এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া > তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন উপপুরপ্রধান-সহ দলের কাউন্সিলররা, বড়সড় অস্বস্তি শাসাকশিবিরে

তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন উপপুরপ্রধান-সহ দলের কাউন্সিলররা, বড়সড় অস্বস্তি শাসাকশিবিরে

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যজুড়ে দলবদলের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় 2019 এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফলের কারণে বহু সদস্য নেতা, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদান করেন। ফলস্বরূপ, পুরসভায় পঞ্চায়েতের সবুজ রং বদলে গেরুয়া হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার পুনরায় বিজেপি দল থেকে দলবদলকারীরা তৃণমূলে ফেরত আসে এবং পুরবোর্ডগুলিতে একের পর এক অনাস্থা প্রস্তাব আসতে শুরু করে। এবং বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু এবার উল্টো ছবি দেখা গেল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায়। সেখানকার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁরই দলের উপপ্রধান সহ কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন।

শাসকদলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন একই দলের উপপ্রধান ও দলীয় কাউন্সিলররা। শাসকদলের এই অন্তর্দ্বন্দ ধরা পড়েছে পুরুলিয়া রঘুনাথপুর পুরসভায়। তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি উন্নয়নের কাজে ব্যর্থ হয়েছেন এলাকায়। তাই পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন তৃণমূলের 7 কাউন্সিলর। গত 24 তারিখে তাঁরা রঘুনাথপুর মহকুমা শাসকের কাছে এই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। তবে বিধি অনুযায়ী এই অনাস্থা প্রস্তাব মহকুমা শাসক গ্রহণ করেননি।

গত শুক্রবার এই অনাস্থা প্রস্তাবটি তাঁরা পুরপ্রধানের কাছে জমা করেন। আর অনাস্থা প্রস্তাব পাওয়ামাত্রই পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কাছে। যদিও এই পদত্যাগপত্র পাঠানো উচিত ছিল মহকুমাশাসকের কাছে।

রঘুনাথপুর পুরসভার মোট 13 টি ওয়ার্ড। তারমধ্যে শাসকদলের কাউন্সিলর নয়জন। পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই নয়জনের মধ্যে মধ্যে সাতজনই অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। ফলে এই অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে চাপানউতোর চলছে। আর অনাস্থাপত্র পেয়ে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই এক তৃণমূল নেতাকে দায়ী করেছেন।

রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় এই অনাস্থা প্রস্তাবের সম্বন্ধে জানান, ‘আমি উন্নয়নের কাজ কী করেছি, তা ওয়ার্ডে ঘুরলেই বোঝা যাবে। রঘুনাথপুর বিধানসভার এক তৃণমূল নেতার ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে অনাস্থা আনা হয়েছে। আমিও অনাস্হা সংক্রান্ত বৈঠকের আগেই পুরপ্রধানের পদ ছেড়েছি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব 2 পর্যবেক্ষকসহ জেলা সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। এবার দল যা বলবে তা মাথা পেতে নেব।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পুরুলিয়া রঘুনাথপুর পুরসভার মোট 13 টি ওয়ার্ড। 2015 সালের পুর নির্বাচনে সেখানে শাসকদল তৃণমূল 8 টি ওয়ার্ডে জেতে। কংগ্রেস ও বিজেপির দখলে আসে একটি করে আসন। আর সিপিএম যেতে তিনটি ওয়ার্ডে। পরবর্তীকালে বিজেপির একজন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগদান করেন। অন্যদিকে কংগ্রেস থেকেএকজন বিজেপিতে যোগদান করেন। রঘুনাথপুর পুরসভায় এখন কংগ্রেসের আসন শূন্য। বিজেপির 1, তৃণমূলের 9 এবং সিপিএম এর 3 কাউন্সিলর এই পুরসভায় বর্তমানে আছেন।

শাসকদলের 7 কাউন্সিলর তাদের অনাস্থা পত্রে লিখেছেন, পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় উন্নয়নের কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। গত দু’বছর ধরে তিনি কোন উন্নয়নের কাজ করতে পারেননি। তাছাড়া তাঁর আচরণও ঠিক নেই। অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা দলের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান মদন বরাট জানিয়েছেন, ‘পুরপ্রধান আমাদের সঙ্গে, এমনকি সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। উন্নয়নের কাজেও তিনি ব্যর্থ। তাই আমরা অনাস্থা আনতে বাধ্য হলাম।’

অনাস্থা পত্রের প্রতিলিপি তাঁরা তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, রঘুনাথপুর শহর তৃণমূল সভাপতি সুধীর বাউরী ও জেলাশাসক রাহুল মজুমদার এর কাছেও পাঠান। একইভাবে পুরপ্রধানও তাঁর পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি রঘুনাথপুরের বিধায়ক ও দলের টাউন সভাপতির কাছে পাঠিয়েছেন।

অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে নিয়ম অনুযায়ী পুরপ্রধানকে 15 দিনের মধ্যে একটি বৈঠক ডাকতে হয়। কিন্তু তিনি বৈঠক না ডাকলে সাত দিনের মধ্যে তা উপপ্রধানকে ডাকতে হবে। সেই বৈঠক না হলে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে যেকোনো তিনজন কাউন্সিলর বৈঠক ডাকবেন। তাঁরাও এই বৈঠক যদি না ডাকেন তখন 15 দিনের মধ্যে জেলাশাসক অনাস্থা সংক্রান্ত বৈঠক ডাকবেন‌।

লোকসভা ভোটের পর থেকে এতদিন একটা অন্য ছবি দেখা গিয়েছিল রাজ‍্যের বেশিরভাগ জায়গাতে। শাসক দলের পক্ষ থেকে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে বিরোধী দলের প্রতি, বা বিরোধী দল থেকে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে শাসক দলের প্রতি। কিন্তু শাসক দলেরই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে শাসকদলের পক্ষ থেকেই অনাস্থা প্রস্তাব আসছে- এ চিত্র সচরাচর দেখা যায় না। তবে এই ঘটনার পেছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের হাতছানিকে একেবারে সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন এলাকার রাজনৈতিক মহল।

তবে এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দলের মধ্যেই যদি এভাবে সংঘাত লাগে তাহলে তৃণমূলের দলীয় সংগঠন যে দুর্বল তা মেনে নিতে হবে। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্বের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা। আপাতত রঘুনাথপুর পৌরসভার ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকে নজর রাখবে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!