সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব – 7, কলমে – অপরাজিতা অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় June 26, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া – পরের দিনটাও সকাল থেকে ভালোই কেটেছিল, শুধু ভয়ে ছিল চন্দ্রেয়ী। ঈশান যদি সবাইকে বলে দেয় ওর বিয়ে, চৈতালিদি ছাড়া আর কেউ জানতো না, বলেনি, ইচ্ছা হয়নি, ঈশানও জানতো না কিন্তু ওই সংযুক্তা। ঈশান জানুক এটা একেবারে চাইতো না চন্দ্রেয়ী। বলেছিলো ঈশানকে যেন না জানায়। ঈশানকে সাইকো মনে হয় চন্দ্রেয়ীর। হবে নাই বা কেন? যে ছেলে রাত্রে সানগ্লাস পরে, যে ছেলে মেয়েদের পারফিউম গায়ে মেখে নেয় তাকে সাইকোই মনে হয় চন্দ্রেয়ীর। কিন্তু সংযুক্তাকে বোঝাবে কে ? রাত্রে সবাই ঘুমালে আগের দিনের মতোই জেগেছিলো চন্দ্রেয়ী। জেগেছিলো ঈশানও। চন্দ্রেয়ী জানে সে কিছুতে এই বিয়ে করবে না, কিন্তু কিভাবে আটকাবে ? কি করবে? চন্দ্রেয়ীকে আজ পর্যন্ত ওর মতের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারে নি। আর এটা তো বিয়ে ? কিন্তু কিভাবে ? মাথায় কিছু আসছে না, চলছে তোলপাড়। যদি কোনো উপায় না হয় তবে বিয়ের রাতেই সবার সামনে বললে এই লোকটাকে বিয়ে করবো না, সবার সামনেই বলবে সত্যিটা। যা হবে পরে দেখা যাবে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হবে কি? মনের মধ্যে চলছে তোলপাড়। আজকেও জেগে? প্রশ্ন করলো ঈশান চন্দ্রেয়ী কিছু বলার আগেই ওর সীটে আগের দিনের মতো বসে পড়লো। উফফ ভালো লাগে না ফের ফালতু বলবে। চন্দ্রেয়ী – কি চাই ? ঈশান – তোমাকে ? চন্দ্রেয়ী – কি? ঈশান – তোমাকে এ এ এ মানে তোমার সাথে একটু গল্প করবো আবার কি ? চন্দ্রেয়ী – আমার কোনো ইচ্ছা নেই ঈশান – আগে কখনো গেছো ট্রেনে? চন্দ্রেয়ী – হুম ঈশান – আমিও অনেকবার গেছি চন্দ্রেয়ী – ঘুমাতে যাও ঈশান – আরে, এইভাবে সাইড এর সীটে বসে সারা রাত কারুর সাথে গল্প করেছো ? চন্দ্রেয়ী – না ঈশান – পর্দা টেনে, কাউকে জড়িয়ে ধ……. চন্দ্রেয়ী – বুঝেছি কিন্তু এখানে কোনো চান্স নেই , সংযুক্তার সাথে যা করার করো, এখন যাও। ঈশান – সংযুক্তার সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে চন্দ্রেয়ী – কি? কবে ? ঈশান – আজকে চন্দ্রেয়ী – তোমার কিছু মনে হচ্ছে না ? ঈশান – কি মনে হবে ? চন্দ্রেয়ী – কিছু মনে হচ্ছে না? ঈশান – হুম , একটা ফ্রি ফ্রি ভাব লাগছে। চন্দ্রেয়ী – সিরিয়াসলি তোমার লজ্জা বলে কিছু নেই ? ঈশান – যা বাবা লজ্জা আছে বলেই তো জামা কাপড় পরে আছি। চন্দ্রেয়ী – ছিঃ, ঈশান – ছিঃ এর কি আছে ? চন্দ্রেয়ী – আছে , বুঝলে বলতে না,এবার যাও আমি ঘুমাবো ঈশান – ঘুমিয়ে কি করবে? এই সুযোগ আর পাবে না , গল্প করো। তোমার ইগোপূর্বর সাথে কথা হয় না? আমি ভালো কথা বলছি , বিয়েটা করো না। বাড়ি গেলেই ফেঁসে যাবে , তার থেকে এখন থেকে সোজা সি এম এর বাড়ি চলে চলো ,ইচ্ছা হলে আমার সাথেও ফ্ল্যাটে থাকতে পারো। আমাদের সব গল্প পড়তে হলে আমাদের পেজে – গল্পে আড্ডায় ক্লিক করুন, ওখান গল্পের আগের সব অংশ পেয়ে যাবেন। চন্দ্রেয়ী – ওয়েট, ওয়েট এই যে তোমার এত আইডিয়া রাখো কোথায়? ঈশান – মাথায় আবার কোথায়? বাট আমি সিরিয়াস চন্দ্রেয়ী – তুমি সিরিয়াস? ঈশান – ইয়েস চন্দ্রেয়ী – যে রাত্রে সানগ্লাস পরে, মেয়েদের ডিও মাখে, উদ্ঘাট সেজে ঘোরে সে সিরিয়াস। ঈশান – সব কিছুরই কারণ থাকে। চন্দ্রেয়ী – আচ্ছা ? রাত্রে সানগ্লাস পড়া, মেয়েদের ডিও মাখা এর পিছনে কারণ? ঈশান – আছে , কিন্তু তুমি বুঝবে না! চন্দ্রেয়ী – শোনো তোমার না সিরিয়াসলি প্রব্লেম আছে, সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাও বুঝলে ঈশান – এপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছি না, মানে আমার সাথে কথাই বলতে চাইছে না সাইক্রিয়াটিস্ট । সো কিকরে ঠিক হবে বলো। চন্দ্রেয়ী – আমি না ইয়ার্কি করছি না,সিরিয়াসলি বলছি, ঈশান – আমিও সিরিয়াসলি বলছি। চন্দ্রেয়ী খুব ভালো করে বুঝতে পারছে ঈশান মোটেও সিরিয়াস নয়, শুধু মজা করছে চন্দ্রেয়ীর সাথে। চন্দ্রেয়ী – তোমায় বাড়িতে কিছু বলে না, তোমার মা বাবা ? পড়তে আমার মায়ের পাল্লায়, ন্যাড়া করে ছেড়ে দিতো। বাড়ি থেকে বের করে দিতো। ঈশান- একটু মৃদু হেসে কোথায় আর বলে! চন্দ্রেয়ী – তাহলে হাল ছেড়ে দিয়েছে জানে আর কিছু হবে না। ঈশান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু হেসে উঠে পড়লো। চলে গেলো দরজার দিকে, না আজ ট্রেন থামে নি। তাই স্টেশনে নামবে না। আচ্ছা চন্দ্রেয়ী কি কিছু ভুল বললো? এতটা রিএক্ট করা হয়তো উচিত হয়নি। ঈশানের মুখটা কেমন যেন ছোট হয়ে গিয়েছিলো।দূর যতসব উল্টোপাল্টা চিন্তা ভাবনা, একে ওই অপূর্বকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তার উপর এই সব , মাথা কাজ করছে না। কারণটা তখন বোঝেনি চন্দ্রেয়ী। বুঝেছিলো তবে অনেক পরে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - আজ চন্দ্রেয়ীর খুব ইচ্ছা করছে ট্রেনে করে একসাথে ঈশানের সাথে যেতে। ওই নিচের সীটে বসতে, পর্দা টেনে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখতে। সেই ছেলেটার কাছে যেতে যে প্রোগ্রামেও মৈথেলি নামের মেয়ের সাথে আলাপে বলে উঠে – হাই, আমি সন, তবে লোকে আমাকে রাম বলেও ডাকে। ইস কি বোকা বোকা , যেখানে যে মেয়েই পায় তার নামের সাথে মিলিয়ে একটা ছেলেদের নাম বললেই। সেবারে শুনেই হেসে ফেলেছিলো চন্দ্রেয়ী। মাথা নেড়ে নিজের ঘরে চলে গিয়েছিলো। সেই ছেলেটা কে খুব মিস করছে চন্দ্রেয়ী। যে ব্রেকফার্স্টের টেবিলে হঠাৎ করে উড়ে এসে চন্দ্রেয়ীর হাত থেকে প্লেটটা কেড়ে নিয়ে খেতে খেতে বলেছিলো, থ্যাংক ইউ খুব খিদে পেয়েছিলো। আবার উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতে হয়েছিল চন্দ্রেয়ীকে, শুধু খাবার নয় চাও। চন্দ্রেয়ীর এতো কাপেও চুমুক দিয়েছিলো ঈশান। চন্দ্রেয়ী বলেছিলো – ওটা আমি খেয়েছি এঁটো। ঈশান – সাড়া দেয়নি ,এক চুমুক লাগিয়ে – ও সরি, এই নাও তোমার চা। চন্দ্রেয়ী আর ওই কাপটা নেয়নি। নিজের মনে এইসব ভাবছিলো চন্দ্রেয়ী। টোকা পড়লো। মাসি শরবত এনেছে , চন্দ্রেয়ী সকাল থেকে কিছু খায়নি, শুধু আজ নয়, কয়েকদিন ধরেই কিছু খায়নি , ইচ্ছাই করেনি, খিদেই পায়নি ওর। এখনো খাবোনা বললো, মাসি বললো না খেলে এবার গা গোলাবে, বিয়ে হতে এখনো তো দেরি তার আগে শক্ত কিছু খাওয়া যাবে না। গা গোলাবে, সেদিন হোটেলে কিছু একটা মিষ্টি দিয়েছিলো ওরা, ব্যাঙ্গালোরের মিষ্টি একটু খেল, ভীষণ মিষ্টি, কিছুক্ষন পর থেকে গা গোলাতে শুরু করেছিল চন্দ্রেয়ীর , ঘরে গিয়ে শুয়েছিল, ৩-৪ ঘন্টা বাদে দরজায় টোকা পড়লো। উঠে দরজা খুলো চন্দ্রেয়ী। একটা গ্লাসে কোল্ড ড্রিংকসের মতো কিছু একটা নিয়ে এসেছে। চন্দ্রেয়ীকে কিছু না বলে সোজা বেড এর কাছে চলে গেলো। সাইড টেবিলে রেখে বললো এটা খেয়ে নাও, ঠিক হয়ে যাবে। চন্দ্রেয়ী – কি এটা ? ঈশান – কোল্ড ড্রিঙ্কস , খেয়ে নাও ঠিক হয়ে যাবে। চন্দ্রেয়ী – না থাঙ্কস, ঠিক হয়ে গেছে। ঈশান – ঠিক হলেও খেয়ে নাও , চন্দ্রেয়ী ২-৩ চুমুক দিয়ে রেখে দিলো। ঈশান – আর খাবে না? চন্দ্রেয়ী – না ঈশান আর কথা না বাড়িয়ে বাকিটা খেয়ে নিলো আর এসবে অবাক হয় না চন্দ্রেয়ী। ঈশান চলে যাচ্ছিলো। একটু দাঁড়ালো , ফের চন্দ্রেয়ীর কাছে এসে বললো – আচ্ছা চাঁদ , তোমার ইগপূর্ণ জানে ? চন্দ্রেয়ী – চন্দ্রেয়ী , ঈশান – ওই আর কি চন্দ্রেয়ী – কি জানবে ? ঈশান – এই যে তুমি বিয়ের আগেই মা হতে যাচ্ছ, আর ইগোপূর্ণ বাবা। চন্দ্রেয়ী – জাস্ট শার্ট আপ ঈশান – দেখো এটা একটা ভালো সুযোগ, তুমি ইগপূর্ণকে কল করে বলো তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো এন্ড তুমি প্রেগনেন্ট, বিয়েটা কিন্তু ক্যানসেল হয়ে যাবে। চন্দ্রেয়ী – তুমি যাবে ? ঈশান – আরে অন্য ছেলে না পেলে আমার কথা বলো , বলো আমাকে ভালোবাসো, এন্ড আমার বেবির …………………… চন্দ্রেয়ী – টেনে এক চড় লাগাবো ঈশান – আরে এমনি বলবে, এর পরে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না , ভেবে দেখো চন্দ্রেয়ী – তোমার চাই টা কি? বেরোও ঘর থেকে ঈশান – দেখো যদি এটা ও তোমার বাড়িতে বলে কিছু কাজ হবে না , তুমি বলবে ও মিথ্যা কথা বলছে , এন্ড অফ কোর্স তোমার প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে নেগেটিভ আসবে তাই না? অবশ্য যদি আমি যেটা ভাবছি সেটাই হয় মানে এসিডিটির জন্য এখন তোমার গা গোলানো হয়, অন্যকিছু না হয়। চন্দ্রেয়ী কোনো কথা না বলে এবার ফ্লাওয়ার ভাস টা হাতে তুলে নিলো। ঈশান বিছানায় উঠে ঘুরপাক খেতে খেতে – দেখো ওটা ফ্লাওয়ার ভাস,মাথায় পড়লে মরে যাবো, বিয়েটা ক্যানসেল হবে কিন্তু তুমি জেলে যাবে।কিন্তু মাঝখান থেকে আমি মরে যাবো, আর আমি তো তোমাকে হেল্প করছিলাম, তোমার জন্য আমি এত বড় কলঙ্ক মাথায় নিচ্ছি সেটা ভাব। এবার চন্দ্রেয়ী হাত টা তুললো, ঈশান ওর হাতটা ধরলো। ডিসব্যালান্স হয়ে দুজনেই পড়লো বিছানায়। ঈশানের উপরে চন্দ্রেয়ী পড়েছে। এত কাছ থেকে ঈশানের চোখ দুটো আরো একদিন দেখেছিলো চন্দ্রেয়ী, অনেক কিছু বলতে চাইছে আজকেও বলতে চাইছে, খুব শান্ত।বুদ্ধিদীপ্ত, মায়া জড়ানো দুচোখ, ঠেলে সরিয়ে উঠতে যাচ্ছিলো চন্দ্রেয়ী, ঈশান ওকে টেনে বললো – জানতে চাইছিলে না কি চাই ? ” আমার সোনার হরিণ চাই” চন্দ্রেয়ীর খুব কাছে ছিল ঈশান চোখটা বন্ধ করে নিয়েছিল চন্দ্রেয়ী। ঈশান উঠে পড়ে বলছিলো – কোমরটা আমার গেলো মনে হচ্ছে , এত ভারী তুমি বাবারে , একটু খাওয়া কম করো। আর দাঁড়ায়নি উঠে চলে গিয়েছিলো, চন্দ্রেয়ী অনেকক্ষন বিছানায় বসে ছিল। আপনার মতামত জানান -