প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – গত লোকসভা নির্বাচনের আগের সময় থেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করার পর থেকেই ভাঙ্গার আতঙ্ক তৈরি হতে থাকে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরমহলে। কেননা মুকুলবাবুর মত চাণক্য তৃণমূল ছাড়ার পর যে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই অস্বস্তিতে ফেলে দেবেন, তা বুঝতে বাকি ছিল না কারোরই। সেই মত তৃণমূলের অনেক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের লোকসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করান মুকুল রায়। স্বাভাবিকভাবেই লোকসভায় বিজেপির প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়ে নিয়ে 18 টি আসন দখল করে।

আর তারপর থেকেই তৃণমূলের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। সামনেই 2021 এর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে আজ তৃণমূলের শেষ একুশে জুলাই ছিল। করোনা ভাইরাসের কারণে তা ভার্চুয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এবার এই ভার্চুয়াল একুশে জুলাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সবথেকে বড় প্রভাবশালী নেতা আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে নানা মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের অনেক কর্মীরা এই ব্যাপারে দাবি জানাতে শুরু করেছিল। সেদিক থেকে এদিনের একুশে জুলাই রাজনৈতিক মহলের কাছে বাড়তি চমক হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন, কোন হেভিওয়েট নেতা বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন! সেদিক থেকে মুকুল রায় বা তার পুত্রের নাম নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। কেননা মুকুলবাবু এখনও পর্যন্ত বিজেপিতে গিয়ে সেভাবে পদ পাননি। ফলে তিনি এবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে পারেন বলে তৃণমূলের একাংশ দাবি করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন ভাবে কোনো যোগদান পর্ব এদিনের একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠান থেকে সম্পন্ন হয়নি। তবে তৃণমূল ত্যাগ করে যারা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছেন, এদিন তাদের উদ্দেশ্যে একুশে জুলাইয়ের সভা মঞ্চ থেকে বার্তা দিতে দেখা যায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ভুল বুঝে যারা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন, তারা তৃণমূলের ফিরে আসুন‌। ভুল করে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে গিয়ে থাকলে আর মুখ ভার করে থাকবেন না। চলে আসুন তৃণমূলে। তৃণমূলের নেতৃত্বে 2021 এ সরকার গড়বে।” আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এবার রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরোক্ষে নাম না করে মুকুল রায়, থেকে শুরু করে অর্জুন সিংহ, সব্যসাচী দত্ত থেকে শুরু করে বিপ্লব মিত্রের মত নেতারা যাতে আবার তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরে আসেন, তার জন্য বার্তা দিতে চাইলেন!

তাহলে এতদিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল যে, একটা মুকুল গেলে লক্ষ্য মুকুল তৈরি করে নেওয়া হবে, সেটা শুধুমাত্র কথার কথা? একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন যে, একের পর এক নেতা ভারতীয় জনতা পার্টিতে গিয়ে তাদের দলের ক্ষতি হয়েছে। আর তাই 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে সেই সমস্ত নেতাদের আবার দলে ফেরার জন্য একুশে জুলাই য়ের সভা মঞ্চ থেকে আহ্বান জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জেরে তৃণমূল নেত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে এখন নানা মহলে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

এদিকে এদিনের এই একুশে জুলাইয়ের সভা মঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করে বাংলাকে গুজরাট কখনই শাসন করবে না বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন যে, 2021 এ আবার তৃণমূল কংগ্রেস ফিরছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্যের মাঝে বারে বারে সংশয়ের সুর ফুটে উঠেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

কেননা যদি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারা ঘাসফুল শিবিরের কাছে ফ্যাক্টর নাই হবে, তাহলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকের সভা থেকে সেই সমস্ত নেতাদের আবার ফিরে আসার আহবান জানালেন! তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। বিরোধীদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন, তার দল ভেঙে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই এই ভাঙ্গনকে আটকাতে যারা বেরিয়ে গিয়েছেন, তাদের আবার দলে আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। কেউ তৃণমূলে যোগ তো দেবেই না, উল্টে তৃণমূল ছেড়ে সকলে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে।