এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > কৃতিত্ত্ব নিতে গিয়ে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বঙ্গ বিজেপির ‘হাঁড়ির হাল’ করলেন স্বয়ং মোদী

কৃতিত্ত্ব নিতে গিয়ে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বঙ্গ বিজেপির ‘হাঁড়ির হাল’ করলেন স্বয়ং মোদী

লোকসভায় মোদি বললেন পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি চাকরি হয়েছে । যদিও সংখ্যাটা ১ কোটি নয়, রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ৮১ লক্ষ । যাই হোক ।
এখন প্রশ্ন, মোদি কেনো বললেন একথা ? উত্তর, নিজেকে বাঁচাতে । বিরোধীরা যখন লোকসভায় দেশে চাকরি নেই কেনো প্রশ্ন তুলছেন, তখনই বাংলার উদাহরণ দিয়ে বিরোধীদের চুপ করানোর কৌশল অবলম্বন করেন মোদি এবং এই ৮১ লক্ষ চাকরিকে কেন্দ্র রাজ্য যৌথ সাফল্য বলে দাবি করার চেষ্টা করলেন ।
মোদি একথা বলে ফেলার পর স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছসিত তৃণমূল । তাদের ধারণা বিজেপির এক বড় অস্ত্র এ রাজ্যে ভোঁতা হল ! কিন্তু মোদি একথা স্বীকার করার পরেই অন্য খেলা খেলতে পারে তৃণমূল । ২০১১ থেকে ২০১৮ অবধি যদি রাজ্য সরকারের চাকরির তথ্য দেখেন, তা ২০১১–১২ বাদ দিয়ে মোটামুটি ১৩ থেকে সমান ভাগে বিভক্ত । অর্থাৎ চাকরি ক্ষেত্রে বাংলার ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ শুরু হয় ২০১৩ থেকে । সে সময় কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় ছিলেন না ! তখন শেষ পর্বের কংগ্রেস জমানা । এখন তৃণমূল প্রশ্ন তুলতেই পারে, যে রাজ্যে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আগে থেকেই প্রায় একই হারে চাকরি বাড়ছে, সেই রাজ্যের কেন্দ্রে বিজেপি আসার পরেও যদি একই হার বজায় থাকে তাতে মোদীর কেন্দ্রের কৃতিত্ব কোথায় ? যদি এতে মোদি সরকারের কৃতিত্ব থাকতই তবে রাজ্যে চাকরির ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতি মোদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার এক, দেড় বছর আগে থেকে লক্ষ করা যেত কি ?
দ্বিতীয় প্রশ্ন তৃণমূল তুলতে পারে কেন্দ্রের রাজনীতি নিয়ে । এই বছর (২০১৮) তে হয়ে যাওয়া বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে কেন্দ্র কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি । রাজ্যে বিজেপির উপর তৃণমূলের “হামলা”র পর দিলীপ ঘোষ চিঠি লিখে অমিত শাহের কাছে আবেদন করেন বাংলার সরকারকে যেনো সহযোগিতা না করা হয় এবং অদ্ভুত ভাবে একটি রাজনৈতিক অনুরোধে রেসপন্স করে বসে কেন্দ্রীয় সরকার ! প্রথমে অরুণ জেটলি, তারপর নিতিন গড়করি, বয়কট করেন রাজ্যের বিজনেস সামিটকে। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন আচরণ আখেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বিমাতৃশুলভ” আচরণের অভিযোগকেই স্বীকৃতি দেয় না কী?
এ ছাড়াও মাত্র ২৬ লোকসভা বিশিষ্ট গুজরাটে বহু বন্দর থাকলেও ৪২ লোকসভা বিশিষ্ট বড় রাজ্য বাংলায় তা মাত্র দুটি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আরো দুটির জন্য আবেদন করেও তা পাননি, এ অভিযোগ তার দীর্ঘদিনের । এ ক্ষেত্রেও কি শিল্প ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অসহযোগিতার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় না ?
এখন ঘটনা পরম্পরা দেখিয়ে তৃণমুল প্রশ্ন তুলতেই পারে, মোদি সরকার বাংলার ৮১ লক্ষ চাকরির উপর নিজেদের কৃতিত্ব কোন অধিকারে দাবি করেন ? কোন বিশেষ সহযোগিতা বাংলা কেন্দ্রের থেকে পেয়েছে ?
বিজেপির কাউকে কাউকে আড়ালে বলতে শোনা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সাথে বিরোধ করে আখেরে রাজ্যেরই ক্ষতি করছেন, অসহযোগিতা যেচে আহ্বান করছেন । বিজেপির সেই নেতাদের উদ্দ্যেশ্যে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে চাই, আপনাদের সর্বপ্রাচীন জোটসঙ্গী আজ বিজেপির বিরুদ্ধে খড়গহস্ত কেনো ? মোদির সঙ্গে অতিসুসম্পর্কের জন্য খ্যাত তেলেঙ্গানার বর্তমান শাসক দল চন্দ্র বাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি আজ কেনো বিজেপির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করেছে ? যদি সুসম্পর্কই সহযোগিতা এনে দিত, তবে চন্দ্র বাবুর চাইতে সুখী মুখ্যমন্ত্রী এ দেশে পাওয়া মুশকিল ছিল ! অর্থাৎ, সহগোগিতার প্রশ্নে সুসম্পর্ক কোনো উত্তর হতে পারে না । যারা এই উত্তর দেন তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরেই কুঠারাঘাত করেন আখেরে । কারণ আমাদের সংবিধানে কোথাও বলা নেই প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে সহযোগিতার মাপকাঠি হতে হবে !
তাই নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও, বাংলায় ৮১ লক্ষ চাকরির কথা স্বীকার করে মোদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবিধাই করে দিয়েছেন, কিন্তু নিজে প্যাঁচে পড়েছেন আরো বেশি করে । আম, ছালা দুটোই গেলো না তো বিজেপির ?
দেবাংশু ভট্টাচার্য্য
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!