বিজেপির সংগঠনে চলবে না দুর্নীতি-স্বজনপোষন! নাহলে আমরন অনশনের পথে নেতা-কর্মীরা! পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য December 3, 2019 বহু কষ্ট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা তাদের জয় এনেছিলেন। কিন্তু জয় আসলেও দলের একশ্রেণীর নেতৃত্ব নিজেদের পথে বসে থাকায় এবং মন্ডল সভাপতি নির্বাচনে ব্যাপক স্বজনপোষণ হওয়ায় এবার দলীয় নেতৃত্বকে কার্যত ঘামিয়ে ছাড়ল নীচুতলার নেতাকর্মীরা। বস্তুত, বর্তমানে সারা রাজ্য জুড়ে বিজেপির মন্ডল সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। কমবেশি প্রায় প্রত্যেক জায়গাতেই সেই মন্ডল সভাপতি নির্বাচনে স্বজনপোষণ এবং কাছের লোকদের জায়গা দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে নিচুতলার অনেক নেতা-কর্মী। যা নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এই মন্ডল সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ কায়েম হয়েছিল বাঁকুড়া জেলাতেও। রবিবার দুপুরে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ডঃ সুভাষ সরকারের সাংসদ অফিসে গিয়ে হাজির হন ছাতনা তিন নম্বর মণ্ডলের বিজেপি নেতা কর্মীরা। যেখানে সেই নিচুতলার বিজেপি নেতাকর্মীদের দাবি ছিল, ছাতনা তিন নম্বর মণ্ডলের জন্য সভাপতি পদে মোট 12 জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ফের সেই মন্ডল সভাপতি পদে সিদ্ধেশ্বরবাবুকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে সাংসদ অফিসের সামনেই গত রবিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন সেই মন্ডলের 11 জন নেতাকর্মী। যে ঘটনায় ব্যাপক চাপে পড়তে হয় জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে। রবিবার দুপুর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কনকনে শীতের মধ্যেই কুড়ি ঘন্টা ধরে বিজেপির নেতাকর্মীরা তাদের ধর্না, অনশন চালিয়ে যান। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাঁকুড়া জেলা বিজেপির সভাপতি সহ সভাপতির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের অনশন ভাঙান। জানা যায় সোমবার বাঁকুড়া জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি নীলাদ্রি শেখর দা না এবং জেলা সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায় নেতাকর্মীদের চা খাইয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে এমনি এমনি অনশন ভাঙেনি। এক মাসের মধ্যে এই গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জেলা বিজেপির তরফে। আর তারপরই সেই মন্ডল নেতৃত্বরা তাদের অনশন ভেঙেছেন। তবে যদি জেলা নেতৃত্ব এই গোটা ঘটনায় পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তাহলে তারা আবার অনশন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির সেই নেতা কর্মীরা। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - কেন তারা অনশন করছিলেন? এদিন এই প্রসঙ্গে সেই অনশন প্রত্যাহারের পর ছাতনা 3 নম্বর মণ্ডলের বিজেপির বিদায়ী সম্পাদক বাসুদেব দে বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই দলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে, আমাদের মন্ডলে দলীয় সংবিধান অমান্য করে তৃতীয়বারের জন্য দল সিদ্ধেশ্বর কুন্ডুকে মন্ডল সভাপতি করেছে। এজন্য আমরা দলের নেতৃত্বের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তুলে দিয়েছি। তার পরেও দল কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা অনশনে বসেছিলাম।” তিনি আরও জানান, “পরে সংসদ সদস্য ও জেলা সভাপতি আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা বুঝে এক মাসের মধ্যে আলোচনার আশ্বাস দেন। জেলা সভাপতির আশ্বাস পেয়েই আমরা এদিনের মত অনশন তুলে নিই।” এদিকে এই অনুষ্ঠানে শামিল হওয়া বিজেপির বিল্টু দে বলেন, “জেলা নেতৃত্বের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আমাদের মন্ডল সভাপতি পরিবর্তন না হয়, তাহলে ফের বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” কিন্তু নেতাকর্মীদের তারা আন্দোলন থেকে বিরত রাখলেও, মন্ডল সভাপতি পরিবর্তন করানোর মতো সিদ্ধান্ত কি নেতৃত্ব নেবে? এদিন এই প্রসঙ্গে দলের কর্মীদের অনশন ভাঙ্গানোর পর জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “ছাতনা তিন নম্বর মণ্ডলের কর্মীরা যে দাবি তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখে জেলা সভাপতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। আগামী এক মাসের মধ্যে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যার সমাধান করব।” তবে যদি ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান হয়েও যায়, তা সত্ত্বেও বর্তমানে যে ঘটনা ঘটে গেল বাঁকুড়া জেলায়, তাতে বিজেপি যে মন্ডল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কার্যত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত, সেটা সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এমনিতেই ৩ আসনের উপনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তার মাঝে যদি এইভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে – তাহলে কিন্তু বিজেপিকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নাকের জলে-চোখের জলে হতে হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আপনার মতামত জানান -