এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের ‘যোগ্য’ জবাব! শিক্ষামন্ত্রী আপনি শুনতে পাচ্ছেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের ‘যোগ্য’ জবাব! শিক্ষামন্ত্রী আপনি শুনতে পাচ্ছেন?

গত ২৯ ও ৩০ শে অক্টোবর কলকাতার শহীদ মিনারের পাদদেশে দুদিন ব্যাপী এক বৃহত্তর ও ঐতিহাসিক ধর্ণা ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা। পিআরটি স্কেলের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ইউইউপিটিডব্লুএ এই কর্মসূচি নিয়েছিল। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছিল – এনসিটিই নর্ম অনুযায়ী সারা দেশের মত এই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদেরও যোগ্যতা এখন উচ্চ-মাধ্যমিকে ৫০% ও সাথে দুই বছরের ডিএলএড প্রশিক্ষন – যেটা আগে ছিল মাধ্যমিক।

সংগঠনের তরফে আরও জানানো হয়েছিল, রোপা ২০০৯-এ শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল পে কমিশন-৬ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষিকদের জন্য ৯,৩০০ – ৩৪,৮০০ স্কেল এবং গ্রেড পে ৪,২০০ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত রাজ্যের হাই স্কুলের শিক্ষকদের বেলায় রোপা ২০০৯ মেনে বেতন দেওয়া চালু হলেও প্রাথমিকে সেটা দেওয়া হয়না! বর্তমানে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ৫,৪০০ – ২৫,২০০ এবং সাথে গ্রেড পে ২,৬০০ – যেটা আদতে মাধ্যামিক যোগ্যতার বেতন কাঠামো! অথচ, ২০১০ সালে রাজ্য সরকার শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এনসিটিই নর্ম মেনে নেয় এবং শিক্ষকরা সেই মত নিজেদের যোগ্যতা বাড়াতে বাধ্য হন।

রাজ্যের লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকের অভিযোগ, যোগ্যতা বাড়ালেও বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হয়নি। ফলস্বরূপ – অন্যান্য রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের সাথে এই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের বৈষম্য অনেকটাই! এমনকি বৈষম্য – এই রাজ্যেরই অন্যান্য শিক্ষকদের সাথেও। আর তাই, একপ্রকার মরিয়া হয়েই আন্দোলনের পথ বেছে নেন রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। কিন্তু সেই আন্দোলন প্রসঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, শিক্ষকরা আগের নিজের ‘যোগ্যতা’ প্রমান করুন, তারপর আন্দোলন করবেন!

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

আর, শিক্ষামন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে চরম অপমানিত বোধ করেন শিক্ষক সমাজ। তাঁরা স্পষ্ট বলেন, এই কথার মাধ্যমে আদতে, তাঁর নিজের দপ্তরের শিক্ষকদেরই ঘুরিয়ে ‘অযোগ্য’ বলে চরম অপমান করেন শিক্ষামন্ত্রী। আর তাই, আন্দোলনরত শিক্ষকরা শহীদ মিনারের নিকটবর্তী ‘ডোরিনা ক্রসিংয়ে’ গিয়ে ধর্নায় বসে যান। শিক্ষকদের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বাগে আনতে এরপর সংগঠনের রাজ্য-সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস, রাজ্য-সভাপতি সন্দীপ ঘোষ, বেলা সাহা, মইদুল ইসলাম, শাশ্বত ঘোষ, চন্দন চ্যাটার্জি, বিশ্বজিৎ সর্দার, রতন দে, সুজিত দাস সহ শতাধিক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। যে খবর প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষক ও সুধীজন সমাজ, ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

জেলের মধ্যেই এবং আন্দোলনের মঞ্চ থেকেই অনশন ঘোষণা করে দেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। আর সেই চাপের কাছে মাথা নুইয়ে কার্যত শেষপর্যন্ত বন্দি করা শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। এরপর, শিক্ষকরা রাজ্য-সরকারকে শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সময় দিয়ে আন্দোলন তুলে নেন। সঙ্গে, এটাও জানিয়ে দেন – রাজ্য-সরকার যদি কোন সদর্থক পদক্ষেপ না নেয় – তাহলে ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন তাঁরা। কিন্তু, এত সবের মাঝেও শিক্ষামন্ত্রীর করা চূড়ান্ত ‘অপমানজনক’ মন্তব্য যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষক সমাজ।

সেই ক্ষোভের আগুন ধিকিধিকি জ্বলার মাঝেই – এবার হাতে বড়সড় ‘অস্ত্র’ পেয়ে গেলেন রাজ্যের শিক্ষকরা। সম্প্রতি সামনে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের এক রিপোর্ট। যে রিপোর্টে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনা সারা ভারতবর্ষের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে করা হয়েছে। সেখানে, দেখা যাচ্ছে যে সারা ভারতবর্ষের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের গড় মানের তুলনায় আমাদের রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের মান অনেক ভালো। ফলে শিক্ষক সমাজের শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যেশ্যে প্রশ্ন – আমরা যদি সত্যিই অযোগ্য হই তবে এই সব ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বভারতীয় যোগ্যতামানে যোগ্য কারা করে তুললেন? আর এই রিপোর্ট কোন ‘গোপন রিপোর্ট’ নয় – কেন্দ্রীয় সরকারের এমএইচআরডি ওয়েবসাইটে গিয়ে ক্লিক করলেই জ্বলজ্বল করছে তা।

শিক্ষামন্ত্রীর, সামনে শিক্ষক সমাজ আরও বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে ‘১০০ দিনের কাজ’ বা ‘নির্মল বাংলা’ নিয়ে ‘ভালো রিপোর্ট’ এলে তা নিয়ে নবান্ন থেকে হইচই পরে যায়। অথচ শিক্ষা – যা একটি জাতির মানদন্ড, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের এতবড় ‘প্রশংসা’ সামনে এলেও তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন? তা কেন মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হয় নি? নাকি, যাঁদের কোন কারণ ছাড়াই ‘অযোগ্য’ বলে অপমান করেছিলেন – তাঁদের এতবড় ‘যোগ্যতার প্রশংসাপত্র’ সামনে আনতে কোথাও বাধছে? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী – আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ‘অযোগ্য’ শিক্ষক তাকিয়ে আছেন, বলে দাবি সংগঠনের এক জেলা নেতার।

এই সেই কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট – যা সামনে আসতেই শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের প্রতি ‘অযোগ্য’ মন্তব্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!