এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > প্রশাসক বসিয়ে পুরসভার “উন্নয়ন” থমকে যেতেই এবার “এন্ট্রি” নিচ্ছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান!

প্রশাসক বসিয়ে পুরসভার “উন্নয়ন” থমকে যেতেই এবার “এন্ট্রি” নিচ্ছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান!

রাজ্যের পৌরসভার নির্বাচনগুলি পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে বারবার সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো। বিজেপি থেকে শুরু করে কংগ্রেস, কংগ্রেস থেকে শুরু করে বামফ্রন্ট, প্রত্যেকেই শাসকের পৌর নির্বাচন স্থগিত রেখে পৌরসভায় প্রশাসক বসিয়ে কার্য পরিচালনাকে সরকারের চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে কটাক্ষ করেছেন।

কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করে এসেছেন, রাজ্যের সবকটি পৌরসভার নির্বাচনে একসঙ্গে করালে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে তেমনই উন্নয়নের কাজগুলো ত্বরান্বিত হতে পারবে। কারণ বারবার পৌরসভার নির্বাচন হলে তাতে করে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়। কিন্তু মেদিনীপুর পৌরসভায় নিজের বসানো সেই পৌর প্রশাসকের উপরে ক্ষুব্ধ হতে দেখা গেল রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

তবে যেদিন মেদিনীপুর পৌরসভায় কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চালানোর লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার পরও পৌরসভার কাছে কাজে সহযোগিতা করার আর্জি জানালেন প্রাক্তন পৌর প্রধান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে মেদিনীপুর পুরসভার বোর্ড ভেঙে যায়। সদর মহকুমা শাসক দীননারায়ন ঘোষকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান প্রণব বসুকে রাখা হয়।

কিন্তু গত বুধবার ডেবরায় প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মেদিনীপুর তথা ঝাড়গ্রাম পৌরসভার নাগরিক পরিষেবা নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এদিন পৌরসভার বিভিন্ন পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় হেভিওয়েট ওই মন্ত্রীকে। পরিবহন মন্ত্রী অভিযোগ করেন, নিয়ম মেনে প্রাক্তন পৌর প্রধান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার কথা ছিল প্রশাসকের।

কিন্তু পৌরসভার বিভিন্ন কাজ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই করা হচ্ছে। আর এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী পৌর প্রশাসককে প্রত্যেকদিন একবার করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসতে বলেন এবং নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেন। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকের পর এই প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে পৌরসভায় হাজির হতে দেখা যায়। প্রণববাবু পৌরসভার বড়বাবুর কাছে গিয়ে একটি ঘর চান। যে ঘরে বসে তিনি নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারবেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন এই বিষয়ে প্রণব বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমি এবার থেকে পৌরসভায় নিয়ম করে বসব। প্রতিদিন দেড় ঘন্টা দু ঘন্টা করে বসব। সেখানেই সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনব। আমি শুনেছি বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট নিতে এসে মানুষকে হয়রান হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। সেই সব কাজকর্ম করে আমি মহকুমা শাসকের কাছে সই করানোর জন্য পাঠিয়ে দেব। দ্রুত যাতে কাজ হয়, তার জন্য চেষ্টা করব।”

তিনি এও জানান, কোনো এলাকায় আলো না থাকলে তারা এসে পৌরসভাকে জানাচ্ছে। কিন্তু সেই কাজ হতে এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ সার্টিফিকেট নিতে এসে হয়রানি হচ্ছে। প্রণব বসু বলেন, “সম্প্রতি দিদিকে বলো কর্মসূচি পালনের সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পৌরসভার পরিষেবা নিয়ে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। যার কারণে মন্ত্রী আমার কাছে কারণ জানতে চান। আমি জানাই, নাগরিক পরিষেবার জন্য এখন প্রশাসক রয়েছে। তাছাড়া ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র দুটি বৈঠক মহকুমা শাসকের সঙ্গে হয়েছে।”

প্রাক্তন পৌরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন নিয়ম করে মহকুমা শাসককে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিছুটা অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, “কোর কমিটি গঠন করে কাজ করার কথা বলা হলেও এই পৌরসভায় এখনও কমিটি গঠন হয়নি। সেই বিষয়ে এবার নজর দেওয়ার কথা মহকুমা শাসককে বলা হবে। ভাইস চেয়ারম্যানের ঘরটি একসময় আমার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। এখন সেখানে ক্যান্টিং হয়ে যাওয়াতে সেই ঘর আর ব্যবহার করা হয় না। বড়বাবুকে আমি ঘর দেওয়ার জন্য বলেছি। এবার থেকে প্রতিদিন আমি পুরসভায় বসব।”

এদিকে এই প্রসঙ্গে মেদিনীপুর পৌরসভার প্রশাসক তথা মহকুমা শাসক দীননারায়ন ঘোষ বলেন, “প্রাক্তন চেয়ারম্যানের জন্য আগে থেকেই ঘর বরাদ্দ ছিল। আর ওখানে কোনো ক্যান্টিন করা হয়নি। চা তৈরির সরঞ্জাম রয়েছে। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত তার সমাধান করা হয়। নিজের কাজের বিষয়ে পৌর প্রশাসক জানান, নিয়মিত জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজও করা হচ্ছে। পুর কর্মীরা নিয়মিত এলাকায় ঘুরছেন, মানুষের অভিযোগ শুনে তা সমাধান করা হচ্ছে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমরা প্রত্যেক দিন একটি সময় প্রাক্তন পৌরপ্রধান এবং উপপ্রধানের সঙ্গে বসব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পৌরসভার প্রশাসকের এই ধরনের ব্যর্থতার ছবি রাজ্যের পৌরভোট না হওয়ার ফল বলেই মনে করছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। আর এতে করে শাসকদলের অস্বস্তি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। তাই নিজেদের অস্বস্তিকে কমাতে এবার থেকে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে কাজ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বলে মত বিশ্লেষকদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!