এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – অন্তিম পর্ব, কলমে – অপরাজিতা

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – অন্তিম পর্ব, কলমে – অপরাজিতা


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া  –বাধ্য হয়ে গাড়ি দাঁড় করলো ঈশান।

তার মনে তুমি চেনো অপূর্বকে? অপূর্বর ব্যাপারে সব জানতে।

ঈশান – চিনতাম বাট সেভাবে না , আর আমি ওর হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি নিয়ে বসে নেই। তেমন ভাবে চিনতাম না ,সিরিয়াসলি

চন্দ্রেয়ী – আবার,

ঈশান – আরে সত্যি বলছি,

চন্দ্রেয়ী – তুমি তো আই আই টি তে পড়তে

ঈশান – তো, সেখানে কত কত ছেলে পরে, সবাইকে জানা সম্ভব।

চন্দ্রেয়ী -তাহলে?

ঈশান – ওকে চিনতাম কারণ আছে , কলেজ পড়ার সময় আমাদের পরের ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে ওর এফেয়ার ছিল, মেয়েটা সিরিয়াস ছিল বাট ও কিছুদিন পর তাকে এভোয়েড করতে থাকে আর অন্য একজনের সাথে জড়ায়। মেয়েটা নিতে পারেনি সুইসাইড করতে গিয়েছিলো, বেগতিক দেখে ও বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েটাকে রাজি করায় সে আর ওর নাম নেয়নি , তারপর ওর বাড়ির লোক এসে ওকে নিয়ে চলে যায়, আর কোনোদিন আসেনি, বেঁচে আসছে কিনা জানিনা। বা কিরছে , কেমন আছে ,কোথায় কি জানি না, সেই থেকেই অপূর্বকে চিনি।

তুমি বিয়ে করতে চাও না শুনে আমি ডিটেলস চেয়েছিলাম। বিয়ে করতে চাইলেও ডিটেলস নিতাম বিয়ে আমি ভাঙতামই। সংযুক্তা তোমার থেকে নিয়ে আমাকে পিকচার দেয়, পিক দেখে বুঝতে পারি কে ওই মহাপুরুষ। তারপর আমি আমার সব বন্ধুদের সাথে খোঁজ লাগাতে থাকি। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটা সব জায়গা থেকে ইনফো নিয়ে সব ডিটেলস বের করে ফেলি। আমার ফ্রেন্ড, তার ফ্রেন্ড, তার দাদা, তার ফ্রেন্ড, এই যুগে কাউকে খুঁজে পাওয়া কি এতটা অসুবিধের? যাই হোক কিছুদিনের মধ্যেই খোঁজ মেলে, ঝাঁপিয়ে পড়লাম বিয়ে ভাঙতে। জানা গেলো ও আরো দুজনের সাথে থাকতো তারা কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। দেন শার্মিলা রাজি হয়।শর্মিলার রাগ ছিল কেননা শর্মিলাকে ও ইন্সাল্ট করেছিল অনেকের সামনে সো।

চন্দ্রেয়ী – বাচ্চাটা ?

ঈশান – শর্মিলার দাদার।

চন্দ্রেয়ী -তার মানে বিয়ে সত্যিই হচ্ছে না।  মনে আর একটা প্রশ্ন এসে হাজির। ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললো – তাহলে আমি পালাচ্ছি কেন? আমার পালানোর দরকার ছিল না।

তুমি কেন বলোনি সংযুক্তাকে।

ঈশান – সংযুক্তা জানে তোমাকে বলতে মানা করেছিলাম ,

চন্দ্রেয়ী – কেন?

ঈশান – বিয়ে ভেঙে গেছে শুধু শুধু বাড়িতে থেকে কি করতে?

চন্দ্রেয়ী – আর ইউ সিরিয়াস? আমি যদি বাড়িতে থাকতাম কেউ কিছু বলতো না। বিয়ে ভাঙলেও আমাকে ফের অনেককিছু ফেস করতে হবে, কেননা আমি বয়ে করবো না বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছি ,

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ঈশান – কিছু হবে না। তুমি পালিয়েছো কেননা তুমি এগুলো সব জানতে।
শর্মিলা কোনোভাবে জানতে পারে তোমার সাথে বিয়ে হচ্ছে অপূর্বর, তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করে সব বলে। তুমি বাড়িতে বলোনি কেননা প্রমান ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না, কেননা এসবই ভাবতো তুমি মিথ্যা বলেছো বিয়ে করবে না বলে। আর শার্মিলা আমেরিকাতে ছিল, না আসা অব্দি কিছু হতো না। মানে আগে পালিয়েছিল সেই কারণে। শর্মিলা আসবে বলেছে বলে তুমি আবার বাড়ি ফিরেছিলে।

চন্দ্রেয়ী – আজ পালালাম কেন?

ঈশান – কারণ আজ শার্মিলাদের গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, সো ওরা আসতে আসতে যদি বিয়ে হয়ে যায় তাই পালিয়েছো। আর এই সব ইনফো সংযুক্তা, ইন্দ্র তোমাকে দিয়েছে। ওরাও জানে ব্যাপারটা। শর্মিলাই বলবে তোমার বাড়ির লোককে। তুমি নিজেকে বাঁচাতে পালিয়েছো অবলা নারী।

চন্দ্রেয়ী – কিন্তু আমি আজ পালালাম কেন? বললে না কেন আগে এত কথা ?

ঈশান – বললাম তো

চন্দ্রেয়ী – আগে বলোনি কেন?

ঈশান – আগে সব ঠিক করে উঠতে পারি নি। ইচ্ছা ছিল সবাই মিলে এসে তোমার বাড়িতে বলার , তুমি, হঠাৎ আমি বিয়ে করছি শুনে পালিয়ে আসবে কি করে জানবো।

চন্দ্রেয়ী – অপূর্ব যদি এইসব না করতো তাহলে বিয়ে ভাঙতে কি করে ?

ঈশান – এমন না হলে কোনো মেয়ে বলছে বিয়ে করবো না তাকে জোর করে বিয়ে করতে রাজি হতো না।আর যদি তেমন হতোকথা বলতাম, অন্য কিছু প্ল্যান করতাম,বিয়ে ভাঙতামই।

 

আর আজ বলিনি কেননা ভয় হয়েছিল, যদি তোমার বাড়ির লোক ওই সব লগ্নভ্রষ্ট মানে ? যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় ? তখন ? মরে যাবো – বলেই চন্দ্রেয়ীকে জড়িয়ে ধরলো।

তাছাড়া ট্রেন মিস হয়ে যেত।

চন্দ্রেয়ী – ট্রেন ?

ঈশান – আজ সবার প্রোগ্রাম করতে দিল্লি যাওয়ায় কথা ছিল মনে নেই?

চন্দ্রেয়ী – কিন্তু আমার টিকিট তো ক্যানসেল হয়ে গেছে।

ঈশান – হয়নি , করিনি।

চন্দ্রেয়ী – ট্রেনে যাবো এই বেনারসি, বিয়ের সাজে। চেঞ্জ করবো কোথায় ?

ঈশান – ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। ফার্স্ট ক্লাস এ শুধু স্নান করার জন্য বাথরুম আছে সেখানে , নো প্রব্লেম ভরসা রাখো।

চন্দ্রেয়ী – নেই। এবার গাড়ি স্টার্ট করো।

ঈশান – আর একটা কথা বলি ?

চন্দ্রেয়ী – বলো

ঈশান -আজ খুব সুন্দর লাগছে।

চন্দ্রেয়ী – সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাও এক্সিডেন্ট হবে।

ঈশান – আর একটা কথা বলি ?

চন্দ্রেয়ী – হুম

ঈশান – সিঁদুরটা মিসিং, পরিয়ে দেব ?

চন্দ্রেয়ী – সিঁদুর? সিঁদুর পড়াবো মানে? তুমি পকেটে সিঁদুর নিয়ে ঘোরো?

ঈশান – পকেটে নেই, ব্যাগে আছে ?

চন্দ্রেয়ী – সিঁদুর ব্যাগে আছে? যাকে পারলাম পরিয়ে দিলাম নাকি?

ঈশান- যাকে পারবো পড়াবো কেন? তোমার জন্যই রেখেছি। সেদিন সংযুক্তাদের বিয়ের জন্য অনেক কিছু কিনতে হয়েছিল , সিঁদুর ছিল ,আমি একটা এক্সট্রা কিনেছিলাম।

চন্দ্রেয়ী – এক্সট্রা কিনেছিলাম মানে ? এটা কি অন্য কিছু একটা গিফট দিয়ে দিলাম ?

ঈশান- আরে বাবা তোমাকে সেদিন প্রপোস করবো ভেবেছিলাম। তুমি রাজি হলে তোমাকে বিয়ে করে ফেলতাম সেদিন ই। আজ পড়াবো ? গাড়ি দাঁড় করবো ?

চন্দ্রেয়ী – তোমার সত্যিই ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন ?

ঈশান – আমি গাড়ি দাঁড় করাচ্ছি। একটুখানি পড়াবো , দেখো আমি আর ফালতু টেনশন নিতে পারছি না। বিয়ে হয়ে যাবে ব্যাস আর আলাদা হবার কোনো ব্যাপার নেই।

চন্দ্রেয়ী – আচ্ছা বাড়িতে কি বলবো, বিয়ে কেন করলাম ?

ঈশান – ভাবিনি, পরে ভেবে বলে দেব।

চন্দ্রেয়ী – গাড়ি স্টার্ট করো।

ঈশান- সিঁদুর ?

চন্দ্রেয়ী – হবে না, এইভাবে বিয়ে হয়না।

ঈশান -তুমি আমি মানলেই হলো , প্লিজ আর টেনশন নিতে পারছি না।

চন্দ্রেয়ীও চায়না ঈশানের থেকে আলাদা থাকতে।

ঈশান ওকে সিঁদুর পড়িয়েছে একটুখানি।

চন্দ্রেয়ী বলেছে – এটা এখুনি কাউকে বলার দরকার নেই । মাথায় সিঁদুর দেখে কেউ কিছু বললে বলা হবে ঠাকুরের বেদিতে প্রণাম করতে গিয়ে লেগেছে। গাড়ি ফের চলতে শুরু করেছে ,ঠিক সময়ে না পৌঁছলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে। গাড়িতেই সব গয়না খুলে নিয়েছে চন্দ্রেয়ী।

যথারীতি ট্রেন দিয়ে দিয়েছে। গাড়ির চাবিটা চৈতালিদির ড্রাইভারকে দিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটেছে। চৈতালিদিরা ওয়েট করছে। ঈশান আর চন্দ্রেয়ী ছুটে ট্রেনে উঠেছে।

প্রীতমদা – চন্দ্রেয়ী তুই? সন?

বলেছে চন্দ্রেয়ী বিয়ে করতে চাইছিলো না কেননা ছেলেটা ভালো নয়। সো পালিয়ে এসেছে। চৈতালীদিও বলেছে বেশ করেছে। বাকিরাও তাই। মাথায় সিঁদুর দেখে সন্দেহ করেছে চৈতালিদি। কিন্তু যেটা কথা ছিল সেটাই বলেছে চন্দ্রেয়ী।

চেঞ্জ করেছে চন্দ্রেয়ী। বাড়ি থেকে ফোন এসেছিলো। চন্দ্রেয়ীর ভাই কল করেছিল মা ও কথা বলেছে, বলেছে বড় ভুল করছিলো , চন্দ্রেয়ী প্রথম থেকে বলছিলো শোনেনি। চৈতালিদির সাথে কথা বলেছে – মেয়ের সাথে এমন হলো যেন উনি সামলান একটু।চৈতালিদি কথা দিয়েছেন উনি আছেন ভয় নেই।

রাত্রে সেই সাইডের নিচের সীটে চন্দ্রেয়ী শুয়েছে , ঘুম আসেনি। আর একজনেরও আসেনি সে আপাতত উপরের সীটে।
একটু রাতের দিকে নিচে নেমেছে , চন্দ্রেয়ীর পাশে বসে পর্দা টেনেছে।

চন্দ্রেয়ীকে জড়িয়ে ধরে বলেছে অনেক অনেক ভালোবাসে, মরে যেত ওকে ছাড়া। আর তারপর চন্দ্রেয়ীকে চকলেট অফার করেছে। আগের স্টাইলেই , চন্দ্রেয়ী হাত দিয়ে নিয়ে গেছে সরে গেছে ঈশান, ফের নিতে গেলে এবার হাতটা ধরেছে ,আরো এগিয়ে গেছে চন্দ্রেয়ীর দিকে।

খুব না, মনোযোগ দিয়ে পড়ছে দেখো। অন্যলোক নিজের সদ্য বিয়ে করা বৌকে নিয়ে কি করছে তাতে এত কিসের ইন্টারেস্ট? চন্দ্রেয়ী চকলেট খেয়েছে নাকি খায়নি জানা যায়নি।ঈশান ভালো করে পর্দা টেনে দিয়েছে। আমরা এত নির্লজ্জ নয় যে পর্দা সরিয়ে দেখবো কি হচ্ছে।

যাই হোক, চৈতালিদি জোর করে ধরেছে দিল্লিতে। চন্দ্রেয়ী আর ঈশান স্বীকার করেছে ওরা বিয়ে করেছে। চৈতালিদি বাড়ি ফিরেই ঈশানের সম্বন্ধ নিয়ে যাবে চন্দ্রেয়ীদের বাড়ি, চন্দ্রেয়ীর মা আগেই বলেছে যে মেয়ের এবার যেখানে পছন্দ সেখানেই বিয়ে দেবেন ফলে আর অসুবিধা হবার কথা নয়। আর চৈতালিদিকে, মা ও পছন্দ করতো খুব অনেকবার বলেছে ভালো ছেলে থাকলে বলতে বিয়ে দেবেন মেয়ের , শুধু চন্দ্রেয়ী পালাবার পর ভেবেছেন চৈতালিদি ওকে লুকিয়ে রেখেছেন, বলছেন না। ফলে বিয়ে হতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

চন্দ্রেয়ীর ভয় যায়নি , কেননা ঈশান যেমন, মা কিভাবে নেবে ওকে, রোজ ট্রেনিং চলছে কিভাবে কথা বলবে , কিরকম ব্যবহার করবে , একটু যেন সিরিয়াস থাকে এইসব।…………………………………

শেষ হলো – সোনার হরিণ গল্প’, আবার নতুন কোনো গল্প নিয়ে ফিরবো, সঙ্গে থাকুন সাথে থাকুন, প্রিয়বন্ধু মিডিয়া।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!