এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সব ছেড়ে নেত্রীর নির্দেশ মেনে জনসংযোগে মনোনিবেশ তৃণমূল হেভিওয়েট নেতার, জল্পনা তুঙ্গে

সব ছেড়ে নেত্রীর নির্দেশ মেনে জনসংযোগে মনোনিবেশ তৃণমূল হেভিওয়েট নেতার, জল্পনা তুঙ্গে


“আর আমি যে কিছু চাহিনে, চরণ তলে, বসে থাকিব” কিছুটা এই ভাষাতেই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচকমণ্ডলীর মান ভাঙানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। তিনি শিলিগুড়ির ডাবগ্রাম ফুলবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কও বটে।

প্রসঙ্গত, রাজ্য জুড়ে চলছে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাতলে দেওয়া দিদিকে বলো কর্মসূচি। মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, সাংসদ থেকে জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি থেকে বুথ সভাপতি জনসংযোগ করতে মাঠে নেমে পড়েছে প্রত্যেকেই। নেত্রীর অকাল ভোট প্রচারের আহ্বানে শরিক হয়েছেন তৃণমূলের প্রত্যেকটি কর্তা ব্যক্তি। তাই এহেন একটা সময়ে দার্জিলিং জেলার জেলা সভাপতি হিসেবে এবং ডাবগ্রাম- ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে গৌতম বাবু যে তার থেকে আলাদা থাকবেন না, তা বলাই বাহুল্য।

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতা নেত্রীর একনিষ্ঠ আস্থাভাজন ছিলেন। আস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে নিজের পারফরম্যান্সও দেখিয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু ঈশানকোণে মেঘ জমে 2019 সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে। এই নির্বাচনে প্রায় প্রত্যেকটি বুথে বুথে সভা করে টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন গৌতম বাবু।

লক্ষ্য ছিল, পাহাড়ে যে পরিমাণ ডিফিট হবে, সমতলে লিড দিয়ে তা পূর্ণ করা হবে। আর এই ফর্মুলাকে হাতিয়ার করেই দার্জিলিংয়ে জোড়া ফুল ফোটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। জেতার ব্যাপারে প্রায় 90% আত্মপ্রত্যয়ী ছিল নেত্রী থেকে শুরু করে গৌতম বাবু। কিন্তু ফল প্রকাশের সাথে সাথে জোড়াফুল চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করে। জেতা তো দূর অস্ত, রেকর্ড পরিমাণ ভোটে পরাজিত হতে হয় দার্জিলিংয়ের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে।

শুধু তাই নয়, একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে পদ্মফুলের কাছে পিছিয়ে পড়ে তৃনমূল কংগ্রেস। 2021 সালের নির্বাচনের নিরিখে যা চিন্তার ভাঁজ শুধু নয়, রীতিমতো গলা শুকিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বের। আর এই রকম পরিস্থিতি যে জনসংযোগের অভাবেই ঘটেছে, তা নিয়ে কারওর মনেই কোন প্রশ্ন চিহ্ন নেই। তাই আগেভাগেই জনতা জনার্দনের মনকে খুশি করে আগামী দিনের পথকে প্রশস্ত করতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

আর এরকম একটা বাসনা নিয়ে নিজের বিধানসভা এলাকায় জনসংযোগের নাম করে রীতিমতো চষে বেড়ালেন গৌতম বাবু। জনগণের সঙ্গে বার্তালাপ, পাশের যোগ শিবিরে নিজের শরীর চর্চার প্রদর্শন এদিনের কর্মসূচির একটি বিশেষ অঙ্গ ছিল। এরপর জনতার অনুরোধে মাইক হাতে করে গানও গাইতে দেখা যায় মন্ত্রীমশাইকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু সেই গানের সুর এবং বোল রীতিমতো কৌতুহল বাড়াচ্ছে জনমানসের মনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের লাইন ধরে গৌতম দেব বলেন, “বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও, ফিরায়ো না গো জননী..”‌ অর্থাৎ জনগণের দরবার থেকে তিনি যে খালি হাতে ফিরে যেতে চান না, তা কবির ভাষায় প্রকাশই করে ফেললেন পর্যটন মন্ত্রী। তবে শুধু গান গেয়েই ক্ষান্ত থাকেননি মন্ত্রী মশাই, নিজেদের এক কর্মীর বাড়িতে নৈশভোজনও সারেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। মেনুতে ছিল ভাত, সবজি, মচমচে আলু ভাজা এবং বোরোলি মাছের ঝোল। খেয়েসেরে তৃপ্তি প্রকাশ করেন গৌতমবাবু। নিজেদের দলীয় নেতাকে বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়াতে পেরে আনন্দ অনুভব করেন জনৈক দলীয় কর্মী। যার মাধ্যমে নেত্রীর বাতলে দেওয়া জনসংযোগের পথকে হুবহু অনুসরণ করলেন গৌতম বাবু তা সন্দেহের অবকাশ রাখে না।

এদিন এই প্রসঙ্গে গৌতম দেব বলেন, “মানুষের সঙ্গে সারা বছর থাকার চেষ্টা করি। তবে প্রশাসনিক কিংবা মন্ত্রীত্বের মোড়কে বেশিরভাগ সময় ঘুরতে হয়। এইভাবে খোলামেলা হয়তো সব সময় থাকতে পারি না। তবে এই জনসংযোগে নতুন করে উদ্যম ফিরে পাচ্ছি। মানুষের কাছে আরও বেশি করে থাকতে চাই। মানুষ কেন আমাদের কাছে আসবে! আমাদেরই যেতে হবে তাদের সমস্যা বুঝতে। ভোটের সময় যখন আমরা যেতে পারি, সারা বছরই আমাদের তাদের পাশে থাকা উচিত। আগামী 15 দিন ধরে এই কর্মসূচি লাগাতারভাবে চলবে।”

কিন্তু মন্ত্রীমশাই যাই বলুন না কেন, এদিনের এই জনসংযোগ যাত্রাকে প্রশ্নবাণে বিধতে ছাড়েননি শিলিগুড়ি পৌরসভার মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন পৌর নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এদিনের এই জনসংযোগ যাত্রাকে কটাক্ষ করে অশোকবাবু বলেন, “তৃণমূল বড্ড দেরি করে ফেলেছে। আরও আগেই জনতার কাছে যাওয়া উচিত ছিল। এখন গিয়ে কোনো লাভ নেই। বিপদের সময় মানুষ তৃণমূলকে পাশে পাইনি।”

কিন্তু অশোক ভট্টাচার্য যতই অভিযোগ করুন না কেন, দুদে রাজনীতিবিদ গৌতম বাবু তার জনসংযোগ যাত্রা নিয়ে “দিদিকে বলো” কর্মসূচিকে এবারে বুথস্তরে পৌঁছে দিতে যে মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন, তাকে সাধুবাদ না দিয়ে পারছেন না কেউই। পশ্চিমবাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে এই ধরনের জনসংযোগ যাত্রা যে রীতিমতো রাজনৈতিক আঙ্গিকে প্রাসঙ্গিক, তা এক বাক্যে স্বীকার করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যেও উত্তরবাংলায় 8-0 গোল খাওয়া তৃণমূল নিজেদেরকে ফাইনাল ইনিংসে জয়ের পথে কতটা ধাবিত করতে পারবে এখন সেদিকেই তাকিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!