প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন তিনি। সিঙ্গুর থেকে শুরু করে নন্দীগ্রাম, সেই সমস্ত আন্দোলন এবং তৎকালীন বাম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব সময়কার সঙ্গী থাকতে দেখা গিয়েছিল তাকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মুকুল রায় এখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি।

প্রায় চার বছর আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তিনি তৃণমূলে থাকার সময় পাপ করেছেন। তাই বিজেপিতে এসে প্রায়শ্চিত্ত করছেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। আর এবার সিঙ্গুর আন্দোলন তার রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গেল বঙ্গ বিজেপির চাণক্যকে। যার ফলে এখন ব্যাপক শোরগোল তৈরি হয়েছে গোটা বাংলা জুড়ে।

বস্তুত, সম্প্রতি সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন কৃষিজমি পড়ে থাকায় বিরোধীরা গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিল। কিন্তু এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে না খুলতেই প্রতিক্রিয়া দেখা যায় মুকুল রায়কে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলেন, “আমি তিন বছর আগেই বলেছিলাম সিঙ্গুর আন্দোলন আমার রাজনৈতিক জীবনের বড় ভুল। তখন যদি টাকাকে তৃণমূল না তাড়াত, তাহলে বাংলা নির্জলা থাকত না। বেকার যুবক যুবতীর চাকরি পেতে কোনো সমস্যা হত না। মানুষ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি বোঝে না। ইন্ডাস্ট্রি শব্দটা জুড়ে দিলে মানুষকে বিভ্রান্তি করাটা সহজ নয়। আগামী দিনে বাংলায় নতুন সরকার আসছে। সেই সরকারই ঠিক করবে, ওই জমিতে কি হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুকুল রায় এই মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই চাপে ফেলে দিতে চাইলেন। তবে একসময় এই সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ছিলেন মুকুল রায়। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বিলম্বিত বোধোদয় নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। তাহলে কি এখন বিরোধী দলে যোগ দিয়েছেন বলে এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে রাখতেই এই ধরনের মন্তব্য করলেন!

এদিন এই প্রসঙ্গে এই বিজেপি নেতা বলেন, “শেষে চৈতন্য হয়। চৈতন্য সঠিক সময় হয় না। এতদিনে উনি বুঝতে পেরেছেন যে, ওই জমিতে চাষ হবে না।” স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে থাকা মুকুল রায় এখন মুখ খোলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে রীতিমত অস্বস্তিতে পড়ে গেল ঘাসফুল শিবির বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটা মুকুল রায়ের রাজনৈতিক নয়া কৌশল। বিজেপি এখন চেষ্টা করছে, প্রতিটি ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেওয়ার। সেই মত করে সিঙ্গুর আন্দোলনের পর তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখল করলেও, সিঙ্গুরের জমি নিয়ে বহুদিন ধরেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করে আসছিল বিরোধীরা। আর এবার সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতে না করতেই তার কড়া জবাব দিলেন মুকুল রায়।

যেখানে নিজের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, সিঙ্গুর আন্দোলন বড় ভুল ছিল। অর্থাৎ তিনি যেমন এক্ষেত্রে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলেন, ঠিক তেমনই এই ভুল স্বীকারের মধ্যে দিয়ে সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে ফেললেন তার প্রাক্তন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই চাপে রাখবে বলে দাবি পর্যবেক্ষকদের। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।