প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – গতবছর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খাসতালুক খড়গপুর শহরে সাফল্য এসেছিল তৃণমূলের। তবে সেবারের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন। জল্পনা বাড়ছে তাঁর দলত্যাগের। এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুর শহরে জনসভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী আগামী ৭ ই ডিসেম্বর। এই পরিস্থিতিতে রেলশহর খড়্গপুরে যে এখনো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, তা প্রমাণে বিশেষভাবে সচেষ্ট হলো জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

গতকাল রবিবার খড়্গপুরের একটি কমিউনিটি হলে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সমস্ত ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি, তৃণমূলের বিধায়কদের উপস্থিত থাকবার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে, গতকালের বৈঠকে দলের প্রতি ক্ষুব্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল উপস্থিত ছিলেন না। তৃণমূল নেতা জহরলাল পাল শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। গত কয়েক মাস ধরে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিসভা ছেড়ে দেবার পর জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

গতবছর খড়গপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে মূলত শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেই তৃণমূলের জয়লাভ। এরপর গত বছর ২৯ সে নভেম্বর খড়্গপুরের মানুষকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এর ঠিক এক বছর পর এই দিনেই মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করলেন তৃণমূল নেতারা। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি জানালেন যে, তাদের কাছে খড়গপুরের গুরুত্ব বিরাট। এটি বিজেপি দলকে ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বুঝিয়ে দিতে জেলার সমস্ত বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক সভাপতিদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

তিনি আরও জানিয়েছেন যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে খড়গপুর থেকে ২১ হাজারেরও বেশি লিড পাবে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর এই জনসভায় দেড় লক্ষ জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা পার করে, তা দু’লক্ষ করবার শপথ নিলেন তিনি এই খড়্গপুরে বসেই। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর আগামী ৭ ই ডিসেম্বরের জন সভায় প্রতিটি ব্লক থেকে ১০ হাজার করে লোক আনবার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে। নারায়ণগড়, দাঁতন, মোহনপুর, ঘাটাল, কেশপুরের মতো মেদিনীপুর শহরের দূরবর্তী ব্লক গুলিতে ১০০ টি করে বাস ও অনেক ছোট গাড়ী দেওয়া হবে। মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি ব্লক গুলিতে ৩০ টি বাস ও অনেক ছোটগাড়ী দেওয়া হবে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অনেক সংখ্যায় লোক আনবার। এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি জানালেন যে, তাঁর ধারণা পিংলা, কেশপুরের মতো ব্লকগুলি থেকে ১৫ হাজার করে আসবেন জনসভায়।

তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবার পর এই আবহে মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় কতটা লোক জমায়েত হবে? তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তৃণমূল নেতারা। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী অবশ্য জানালেন যে, দলের মধ্যে একটা ধন্দ তৈরী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই ধন্দ দূর করতেই মুখ্যমন্ত্রী আসছেন জেলায়। আর এই জনসভায় লোক জমায়েত করা তাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। তবে, তাঁর কথায়, এই লড়াইতে জিততেই হবে তাঁদেরকে।

অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তথা খড়্গপুরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার জানালেন যে, খড়গপুর শহরের একটা বড় অংশের মানুষ সভায় যাচ্ছেন বাইকে করে। তাঁর দাবি, বিজেপি সেদিন বুঝতে পারবে যে, এই শহরে তাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল এর প্রস্তুতি সভা করে সেই প্রক্রিয়া শুরু করা হলো। অন্যদিকে, এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র জানালেন যে, খড়গপুর সহ জেলার ১৫ টি আসনেই তৃণমূল জয়লাভ করবে। তার পূর্বে আগামী ৭ ই ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় দেখা যাবে জনপ্লাবন।