এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > পুরোনো কর্মীদের আক্ষেপে প্রশ্নের মুখে “বাংলার গর্ব মমতা”

পুরোনো কর্মীদের আক্ষেপে প্রশ্নের মুখে “বাংলার গর্ব মমতা”


লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে একাধিকবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গেছে, দুর্দিনের প্রকৃত দল করা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। একটি সভায় মমতাদেবীও বলেছিলেন, “আমি সাধারণত ইনস্ট্রাকশন দিই না। তবে যদি এটাকে আমার ইনস্ট্রাকশন মনে করেন, তাহলে আমি ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি। সব ইগো ভুলে পুরাতন কর্মীদের ডেকে নিয়ে আসুন। আর যদি আপনারা না ডেকে নিয়ে আসেন তাহলে আমি নিজে তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসব।” তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে।

ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে লোকসভা নির্বাচন। যে লোকসভা নির্বাচনে 42 এ 42 এর টার্গেট তো দূর অস্ত, নিজেদের বহু জিতে থাকা গড় রক্ষা করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। কার্যত সেই কারণেই ভারতবর্ষের প্রখ্যাত নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। প্রশান্ত কিশোর অবশ্য দায়িত্বে আসার পরে প্রথমে দিদিকে বলো কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে মেগা শোয়ের মাধ্যমে “বাংলার গর্ব মমতা” কর্মসূচির সূচনা করেছেন। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত এই কর্মসূচীর মধ্যে একটি অনুষ্ঠান ছিল‌, দলের পুরাতন কর্মীদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করা।

আর এই অনুষ্ঠান পার হতে না হতেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে ক্রমাগত বয়ে চলেছে সমালোচনার ঝড়। কার্যত পুরাতন 1998 সালের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বিগত দিনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও যেমন গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে অথবা জেলা নেতাদের ইগোর কারণে বাদ পড়তে হয়েছিল দলের ভিত্তিপ্রস্তর রাখা কর্মীদেরকে, বাংলার গর্ব মমতা কর্মসূচির অন্তর্গত স্বীকৃতি সম্মেলনেও সেই একইভাবে বড় নেতাদের ইগোর শিকার হলেন পুরাতন দিনের তৃণমূলের যোদ্ধারা।

বস্তুত, গত রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ছটি বিধানসভা কেন্দ্রেই পুরাতন কর্মীদের স্বীকৃতি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তরফে। কিন্তু অভিযোগ, এই কর্মসূচিতে পুরাতন কর্মীদেরকে বাদ রেখে বেছে বেছে নিজেদের মনঃপুত কর্মীদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। তৃণমূল মহলে গুঞ্জন, এতে করে একদিকে যেমন জোরালো অপমানিত হতে হচ্ছে দীর্ঘদিনের দল করা নেতাদেরকে, অন্যদিকে তেমন এই কর্মসূচি নিজের উদ্দেশ্য থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূলের ইতিহাসে চোখ ফেরালেই কয়েকটা নাম উঠে আসে। এই জেলায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল স্বর্গীয় ননীগোপাল রায়ের হাত ধরে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বারংবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও “আমার প্রিয় ননীদা” শব্দটি উঠে এসেছে। সেই ননীগোপাল রায়ের সময়ে যারা তৃণমূলের পতাকা কাঁধে নিয়ে দুর্ধর্ষ বাম জমানায় “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ” ধ্বনি তোলার সাহস দেখিয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেক নেতাকর্মীরাই পেলেন না স্বীকৃতি। তালিকায় রয়েছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রথম জেলা সভাপতি সুবোধ দাস থেকে শুরু করে 1998 সালের অন্যতম লড়াকু নেতা কল্যাণ কুন্ডুর নাম। এমনকি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেই বাদ থেকে গেলেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি দেবাশীষ মজুমদার।

এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে পুরাতন নেতাকর্মীদের স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি, দেবাশিসবাবু থেকে শুরু করে সুবোধ দাস, কল্যাণ কুন্ডু, সুভাষ চাকী প্রমূখ নেতৃত্বদের। এই বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রথম সভাপতি সুবোধ দাস বলেন, “সারা পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রেও যে পুরনো কর্মীদের স্বীকৃতি সম্মেলন হয়ে গেল, তা অত্যন্ত সদর্থক। কিন্তু বোধহয় কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে অনেক পুরাতন কর্মীরা, যারা দুর্দিনে দলটা করেছিল, তারা বাদ পড়ে গেছেন। সেজন্য অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে এবং সর্বোপরি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছে অনুরোধ করব, আগামী দিনে যেন ব্যাপক স্তরে সকলকে নিয়ে এরকম অনুষ্ঠান পালিত হয়।”

একইভাবে আক্ষেপের সুর শোনা যায় কল্যাণ কুন্ডুর কন্ঠেও। একদা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক কল্যাণবাবু বলেন, “আমি কোনো অনুষ্ঠানে ডাক পাইনি। আর এখন কোনো দলীয় কর্মসূচিতে আমাকে ডাকা হয় না।” তবে অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দাবি, সমগ্র তালিকাটি রাজ্য থেকে পাঠানো হয়েছে। কাজেই জেলাস্তরে অথবা বিধানসভা স্তরে এই বিষয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের উপদেষ্টা শংকর চক্রবর্তী বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত কর্মীদের ফোন করেছিলাম। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় 350 জন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। তালিকা আমরা তৈরি করিনি। রাজ্য থেকে পাঠানো হয়েছে।”

একই দৃশ্য চোখে পড়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন বিধানসভা কেন্দ্রেও। সেখানেও পুরাতন কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ডাক না পেয়ে আমরা অপমানিত বোধ করছি। তবে এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তপন বিধানসভার বিধায়ক বাচ্চু হাসদা বলেন, “কোনো কারণে মনঃক্ষুন্ন হয়ে যারা দল থেকে দূরে সরে রয়েছেন, তাদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসাই মূল উদ্দেশ্য। পুরো তালিকা রাজ্য থেকে এসেছে।”

সব কিছু মিলিয়ে বালুরঘাট থেকে শুরু করে তপন, প্রথম দিন থেকে দলের পতাকা বহন করা কর্মীরা যেভাবে নিজেদের বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ জানাচ্ছেন, তাতে করে এই ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নেতাদের কপালে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় 35 বছরের বাম আমলে একদিকে যেমন বামফ্রন্টের শরীর দল আরএসপির অগ্নিচক্ষু ছিল, অন্যদিকে তেমন ছিল সিপিআইএমের শাসানি। এসব কিছুকে উপেক্ষা করে তৎকালীন ছাত্রনেতা সুবোধ দাস থেকে শুরু করে, হিলির কল্যান কুন্ডু, দেবাশিস মজুমদার, সুভাষ চাকী, ইত্যাদি নেতারা যেভাবে তৃণমূলের পতাকাকে শক্তিশালী করার কাজ করেছিলেন, তৃণমূলের স্বীকৃতি সম্মেলন অনুষ্ঠানের যদি সেই নেতারাই ডাক না পান, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, অনুষ্ঠানের সফলতাকে কেন্দ্র করে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!