এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > তৃণমূলের বৈঠকে ঢুকতেই দেওয়া হল না প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী-পুত্রকে! শুরু চূড়ান্ত জল্পনা

তৃণমূলের বৈঠকে ঢুকতেই দেওয়া হল না প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী-পুত্রকে! শুরু চূড়ান্ত জল্পনা

উত্তর দিনাজপুর জেলা রাজনীতিতে বরাবরই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নজর কেড়েছিল রাজ্য নেতৃত্বের। কিন্তু ইতিপূর্বে গোটা রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শাসন ক্ষমতায় থাকলেও রায়গঞ্জের ক্ষেত্রে বরাবরই তৃণমূল বনাম সিপিএমের লড়াই বাদ দিয়ে কংগ্রেস বনাম সিপিএমের লড়াই চলত। সেই কারণে সংশ্লিষ্ট জেলায় তৃতীয় স্থান দখল করত তৃণমূল কংগ্রেস।

কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেকটাই বদল হয়েছে। উত্তরবঙ্গের রাজনীতির নিরিখে যেমন আটটা সিটের মধ্যে একটিও জিততে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস, পাশাপাশি এটাও সত্য উত্তর দিনাজপুরের নির্বাচনে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী জয়লাভ করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্থান কংগ্রেসের দখল করা সম্ভব হয়নি। সেখানে এগিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল।

এর থেকেই থেকেই পরবর্তীতে নির্বাচনের হারের পর জেলা নেতৃত্বের পরিবর্তন এনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কানাইয়ালাল আগরওয়ালকেই উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করে দেন। কিন্তু বরাবরই কানাইলাল আগরওয়ালের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বিমত ছিল ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীর। তৃনমূলের সঙ্গে অন্তর কলহের জেরে একসময় দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করে বিজেপিকে সমর্থন করেছিলেন তিনি।

কিন্তু পরবর্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন আব্দুল করিম চৌধুরী। তবে তৃণমূলে আসলেও ঘাসফুল শিবিরের কিছু নেতাদের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি করিম সাহেব। কখনও ব্লক সভাপতির নাম ঘোষণা নিয়ে, কখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পত্র পাওয়া নিয়ে জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেছে আব্দুল করিম চৌধুরীকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর এবার গত মঙ্গলবার কলকাতায় ডাকা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা ব্লক এবং টাউন কমিটির সভাপতিদের বৈঠকে করিম সাহেবের ঘোষিত ইসলামপুর ব্লকের ব্লক সভাপতি মেহেতাব চৌধুরীকে সেই সভায় ঢুকতে না দেওয়ায় কানাইলাল আগরওয়াল বনাম আব্দুল করিম চৌধুরী সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত 15 অক্টোবর লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথমবার দলের টাউন এবং ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। কিন্তু জেলা কমিটির সভাপতিদের কাছ থেকে উপস্থিত সেই নেতৃত্বদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয় রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে। বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন আব্দুল করিম চৌধুরীর ঘোষিত ইসলামপুরে ব্লক সভাপতি মেহেতাব চৌধুরী।

পাশাপাশি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সেই ইসলামপুরের মনোনীত ব্লক সভাপতি জাকির হুসেন সেই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন। দলের তালিকা জাকির হুসেনের নাম থাকলেও নাম ছিল না আব্দুল করিম চৌধুরীর ছেলে মেহেতাব চৌধুরীর। সেই কারণেই রাজ্য নেতৃত্ব তরফ থেকে তাঁকে এই বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর এই নিয়েই কানাইয়ালাল আগরওয়ালা বনাম আব্দুল করিম চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের তিক্ততা আরও বেড়ে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

গোটা ঘটনায় জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, “এদিনের বৈঠকের জন্য কানাইয়ালাল নামের তালিকা পাঠিয়েছিল। সেই তালিকা দেখে বৈঠক কক্ষে ঢোকানো হয়েছে। যেহেতু কানাইয়া মেহেতাবের নাম দেয়নি, তাই তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই মানে এই নয় যে মেহেতাব ব্লক সভাপতি নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি ব্লক সভাপতি হিসেবে মেহতাবের নাম ঘোষণা করেছি।”

কিন্তু উত্তর দিনাজপুর জেলা রাজনীতিতে বরাবর বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত আব্দুল করিম চৌধুরী এবং কানাইয়ালাল আগরওয়ালের এই দ্বন্দ্বে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করিম সাহেবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, “কলকাতা থেকে নাম যাওয়া হয়েছিল। প্রত্যেক ব্লকের সভাপতি এবং পাঁচজন কো-অর্ডিনেটরের নামের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ইসলামপুরের ব্লক সভাপতি হিসেবে জাকির হুসেনের নাম পাঠানো হয়েছে।”

এখন সমগ্র পরিস্থিতি যে ধীরে ধীরে উত্তর দিনাজপুর জেলার পক্ষে বেগতিক হয়ে যাচ্ছে, সেই নিয়ে সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলের অন্দরে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, তৃণমূলের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবারের এই বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরকম একটি বৈঠকে দলের কোনো ব্লক সভাপতির ক্ষেত্রে দুটি করে নাম কলকাতা অবধি পৌঁছে যাওয়া রীতিমতো চিন্তাজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বস্তুত, ইসলামপুর ব্লক সভাপতি নিয়ে যখন জেলা সভাপতি এবং বিধায়ক দুজন আলাদা আলাদা ব্যক্তির নাম ঘোষণা করছেন, সেই সময় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে যায়। একদিকে যেমন কানাইলাল আগরওয়াল জেলা সভাপতি হিসেবে জাকির হুসেনকে ব্লক সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন, অন্যদিকে তেমন যেহেতু তৃণমূলে বিধি অনুযায়ী, বিধায়কদের অধিকার রয়েছে নিজের ব্লকের সভাপতির নাম ঘোষণা করার, সেই অধিকারকে কাজে লাগিয়ে আব্দুল করিম চৌধুরী নিজের ছেলে মেহতাব চৌধুরীর নাম ব্লক সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

এখন ব্লক স্তরে যদি এই গোষ্ঠী কোন্দল পৌঁছে যায়, তাহলে আগামী দিনে জেলায় অনেকটাই এগিয়ে থাকা দোর্দণ্ডপ্রতাপ ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে কি করে লড়াই করবে ঘাসফুল শিবির! সেই নিয়েই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখন এই সমস্যা কাটিয়ে উঠে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে কতটা শক্তিশালী করতে পারে! সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!