেই দাপট কতটা ফলপ্রসূ হয়েছিল, সেটা পরের কথা। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এবং কংগ্রেসী রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অধিকারী পরিবারকে যে যথেষ্ট পরিমাণে দরকার হয়েছিল দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলের, সেই বিষয় অস্বীকার করতে পারেন না কেউ। তাই আগামীদিনে অধিকারীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কতটা সুবিধা করে উঠতে পারবে মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে, সেদিকেই নজর থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!