এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > অবশেষে মুকুলকে বিজেপির সর্বভারতীয় পদ? এবার কি দ্রুত বদলে যেতে চলেছে বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণ?

অবশেষে মুকুলকে বিজেপির সর্বভারতীয় পদ? এবার কি দ্রুত বদলে যেতে চলেছে বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণ?


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সমস্ত গুরুদায়িত্ব তার কাধেই ছিল। যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো হলেও, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার দিন থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলে আসছিলেন মুকুল রায়। 2015 সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তারপর দলের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি হতে শুরু করে মুকুল রায়ের। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি।

এরপর হঠাৎ করেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সেরকম ভাবে কোনো পদও পাননি মুকুল রায়। চুপচাপ নীরবে তিন বছর বিজেপিতে থেকে একের পর এক সাফল্য, দলকে পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। বারবার গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল, মুকুল রায় এবার হয়ত বড়সড় কোনো দায়িত্ব পাচ্ছেন। কিন্তু তারপর সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে। অবশেষে বিজেপিতে গুরুদায়িত্ব পেলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।

সূত্রের খবর, শনিবার বিজেপির সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সাংগঠনিক রদবদলে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বঙ্গ বিজেপির চাণক্য। স্বাভাবিকভাবেই মুকুল রায়ের বিজেপিতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার ব্যাপারটিকে কার্যত গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। একাংশ বলছেন, তৃনমূল কংগ্রেস আঞ্চলিক দল হিসেবে পরিচিত ছিল। যার ফলে মুকুল রায় সেই দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদে থাকলেও, সেই অর্থে তা সর্ব-ভারতীয় দায়িত্ব ছিল না, একান্তভাবেই আঞ্চলিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু বিজেপি যেখানে ভারতবর্ষের মধ্যে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত, সেখানে সেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে মুকুল রায়ের গুরুত্ব যে অনেকটাই বাড়তে চলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনেকে বলছেন, মুকুল রায়ের সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই সহ-সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া বঙ্গ রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিতে পারে। কেননা এতদিন অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন – মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করার পর অর্জুন সিং থেকে শুরু করে সৌমিত্র খাঁ অনুপম হাজরা থেকে শুরু করে নিশীথ প্রামাণিকের মতো নেতারা তার হাত ধরে বিজেপিতে গেলেও সেই ভাবে তৃণমূলের আর কোনো নেতাকে তিনি বিজেপিতে যোগদান করাতে পারেননি। কেননা অনেকেই নাকি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন, যে মুকুল রায় বিজেপিতে গিয়ে নিজেই যদি পদ করতে না পারেন, তাহলে কি করে তাঁর ভরসায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠিত নেতারা বিজেপিতে যাবেন?

স্বাভাবিকভাবেই এতদিন মুকুল রায় এবং তার অনুগামীদের এই প্রশ্ন হজম করতে হয়েছিল। কিন্তু এবার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে তৃণমূলকে ভাঙ্গানোর জন্য আবার উঠে পড়ে লাগবেন মুকুল রায় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একাংশের মতে, এই ঘটনায় বার্তা পরিষ্কার! বিজেপিতে যোগদান করেই কেউ পদ পাবেন না! উল্টে তাঁকে কঠোর অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে পথ চলতে হয়। সেদিক থেকে মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে একসময় সেকেন্ড-ইন-কমান্ড থাকলেও, বিজেপিতে এসে তাকে একের পর এক পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

লোকসভা নির্বাচনে দলকে সাফল্য পাওয়ানো থেকে শুরু করে একের পর এক নেতাকর্মীদের নিজেদের দিকে আনা, বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে বিজেপিকে সাফল্য পাইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মুকুল রায়। তার পর অবশেষে তাকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চন্দ্র বসুর মত ব্যক্তিত্বকে বিজেপি কোথাও কোনো জায়গা দেয়নি। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে গত 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাকে দাঁড় করিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি।

কিন্তু সেখানে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। পরবর্তীতে লোকসভা নির্বাচনে তাকে দাঁড় করিয়েও মুখ রক্ষা হয়নি ভারতীয় জনতা পার্টির। একইভাবে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার ক্ষেত্রেও সেই জিনিস দেখা গেছে। তাকে কেন্দ্রীয় সম্পাদক করা হলেও, প্রতিবার নির্বাচনের করানোর পরেও পরাজিত হয়েছেন রাহুলবাবু। যার ফলে এবার সেই রাহুল সিনহাকেও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়েছে পদ্ম শিবির। আর এই ঘটনার পর বিজেপির একটি অংশ দাবি করছে, কেউ দলের আপন নয়।

যারা দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন, তারা যদি ধৈর্য ধরে দলের সাথে থাকেন, তাহলে বিজেপি অবশ্যই তাদেরকে গুরুত্ব দেবে। আর তার অন্যতম নিদর্শন মুকুল রায়। তিনি ধৈর্য ধরে দলকে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছেন, দলের জন্য কাজ করেছেন। তাই এমন ব্যক্তিত্বকে বিজেপি কাজে লাগিয়েছে। তাই যারা দলে আসবেন, তারা যদি গ্রহণযোগ্য হয়ে দেখাতে পারেন এবং দলের হয়ে কাজ করতে পারেন, তাহলে তাদের অবশ্যই কাজে লাগাবে পদ্ম শিবির বলে দাবি বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের।

কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মুকুল রায় তো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন! এবার তিনি কি আবার খেলা ঘোরাতে শুরু করবেন? মুকুল রায়ের এই পদ পাওয়ার পর তার কি প্রভাব পড়বে বঙ্গ রাজনীতিতে? অনেকে বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়ার পর মুকুল রায়কে চাটনিবাবু থেকে শুরু করে মীরজাফর অনেক কিছুই বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্ত কিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিয়ে ধাপে ধাপে তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙ্গা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুকুল রায়। যার হাতেনাতে প্রমাণ দিয়ে একের পর এক হেভিওয়েট নেতা, বিধায়ক, সাংসদদের পদ্ম শিবিরে যোগদান করিয়েছেন তিনি।

তবে শুধু তৃণমূল কংগ্রেসে যে তার প্রভাব রয়েছে, তা নয়। সিপিএমের খগেন মুর্মু থেকে শুরু করে প্রয়াত নেতা দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মত নেতাদের বিজেপি আনতে সক্ষম হয়েছিলেন মুকুল রায়। ফলে সব রাজনৈতিক দলের কাছেই যে তার একটা বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির চাণক্য। কিন্তু এত কিছু করার পরেও বিজেপি তাকে কোনরূপ জায়গা না দেওয়ায় সেভাবে এই দলবদলের খেলা খেলতে দেখা যাচ্ছিল না মুকুল রায়কে।

কিন্তু এবার যখন তাকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিল, তখন সেই মুকুল রায় 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল সহ বঙ্গের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেবেন বলেই দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে এখন মুকুল রায়ের পদপ্রাপ্তির পর তার রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি কি হয়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। আর তার জেরে একুশের মহাযুদ্ধের আগে বঙ্গ রাজনীতির সমীকরণ ঠিক কোন দিকে মোড় নেয় নজর থাকবে সেদিকেও।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!