শিক্ষক দিবসে রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে বড়সড় আন্দোলনে রাজ্যের পাশ্বশিক্ষকরা কলকাতা রাজ্য September 7, 2019 শিক্ষক দিবসে পশ্চিমবাংলা সহ সারা ভারতবর্ষের শিক্ষকসমাজ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ভারতের সর্বপ্রথম উপরাষ্ট্রপতি তথা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের স্মৃতিচারণা করেন। পাশাপাশি তার নীতি, আদর্শ এবং ভাবধারার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নতি দেশের ভাবি প্রজন্মকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং মূল্যবোধের মূলমন্ত্র শিক্ষার্থীদের ভিতরে স্থাপন করার মধ্যে দিয়ে এই দিনটি পালিত হয়। আর লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর, তৃণমূল নেত্রী এবছরের শিক্ষক দিবস দলের ছাত্র ইউনিটকে বিশেষভাবে পালনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু 5 সেপ্টেম্বর 2019 যখন গোটা দেশ শিক্ষক দিবস পালন করছে, তখন পেশাগত দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলেন পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে শিক্ষা ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় উক্ত সংগঠনের সদস্যরা। এদিনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা সহ আরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া ছিল। এদিন তারা বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। ফলে তৃণমূল নেত্রী যখন দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে শিক্ষক দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে পালন করার কথা বলছেন, ঠিক তখনই শিক্ষক অসন্তোষের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল তাঁরই নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের উপর। সংগঠনের সদস্যদের মতে, অনেক পার্শ্ব শিক্ষক শিক্ষিকারা গত 2004 সাল থেকে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করছেন। কিন্তু তারা অনেক দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। আর এই সমস্ত বঞ্চনার বিরুদ্ধে এদিনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিন এই বিষয়ে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের সদস্য শ্যামল দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, 15 বছর ধরে বিধিবদ্ধ শিক্ষকতা করার মধ্যে দিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় ডিএলএড ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এর পাশাপাশিই, তাঁদের একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন হওয়ার কথা থাকলেও এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে সংগঠনের আরও এক সদস্য ভক্তিভূষণ বর্মন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের প্রাপ্ত পারিশ্রমিক বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় অপর্যাপ্ত। গত 3-4 বছরে 92 জন পার্শ্বশিক্ষক কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার হতাশা থেকে বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথ! এদিনে পার্শ্বশিক্ষকদের কথায় বারবার উঠে এসেছে, রাজ্য সরকার তাঁদের স্বার্থ দেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবিকভাবে কোনো সূরাহাই করেননি। তাই এই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে রাজ্য সরকারকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে অভিযোগ উঠেছে, রাজ্য সরকার নিজেই কথার খেলাপ করেছে। বেশ কয়েকবার তাঁদের চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে তাঁরা বারবার সমাধানের আশায় রাজ্যের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তাঁদের আরও অভিযোগ, তাঁরা বারবার ধরনায় বসেছেন বা আন্দোলন করেছেন – কিন্তু কোনো ফল মেলে নি। আর এবার তাই, তাঁরা শিক্ষক দিবসের দিন রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, এই বিশেষ দিনে আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁদেরও খারাপ লেগেছে। তাঁরাও চেয়েছিলেন, এই দিনটা পড়ুয়াদের সঙ্গে কাটাতে। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষক দিবসের দিনে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে না থেকে আন্দোলন করতে রাস্তায় নামতে হয়েছে। একই সঙ্গে, সরকারকে তাঁদের দিকটা ভেবে দেখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদেড় বক্তব্য, রাজ্য সরকার শিক্ষক ও পাশ্বশিক্ষকদের মধ্যে অনেকটা ফারাক রেখে দিয়েছে। ফলে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে তাঁদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এদিকে পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই আন্দোলন প্রসঙ্গে বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি অরুণ প্রসাদ বলেন, “আমরা পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল আমাদের সংগঠন সম কাজে সম বেতনের নীতিতে বিশ্বাসী। তাই এই আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি।” অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে বিজেপির প্রভাবতী বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংঘের রাজ্য সহ সম্পাদক উজ্জ্বল তালুকদার বলেন, “আমরা চাই আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বৃদ্ধি হোক। অন্তত স্নাতক মানে শিক্ষকদের মূল বেতন তাদের দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতেই পারে।” তবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম পরিমাণ বেতন সহ সব প্রাপ্য পার্শ্বশিক্ষকদের পাওয়া উচিত কিনা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি উজ্জ্বলবাবুকে। তবে এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষাসেলের নেতা বিপ্লব গুপ্ত বলেন, “পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি তাদের দাবি দাওয়া বিবেচনার সঙ্গে করেন, তবে রাজ্য সরকার নিঃসন্দেহে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে।” কিন্তু আন্দোলনকারী পাঁচশ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাপারে যে সংগঠন যে মতামত প্রকাশ করুক না কেন, 2004 থেকে 2019, এই 15 বছরে বাংলার শাসনভারে বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল, দুই শাসক দলকেই দেখেছে পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং তাদের দাবিদাওয়ার মত সুরাহা কোনো সরকারের কাছেই যে তারা পায়নি, তা তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট। এমনিতেই, রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের ক্ষোভের মুখে রাজ্য সরকার। লোকসভা নির্বাচনের পোস্টাল ব্যালটের দিকে তাকালেই সেই ক্ষোভের আগুনের আঁচ স্পষ্ট হয়ে যায়। তার উপরে বারেবারে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন শিক্ষাবন্ধুরাও। আর এবার শিক্ষকদের সম্মান জানানোর দিনে রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বহু গুন্ বাড়িয়ে দিলেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। ফলে, রাজ্য সরকারের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।আর এবার তাই শিক্ষক দিবসের দিন পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই আন্দোলন কোনো সফলতা পায় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আপনার মতামত জানান -