এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সরকারের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের

সরকারের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের


রাজ্যে সম্প্রতি ঘটে গেল এক নজিরবিহীন ঘটনা – যেখানে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ২ লক্ষ ৩০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের ভাতা রাজ্য-সরকার প্রথমে বাড়িয়ে, ১ মাস প্রদান করে, পরে তা কমিয়ে দেয়। গত ৩ রা নভেম্বর, প্রিয় বন্ধু মিডিয়ায় সর্বপ্রথম এই খবর প্রকাশ্যে আনে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত শোরগোল পরে যায় রাজ্য-রাজনীতিতে। কেননা, কোন সরকারি কর্মচারীর বেতন বা ভাতা একবার বেড়ে গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া তা কমানো যায় না।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ‘অনারিয়াম’ ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪,৫০০ টাকা ও সহায়িকাদের ‘অনারিয়াম’ ১,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,২৫০ টাকা করেছেন। সাধারণত কেন্দ্র এই ‘অনারিয়াম’ বাড়ালেই রাজ্য সরকার ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ বাড়িয়ে থাকে। যেহেতু, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় দেখেন এবং সহায়িকারা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিক্ষা নিতে আসা শিশুদের খাদ্য সংক্রান্ত দিকটা দেখেন – তাই কেন্দ্র সবসময়েই যে ‘অনারিয়াম’ দেয় তাতে কিছুটা পার্থক্য থাকে। কিন্তু এরপর, রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা দুজনের ক্ষেত্রেই সমপরিমাণ ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ বাড়িয়ে থাকে।

এক্ষেত্রেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ ১,০০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা গত ২৩ শে আগস্ট ঘোষণা করেন। গতমাসে বেতনে সেই টাকা দেওয়ার পরে – গত ১ লা নভেম্বর রাজ্যের জয়েন্ট সেক্রেটারি অভিজিৎ মিত্র এক নতুন নির্দেশিকায় জানিয়ে দেন – অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের এই ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ ৬০০ টাকা ও সহায়িকাদের ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ ৩০০ টাকা কমিয়ে দেওয়া হবে। বেতন বা ভাতা বৃদ্ধি করে রাজ্য সরকার তা কমিয়ে দিচ্ছেন – এ ঘটনা নজিরবিহীন। একইসঙ্গে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের ভিন্ন ভিন্ন ‘অ্যাডিশনাল অনারিয়াম’ দেওয়া হচ্ছে এই ঘটনাও নজিরবিহীন।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

এছাড়াও, ৬৫ বছর বয়স হলেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের অবসর গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। অথচ, অবসর গ্রহণকালে তাঁদের জন্য কোন এককালীন ভাতা বা কোন পেনশনের ব্যবস্থা করা নেই। অথচ, রাজ্যের বিভিন্ন কন্ট্র্যাক্টচুয়াল কর্মীদের অবসরের সময়েও এককালীন একটি ভাতার ব্যাস্থা করা আছে। ফলে সারা জীবন যাঁরা শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টির ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে সাহায্য করলেন – শেষ জীবনে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষার আশ্রয় নিতে হচ্ছে! আর তাই, এই দুই ইস্যুকে সামনে রেখে গোটা রাজ্য জুড়ে ঝড় তুলে দিলেন ‘বঞ্চিত’ ২ লক্ষ ৩০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকারা।

এই প্রসঙ্গে, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এমপ্লয়ীজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সুবীর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা মেনে নিয়ে জানান, রাজ্য সরকারের কাজ করা কোনো কর্মীর ভাতা একবার বেড়ে গিয়ে কমে যাওয়া নজিরবিহীন। তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে রাজ্যের এই বিপুল সংখ্যক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে গোটা রাজ্য জুড়ে আজ আন্দোলনে নেমেনছেন। কোথাও রাস্তা অবরোধ হয়েছে, কোথাও সিডিপিওকে ঘেরাও করা হয়েছে, কোন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে, কোথাও মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, কোথাও বা দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজার উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, কোথাও দপ্তরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, কোথাও বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে – অর্থাৎ, যত রকম ভাবে সম্ভব নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এই বিপুল সংখ্যক কর্মী।

সুবীরবাবু আরও জানান, দেখুন রাজ্যের এই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের যে বিপুল সংখ্যক মানুষ আছেন তাঁরা আজ এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত ভাবে সারা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেমেছেন। কিন্তু খুব দ্রুত তাঁদের অরাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কেননা, এই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংখ্যা রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের থেকেও বেশি এবং যেহেতু তাঁরা শিশুদের পুষ্টির মত গুরুত্ত্বপূর্ন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত – তাই তাঁদের বছরে ৩০০ দিন সেন্টার খোলা রাখতে হয়। এতো কঠিন পরিশ্রম করার পরেও – তাঁদের ভাতা বাড়িয়ে নজিরবিহীনভাবে তা কমিয়ে বঞ্চনা করা হল। এছাড়া শেষ বয়সে তাঁদের একরকম জোর করেই অবসর গ্রহণ করানো হয়, অথচ কোন এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হয় না। ফলে সকলেরই খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটে, অনেককে তো আবার ভিক্ষাবৃত্তিও করতে হয় – এই করুন পরিণতির হাত থেকে রাজ্যের ২ লক্ষ ৩০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের মুখ্যমন্ত্রী পরিত্রান না করলে, এঁরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই সংগঠিতভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হবেন।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!