এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > করোনা আবহে শিক্ষার ভবিষ্যৎ কি? কোন পথে শিক্ষকরা? কি ভাবছেন ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকরা? জেনে নিন

করোনা আবহে শিক্ষার ভবিষ্যৎ কি? কোন পথে শিক্ষকরা? কি ভাবছেন ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকরা? জেনে নিন


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ, রোহন চক্রবর্তী, বালুরঘাট – অভিশপ্ত 2020 র মার্চ মাস থেকেই প্রায় গোটা বিশ্ব অভূতপূর্ব মহামারীর শিকার হয়েছে। চিনের উহান শহরে জন্ম নিয়ে গোটা বিশ্বকে নিজের করালগ্রাসের মুখে ফেলেছে কোভিড 19 করোনা ভাইরাস। আক্রান্তের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ইউনাইটেড স্টেট অফ আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের সবথেকে ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি পর্যন্ত প্রত্যেকেই কার্যত গৃহবন্দি। প্রভাবিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, দেশের পরিচালন ব্যবস্থা, এমনকি সামাজিক আচার- আচরন সবকিছুই।

কিন্তু করোনার অতিমারীকে মাথায় রেখেও বিশ্বজোড়া প্রায় সবকটি দেশই স্বাস্থ্যবিধি পালন করে ধীর পদক্ষেপে মূলস্রোতে ফিরতে শুরু করেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লকডাউন পিরিওড কাটিয়ে আনলক ফোরের দিকে পা বাড়িয়েছে ভারতবর্ষও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে কল-কারখানা। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলছে বাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিবহনকারী যানবাহন। প্রশাসনিক স্তরেও কনটেইনমেন্ট জোন বাদ দিয়ে বিধি মোতাবেক কোর্ট কাছারি, অফিস-আদালত সব কিছুই খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু বাংলা তথা ভারতের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে নবপ্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থা।

নার্সারি থেকে শুরু করে প্রাইমারি, হাইস্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় – করোনা মহামারীর শুরুর প্রথম দিন থেকে আনলক ফোর পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে সবকিছুই। কার্যত গৃহবন্দি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে যোজন দূরে ছাত্রছাত্রীরা। ক্যাম্পাস ছাত্রশূন্য। টিচার্স রুম শিক্ষক শূন্য। ব্ল্যাকবোর্ডগুলো চকের অপেক্ষা করছে। তাই কার্যত সবথেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, লোহা লস্কর থেকে শুরু করে গাড়ির ইঞ্জিন পর্যন্ত সব কারখানা খুললেও, মানুষ তৈরীর ‘গর্ভগৃহ’ আর কতদিন বন্ধ থাকবে?

নব প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে পশ্চিমবাংলা থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে? প্রশ্নটা শুধু ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নয়, লকডাউনের জেরে স্কুলে পৌঁছতে না পেরে কার্যত হাঁসফাঁস করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও একাংশ। সমকষ্ট ভোগ করছে ছাত্র-ছাত্রীরাও। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের মধ্যে যেমন নিজেদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে, তেমনই আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি হবে, তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন বিদ্বজ্জনদের একাংশ।

এমতাবস্থায় সরকারের কি করনীয় হবে, কি হবে শিক্ষাঙ্গনগুলোর ভবিষ্যৎ, এই নিয়ে সমীক্ষা করতে চেষ্টা করেছিলাম আমরা। প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার তরফ থেকে আমরা পৌছে যাই শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র সম্প্রদায়, অভিভাবক এবং বিদ্বজনদের কাছে। আমরা জানতে পারি, কোভিড পরিস্থিতিতে স্কুল খোলা নিয়ে আর সবার মনোভাব যাই থাক না কেন, সমাজের একটা বড় অংশ কিন্তু বিদ্যালয় খোলার পক্ষেই সওয়াল করছেন। আর তার মধ্যে যে সমস্ত মানুষজন স্কুল অথবা শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি ভাবে যুক্ত, তাদের সকলেরই মনোভাব শিক্ষাঙ্গন খোলার স্বপক্ষেই।

এই বিষয়ে প্রথমেই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাঘবপুর হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক সৈকত দাসের সঙ্গে। স্কুল খোলার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলে এই বন্দিদশাকে কার্যত “বিষ সমতুল্য” বলে নিজের অভিব্যক্তি স্পষ্ট করেন তিনি। শুধু তাই নয়, ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা এই শিক্ষক আরও জানান, সর্বসাধারণ কার্যত কর্মহীনভাবে বেতন নেওয়া শিক্ষকদেরকে যে চোখেই দেখুক না কেন, নিজেদের অতিপ্রিয় বিদ্যালয়ে না যেতে পেরে কিন্তু নিজেদেরকে “জেলখানায় বন্দি কয়েদী”-র মত অনুভব করছেন তিনি।

আগামীদিনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ খুলে গেলে অতি উৎসাহের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ যে পুনরায় নিজেদের কর্মে যোগ দিতে উদগ্রীব, সেই কথা উঠে আসে তাঁর কথায়। গোটা বিষয়ে সৈকতবাবু আরও জানান, একসময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমাজে মেরুদন্ডের কাজ করতেন। তবে বর্তমানে সামাজিক কারনেই হোক অথবা শিক্ষকদের একাংশের অবহেলার কারণে, ‘নোবেল’ প্রফেশন হিসেবে খ্যাত শিক্ষকতা অনেকটাই নিজের গৌরব হারিয়েছে। কাজেই পুরনো দিনের মত, মাস্টারমশাইদের নিয়ে মন্তব্য করার আগে সর্বসাধারণ অতটা চিন্তা করেন না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সৈকতবাবুর মতে, কিন্তু তা সত্ত্বেও অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকারা কর্মচঞ্চল ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে উদগ্রীব। খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অথবা কোভিড বিধি মেনেই স্কুল খোলার নতুন পন্থা সরকার বের করলে তিনি পুনরায় মিলিত হতে চান প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে। অন্যদিকে খাদিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তমাল চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলের পঠন-পাঠন শুরু করার জন্য অনেকগুলো মাধ্যমের‌ তরফে অনলাইনের কথা বলা হলেও, তা বাস্তবিক নয়। কারণ যথেষ্ট পরিমাণে কিটসের অভাব রয়েছে। অথচ অতি শীঘ্রই অন্ততপক্ষে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পঠন-পাঠন শুরু করা উচিত‌।”

তাঁর মতে, ” আগামী দিনে এইসব ছাত্রছাত্রীদের বোর্ড পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি স্কুলের একটা পরিসর খুলে দেওয়া হয়, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের মঙ্গল হবে। পাশাপাশি শিক্ষকরাও করতে পারবেন নিজেদের কাজ।” অন্যদিকে স্কুল খোলার স্বপক্ষেই সওয়াল করতে দেখা যায় দশম শ্রেণীর ছাত্র দিবাকর রায় এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌভিক নন্দীকে। পাশাপাশি স্কুল খোলার পক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন অভিভাবিকা রত্না কর রায়। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছাত্ররা যে ক্রমেই নিজেদের পড়াশোনার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থেকে অনেকটাই দূরে সরে আসছে, সেই কথা স্পষ্ট হয় তাঁদের কথায়।

আগামী দিনে স্কুল তাড়াতাড়ি খুলে গেলে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে ছাত্রদের জীবন-যাপন, এটাই মনে করেন তাঁরা। তবে ভারতবর্ষ জুড়ে একেবারেই যে স্কুল খোলার চেষ্টা করা হয়নি, তা কিন্তু নয়। বিগত দিনে কেরলের সরকার একটি পরিসরে স্কুল খুলতে সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু সামান্য কিছু দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় গগনচুম্বী হয়ে পড়াতে, পিছপা হতে হয় পিনারাই বিজয়ন সরকারকে। আর এই ব্যাপারকেই গুরুত্ব দিয়ে এখন স্কুল খুলতে কার্যত ভীতি প্রাপ্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাজ্য সরকাররা।

তবে একটা বড় অংশের মতে, করোনা মহামারী কিন্তু আর প্রথম দিককার মত করাল অবস্থানে নেই। মৃত্যুর হারও যথেষ্ট পরিমাণে আয়ত্তে আসতে শুরু হয়েছে। বাজারে করোনা ভ্যাকসিন এবং প্রতিষেধক ওষুধ আসার সম্ভাবনাও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দেশে আনলক ফোর চলাতে সর্বসাধারণের জীবন যাপনও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে শুরু হয়েছে‌। এমতাবস্থায় কেন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকবে! সেই বিষয়ে জোর সওয়াল করতে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল ঘনিষ্ঠ বিদ্বজ্জন বালুরঘাটের সুবোধ দাসকে।

তিনি বলেন, “আইসিডিএস সেন্টারগুলো বন্ধ থাকলেও বিল্ডিং প্রাঙ্গণেই চলছে অভিভাবক, অভিভাবিকা এবং বাচ্চাদের জমায়েত। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও, পড়ুয়াদের আড্ডায় কিন্তু কমতি পড়েনি। তারা রীতিমত প্রাইভেট টিউশন যাচ্ছে, দোকান বাজার করছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে খোশগল্পে যোগ দিচ্ছে। এমনকি শিক্ষক শিক্ষিকারাও ঘনিষ্ঠ মহলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একত্রিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ রাখার গুরুত্ব কতটা, সেই বিষয় যথেষ্ট প্রশ্নের।”

সুবোধবাবুর বক্তব্য, “সংক্রমণ কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, স্কুল খুললে তার বিস্তার কতটা বেড়ে যেতে পারে, তা অবশ্যই সরকার বিবেচনা করবে। আর সেই কথা মাথায় রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু ব্যক্তিগত মতে বলছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলের মাধ্যমেই স্বাস্থ্যবিধির প্রচার করে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এবং প্রাইমারির ক্ষেত্রে দুইদিন গুটি গুটি পায়ে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে খুলে দেওয়ার সময় এবার চলে এসেছে।” তবে সৈকতবাবু থেকে শুরু করে সুবোধবাবু স্কুল খোলার স্বপক্ষে সওয়াল করলেও, করোনা মহামারীর ভয়াবহতাকে লক্ষ্য করে কিন্তু খুদে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখা গেছে অভিভাবকদের।

দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌভিক নন্দীর বাবা ভগীরথ নন্দীর মতে, আকস্মিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে স্কুল খুলতে গিয়ে যদি ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং তার কারণে যদি কোনো অভিভাবক-অভিভাবিকা সন্তানহারা হন, তাহলে কি সরকার অথবা প্রশাসন, সেই হারিয়ে যাওয়া সন্তান ফেরত দিতে পারবেন! তাই 100% নিশ্চিত হওয়ার আগে এই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। সবমিলিয়ে, করোনা আবহে শিক্ষা, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কার্যত মিশ্র মনোভাব উঠে আসছে। এখন এই দোলাচল পরিস্থিতিতে সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতই বা কি হয় – সেদিকেই আপাতত নজর থাকবে শিক্ষানুরাগী মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!