দলীয় নেতৃত্বকে লোকসভা ভোটের টিকিট নিয়ে বড়সড় হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর, জেনে নিন বিস্তারিত কলকাতা রাজ্য January 11, 2019 মুখ্যমন্ত্রীর নদীয়ার প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে সকাল থেকেই উৎকন্ঠায় ছিলেন জেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কীভাবে জেলার উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরবেন, তা নিয়ে একটা ব্যস্ততা তো ছিলই, তাছাড়া নদীয়ার নানান ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীতে কড়া ধমক প্রত্যাশা করে উদ্বিগ্ন ছিলেন জেলা প্রশাসনিক মহল। তাঁদের উদ্বেগকে সত্যি করে এদিন বৈঠকে বসেই নিজস্ব কড়া মেজাজে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “নদীয়া জেলার দুটো লোকসভা কেন্দ্রের দুটোই আমাদের দখলে চাই। কোনো অজুহাত আমি শুনবো না।” এমনটাই জেলা নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দিলেন নেত্রী। এদিন লোকসভা ভোটের জন্যে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হল তৃণমূলের দুই প্রতাপশালী নেতা অনুব্রত মন্ডল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পাশাপাশি একই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও এমনটাই জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রের খবরে। প্রসঙ্গত,১৯’এর ব্রিগেড সমাবেশকে নিশানা করেই চরম ব্যস্ততার মধ্যেও হাতে একদিনের সময় নিয়ে নদীয়া সফর সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত জেলাস্তরের প্রশাসনিক কাজকর্মের হালচাল জানতেই হঠাৎ করেই তাঁর এই নদীয়া সফর। দলীয় সূত্রের খবর থেকে জানা গিয়েছে,গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিই এই জেলা সফর সারার কথা ছিল তাঁর। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - কিন্তু অনিবার্য কারণবশত সে সফর স্থগিত করতে হয় তাকে। তাই এদিন পূর্ব নির্ধারিত সেই সফরই সম্পূর্ণ করলেন নেত্রী। এদিন দুপুর ১ টা নাগাদ জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে রানাঘাটের হবিবপুর ছাতিমতলার মাঠে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি। তারপর বিকেল ৩ টে নাগাদ কৃষ্ণনগরের সার্কিট হাউজে দলীয় নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। বৈঠকে একাধিক বিষয়ে যেমন দলীয় নেতৃত্বদের ধমক দেন তিনি,তেমনি বিভিন্ন ইস্যুর সমাধানে দলীয় নেতৃত্বদের দিশাও দেন তিনি। প্রতিটি অঞ্চল এবং পৌরসভা এলাকায় কোন কোন ওয়ার্ড,কোন গ্রাম সংসদে তৃণমূল কত ভোটে হেরেছে,বিরোধীদের থেকে কত পিছিয়ে রয়েছে তার সম্পূর্ণ চার্ট তৈরি করার নির্দেশ দেন তিনি। এবং এর দায়িত্ব তিনি দেন দলের প্রতিটি ব্লকের সভাপতিকে। পাশাপাশি আগামী লোকসভা ভোটে নদীয়ার দুটো লোকসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের দখলে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেন তিনি। এদিন কৃষ্ণনগরের দলীয় বৈঠকে বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের কড়া ধমকের সুরে বলেন,দলের পুরানো এবং অভিজ্ঞ নেতাদের সম্মান দিতে হবে। প্রসঙ্গত,সম্প্রতি সত্যজিৎ বাবু দীর্ঘদিনের পুরানো এক তৃণমূল নেতাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কৃষ্ণনগর বিধানসভা এলাকায়। এ খবর নেত্রীর কানে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। আর তারপরই কড়া ভাষায় সত্যজিৎ বাবুকে পুরানো ওই তৃণমূল নেতাকে দলে ব্লক সভাপতির পদে ফিরিয়ে আনার নিদান দেন। এরপর নদীয়া জেলার গোষ্ঠীকোন্দল নিয়েও দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত এবং উজ্জ্বল বিশ্বাসকেও কড়া হুঁসিয়ারী দেন নেত্রী। বলেন, কোন যায়গায় কোন বিধায়ক কেমন কাজ করছে তার সব খবর নেত্রীর কানে আসে। আগামী দিন কে কোন জায়গার ভোটের টিকিট পাবেন সেটা নিয়ে কারোর মাথাব্যাথা না করলেও চলবে। তা ভাববার জন্যে দলনেত্রী রয়েছেন। এটা বলার পর তিনি লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে বিধায়ক সহ বুথস্তরের কর্মী এবং অঞ্চল সভাপতিদের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য,নদীয়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতৃত্বদের যে মুখ্যমন্ত্রীর কোপের মুখে পড়তে হবে এটা কাঙ্খিতই ছিল। কারণ বিগত কয়েকমাস ধরেই নদীয়ার রিপোর্ট ভালো নেই। কারণ,রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় নদীয়ায় উন্নয়নের গতি শ্লথ। তাছাড়া,এই জেলায় বিষমদ কান্ডে ১২ জনের মৃত্যু, ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দপ্তরের ‘ঘুষচক্র’,১০০ দিনের সরকারি প্রকল্পে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে সম্প্রতি। শুধু তাই নয়,গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই জেলা থেকে তৃণমূল প্রত্যাশিত ফল পাইনি। সুযোগ বুঝে বিজেপি বাজিমাত করেছে নদীয়ায়। তাই আসন্ন লোকসভা নদীয়ার ভোটব্যাঙ্ক ফের করায়ত্ত্ব করতে এদিন দলীয় নেতা-কর্মী সহ প্রশাসনিক মহলকে সক্রিয় হওয়ার কড়া নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকের পর নদীয়ার উন্নয়নের চাকা ঘোরে কিনা এখন সেটাই দেখার! আপনার মতামত জানান -