এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৮

বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৮


বাড়ি গিয়ে ঘরে ঢুকে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পড়লো ধ্রুব। সীমা ঘরে ঢুকে আলো জ্বালালো – বলল এই শুয়ে পড়লি যে। জামা কাপড় ছাড়। ভিজে গেছিস তো। আমি তোর দাদাভাই এখনো খাইনি। আয় খাবার গরম করছি । আমি খাবো না বললো ধ্রুব। ভালো লাগছে না ওর। একটু একা থাকতে ইচ্ছা করছে। সীমা জোর করলো। প্রকাশ ভালো করে ধ্রুবকে দেখলো। কিছু একটা আন্দাজ করেছে। সীমাকে সে বাধা দিলো। বললো থাক। ধ্রুবকে জিজ্ঞাসা করলো কি শরীর খারাপ ? ধ্রুব বললো হুম। ঠিক আছে , জামা ছেড়ে ঘুমিয়ে পর বলে দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রকাশ আর সীমা দরজা বন্ধ করে চলে গেলো।

আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। চোখে বড্ডো লাগছে আলোটা। উঠে বন্ধ করলো। টি শার্টটা খুললো এইখানেই নীরা মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলো ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে। ধ্রুব মুখে টিশার্টটা চেপে ধরে ফের শুয়ে পড়লো। ঘরটাতেই এটাচ বাথরুম আছে। অনেক্ষন পর উঠে বাথরুমে গেলো। শাওয়ার এর নিচে দাঁড়ালো। চোখ দুটো খুব লাল হয়ে গেছে ধ্রুব।কেঁদেছে না শাওয়ারের জল লেগে লাল হয়েছে সেটা শুধু ধ্রুব জানে। যদিও আর কেই বা খোঁজ রাখছে। চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লো ধ্রুব। ঘুম এলো না। নীরার সঙ্গে কাটানো এক একটা মুহূর্ত মনে পড়লো। মনে পড়লো ধ্রুবর কাঁধে নীরার প্রথম হাত রাখা, বুকের উপর পরে জড়িয়ে ধরে কাঁদা, বাইকে বার বার গায়ে গা ঠেকা।হাত ধরা। সব কিছু। উঠে বসে পড়লো। আর ভাববে না। কিন্তু মনটা নিজের হলেও কথা শুনছে না। বার বার ঐদিকেই যাচ্ছে। মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক খুললো, না নেটের প্রব্লেম পেজ খুলছে না।ফের চোখ বুজে শুয়ে পড়লো ঘুম কিন্তু এলো না।

এদিকে নীরাও বাড়ি এসে কিছু খায়নি। ভালো লাগছে না ওর ও। নীরার ও মনে পড়ছে ধ্রুবর কথা। কত যত্ন করে নিয়ে এসেছে ধ্রুব ওকে। খুব ভদ্র ধ্রুব।নাহলে যখন নীরা ওকে জড়িয়ে ধরলো ও সুযোগ নিতে পারতো। কিছু করে নি। ভালো লাগলো। মনে হলো আচ্ছা ও কি করে বুঝলো নীরা ওই জড়িয়ে ধরার কথাটাই বলতে বারণ করবে ? কি করে না বলা কথা বুঝলো ধ্রুব। অবিনাশ তো বোঝে না। অনেক বার অনেক কথা বলেও বোঝাতে পারে না নীরা। মনে হলো আচ্ছা – অবিনাশ থাকলে কি করতো। এইভাবেই যত্ন করে নিয়ে আসতো? আসতো না আবার।মনে পড়লো ধ্রুবর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে – ঐভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো।

হঠাৎ একটা কথা মনে হওয়ায় উঠে বসে পড়লো নীরা। আচ্ছা ধ্রুব কি ওকে? দূর কি সব ভাবছে। কিন্তু ধ্রুবর চোখ দুটো। বার বার কিছু বলতে চাইছিলো ওকে ? কি বলতো। দূর পাগল নীরা। নীরার অবিনাশ আছে। শুধু তার নীরা আর কারুর নয়। ফের শুরু অবিনাশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা। কিন্তু মাঝে মাঝেই এসে পড়ছে ধ্রুব। জেগেই আছে নীরাও। দুজের চোখেই যে ঘুম নেই তা নয়, নীরা ধ্রুবর সাথে রাত জাগছে ইরাও। ইরা আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে ধ্রুব ওকে বলেছে – কাউকে বলবে না – কি বলবে না। কি হয়েছে ? ধ্রুবদাকে ভীষণ অন্যরকম লাগছিলো। দিদকেও অন্যমনস্ক। কি হয়েছে।

ইরা জিজ্ঞাসা করলো – দিদি আজকে ধ্রুবদার সাথে কিভাবে এলি বল একটু গল্প শুনি। কি কি করলি ?

নীরা – তুই ঘুমোসনি?

ইরা না , বলনা।

নীরা বললো বাইকে করে এলাম। রাস্তায় বৃষ্টি এলো দোকানে বসলাম, তারপর ফের বাড়ি এলাম।

না এত সোজা না- কিছু তো আছে। যা হোক করে সত্যিটা বের করবেই ইরা। কি হয়েছিল ভাবতে ভাবতেই সারারাত কাটলো ইরারও।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

ভোরেই বাড়ি এলেন সোমেস্বরবাবু। নীরার কালকে গল্প দেওয়া হয়নি। আজ সকালে উঠে নতুন গল্প – আলো – ছায়া পোস্ট করলো। ইরা নানা উপায় খুঁজতে লাগলো কি করে সত্যিটা বের করবে? ধ্রুব উঠলো একটু বেলা করেই। আজ রবিবার প্রকাশ বাড়ি আছে। আজকে নীরার মা ওদের বাড়ি দুপুরে খেতে বলেছেন সকলকে। তাই লাঞ্চের ঝামেলা নেই সীমাও ফ্রি।

প্রকাশ ধ্রুবকে বললো – ঘুম হয়নি ?

ধ্রুব চমকে তাকালো। তার মনের তোলপাড় চেহারাতেও পড়েছে? না হয়েছে কেন?- বললো ধ্রুব।

প্রকাশ বললো – না জিজ্ঞাসা করছি , লোকে প্রথম প্রেমে পড়লে যেমন দেখায় তোমাকেও ঠিক তেমন দেখাচ্ছে ।

প্রকাশ দেখতে একটু মোটাসোটা। কিন্তু খুব সাদামাটা মানুষ। খুব রসিক লোক। খুব সহজে মন জয় করে নিতে পারে। ধ্রুবর সাথে জমেও ভালো – ধ্রুবর কাছে দাদাভাই কম – বন্ধু বেশি।

দূর এত বাজে বকো না উত্তর দিলো ধ্রুব।

সীমা হো হো করে হেসে উঠলো। বললো যদি সেটা হয় তাহলে তো এখুনি বিয়ে দিয়ে দিই।

প্রকাশ বললো –  নাও চা খাও। প্রকাশ ধরেছে ঠিকই , কিন্তু প্রকাশ ভেবেছিলো ইরা। নীরার কথা তার স্বপ্নেও মনে আসেনি। প্রকাশ ঠিক করে রেখেছে। বয়েসের তফাৎটা একটু বেশি হয়ে যাবে কিন্তু মেয়ে তো খারাপ নয়।নীরার বিয়ে হলেই সোমেস্বরবাবুকে ধরবে। সীমা সাদামাটা মানুষ এত কিছু বোঝে না। সে শুধু সিরিয়াল আর মেয়ে , সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। চা খেতে খেতে ধ্রুবকে আপদমস্তক মাপছে প্রকাশ।

বুঝতে পেরেই ঘরে যাচ্ছি বলে চলে গেলো ধ্রুব।

প্রকাশ মনে মনে বললো -দাড়াও তোমার ব্যাবস্থা করছি।

সাবধানে থাকতে হবে দাদাভাইয়ের থেকে ভাবতে ভাবতে ফেইসবুক খুলে ধ্রুব দেখলো ‘ স্বপ্নের চোখে নতুন গল্প – পড়লো পুরোটা। এটাও খুব ভালো। বাকিটা আবার কখন দেবে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখলো নীরা চুল ঝাড়ছে বারান্দায়, আর নয়। জানলাটা বন্ধ করে দিলো। ফের খুললো তখন আর নেই নীরা।

এদিকে নীরা স্নান করে ফের গল্পের বাকি অংশ লিখতে বসেছে। আজকে সীমারা ওদের বাড়িতে আসবে দুপুরে। মা রান্না করছে। মেয়েদের তিনি রান্নাঘরে ঘেঁষতে দেন না হাত পুড়িয়ে ফেলবে। ফলে বাড়ি গোছগাছ করে নিয়েছে। দুপুরে লেখার সময় পাবে না তাই এখনই লিখতে বসলো। ইরার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সত্যিটা এখনো উদ্ধার করতে পারলো না। একমনে কম্পিউটারে টাইপ করে যাচ্ছে নীরা। হঠাৎ ইরার মাথায় একটা দুর্বুদ্ধি খেলে গেলো।

ইরা একটু গম্ভীর হয়ে বললো – কাল আমার এক বন্ধু তোকে আর ধ্রুবদাকে দেখেছে। তোরা কিকরে পারলি ওটা করতে দিদি?

নীরার মাথায় বাজ পড়লো। হাত থেমে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বললো কি কি ক…..রেছি আমরা ?

তুই বল তোর মুখ থেকে একবার শুনি। আমি যা জেনেছি সেটার কি ব্যাখ্যা দিস তুই ?  খুব রেগে বললো ইরা।

ভয়ে, কাঁদো কাঁদো হয়ে নীরা বললো বিশ্বাস কর? আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমি ইচ্ছা করে জড়িয়ে ধরিনি ধ্রুবকে। আর ওই লোকটাও কেমনভাবে দেখছিলো তাই ধ্রুবর পাশে ঐভাবে বসেছিলাম।

কি ?……….জড়িয়ে ধরেছিলি? কেন? বলে চেঁচালো ইরা।

ইরা চুপ কর – এবার সব কিছু নীরা খুলে বললো ইরাকে।

ইরার টোটকা কাজ করেছে। বিছানায় হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ইরা।

তোর বন্ধু কি বলেছে তোকে ? ভয়ে ভয়ে বললো নীরা ।

কে বন্ধু? কেউ কিছু বলেনি। তোর মুখ থেকে বের করার জন্য ওটা বললাম বললো ইরা।

ইরা! বলে জোরে চেঁচালো নীরা। চেঁচাবিনা,মাকে বলে দেব বললো ইরা।

নীরা বরাবরই ভীতু , কাউকে বলিসনা প্লিজ , ধ্রুবও কাউকে বলবেনা বলেছে বললো নীরা।ইরা জানালো ও বলবে না কাউকে। নীরার অনেক কথা জানে ইরা কাউকে বলেনি। নীরা আবার লেখায় মন দিতে লাগলো। লিখতে পারছে না। কম্পিউটার ঐভাবেই রেখে উঠে পড়লো।

কিছুক্ষন পর ধ্রুবরা এলো।

ইরা নিচেই ছিল ধ্রুবকে বললো কি করবে এখানে? চলো উপরে দিদি আছে , আমি আছি আমাদের ঘর দেখবে।

প্রকাশ দুজনকে দেখে বোঝার চেষ্টা করলো আগুন দুদিকেই লেগেছে নাকি একদিকে। বুঝলো না। তার আগেই সোমেস্বরবাবু ও তাঁর স্ত্রী নীরার বিয়ের গল্প জুড়লেন। সোমেস্বরবাবুকে প্রণাম করে উপরে গেলো ধ্রুব। দোতালায় নিজের ঘরেই ছিল নীরা। হঠাৎ আলমারির মাথা থেকে একটা পুরোনো খাতা বের করতে টুলের উপরে উঠলো নীরা। নীরা জানে না ধ্রুব এসে গেছে। খেয়াল করেনি।

ঘরে ঢুকেই ইরা চেঁচালো দিদি পড়বি যে ? চমকে পিছনে তাকাতেই টুলটা হড়কে গেলো ব্যালেন্স হারিয়ে নীরা পরে যাচ্ছিলো ছুটে গিয়ে ধ্রুব ধরে ফেললো। নীরা ধ্রুবর দুই হাতেই মধ্যে ঝুলছে। ইরা বকা খাওয়ার ভয়ে ঘর থেকে ছুটে পালালো। নীরাকে নামিয়ে দিলো ধ্রুব। একটু সরে দাঁড়ালো নীরা।

কি দরকার ছিল এখন টুলেওঠার ? পরে যেতে তো। কি চাই বলো আমি নামিয়ে দিচ্ছি। বললো ধ্রুব।

নীরা বললো এমন কিছু দরকারি নয়। বসুন – বলে বিছানাটা দেখিয়ে দিলো। ধ্রুব বসলো।

নীরা বললো আপনার কি জ্বর এসেছে? হাতটা খুব গরম লাগলো।

ধ্রুব বললো জানিনা।

নীরা কপালে হাত দিয়ে দেখলো – জ্বর এসেছে। নীরা কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখবে আশা করেনি ধ্রুবও।  একটা ক্রোসিন ট্যাবলেট আর জলের বোতল ধরলো ধ্রুবর সামনে।

আস্তে আস্তে বললো – খেয়ে নিন। ঠিক হয়ে যাবে। খেলো ধ্রুব।

কিন্তু নিজেকে আর সামলাতে পারলো না ধ্রুব। নীরার হাত দুটো ধরে বললো – নীরা আমি,  আমি তো…… নীরাও বোধ হয় বুঝতে পেরেছে কি বলতে চাইছে ধ্রুব।

কথাটা শেষ করতে না দিয়েই নীরা হাত ছাড়িয়ে বললো অবি,অবিনাশের সাথে আমার বিয়ে, আপনি চেনেন তো ? থাকবেন তো বিয়েতে ? আমাদের খুব ভালো লাগবে।

কি করতে যাচ্ছিলো ধ্রুব। সামলে নিয়ে বললো হুম থাকবো।

এবার নীরা আর দাঁড়ালো না। এতকিছুর মাঝে জড়িয়ে ধরার জন্য ক্ষমা চাওয়াও হলো না। বললো আপনি বসুন আমি সীমাদিদের সাথে দেখা করে আসি। ইরাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ইরা আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো সে, এবার ছুটলো সিঁড়ির দিকে। ফের ঘুরে গিয়ে এমন ভান করলো যেন এই মাত্র সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। নীরা দেখলো ইরা আসছে। ঘরে ইরাকে পাঠিয়ে নিচে নেমে গেলো।

না আর থাকবে না  ধ্রুব এখানে। কিছুতেই নয় , কালকেই ফিরে যাবে। অফিস এ মেইল করবে। সামনের উইক থেকেই জয়েন করবে। মোবাইল খুললো মেইল করার জন্য। নেট নেই। কম্পিউটারটা চোখে পড়লো।

 

ইরা ঘরে এসেছে। ইরাকে জিজ্ঞাসা করলো নেট আছে কিনা ? ওদের কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে কিনা। ইরা সম্মতি জানালো। কম্পিউটার খুলতেই ধ্রুবর চোখে পড়লো গল্প লেখা অর্ধেকটা। একটু পরে বুঝলো স্বপ্নের চোখে যে নতুন গল্পটা শুরু হয়েছে সেটার পরের অংশ। পাশেই অন্য ট্যাব এ খোলা ফেইসবুক পেজ। স্বপ্নের চোখ। দেখলো অ্যাডমিন পেজ এটা । হোম এ নীরার পিকচার দেখাচ্ছে। সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেলো ধ্রুবর কাছে। ইরাকে ডাকলো। ইরা ফেইসবুক পেজ দেখে একটু আমতা আমতা করে বললো – দেখো স্বপ্নের চোখ দিদির পেজ।দিদিই সব গল্প লেখে কিন্তু আমি বললে মেরে ফেলবে। তাই বলিনি।দিদিই চায় না কেউ জানুক, ও লুকিয়ে থাকতেই ভালোবাসে। প্লিজ তুমিও দিদিকে বোলো না।

ধ্রুব জানালো বলবে না।

নিচে থেকে ইরার ডাক এলো।

ধ্রুব ততক্ষন জি মেইল খুলে মেইল পাঠিয়ে দিলো নতুন অফিসে।

খাওয়া দাওয়া শুরু হলো। কিভাবে কাল ধ্রুব উদ্ধার করেছে নীরাকে সেই কথা তুলে ধ্রুবকে বার বার সোমেস্বরবাবু ও অতসীদেবী ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন। খাওয়ায় মন নেই ধ্রুবর , নীরার বিয়ের কথা হচ্ছে বেশিরভাগটাই , সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ধ্রুবর বুকে তীরের মতো বিঁধছে কথাগুলো। কোনো মতে খেয়ে উঠে বাড়ি ফিরে বাঁচতে চাইছে। ইরা – ধ্রুব আর নীরাকে মাপছিলো , অন্যদিকে প্রকাশ – ইরা আর ধ্রুবকে। কথা প্রসঙ্গে উঠলো- অবিনাশের দিদি ফোন করেছিল, পরশু শাড়ী কিনতে যেতে বলেছে। ইরা লক্ষ্য করলো কথাটা শোনার সাথে সাথেই খাওয়াটা থামিয়ে দিলো ধ্রুব। প্রকাশ লক্ষ্য করছে ইরা ধ্রুবকে বার বার দেখছে। ভালোই হচ্ছে।

হঠাৎ ইরা বলে উঠলো। খাওয়া থামালে যে ধ্রুবদা? তুমিও চলো আমাদের সঙ্গে।

প্রকাশ ভাবলো বাহ্ এতদূর জমেছে। দিদির বিয়ের শাড়ী কিনবে তাতেও ধ্রুবকে চাই। ভালো।

না খাচ্ছি তো ? আমি যেতে পারবো না ইরা সরি, আমি কাল ব্যাক করছি, সামনের উইকে আমাকে অফিস জয়েন করতে হবে বললো ধ্রুব।

নীরা কুঁড়িকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। কথাটা শুনে থেমে গেলো হাতটা। ইরার চোখ এড়ালো না।

ইরা বললো চলে যাবে মানে? দিদির বিয়েতে আসবে তো।

নীরার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ধ্রুব বললো হুম।

সীমা – এমা ,তুই যে বললো একসপ্তাহ থাকবি। কাল চলে যাবি বলিস নিতো।

ধ্রুব – না কাজ এসে গেছে , যেতেই হবে।

প্রকাশের এটা মাথায় ঢুকলো না। আমি ধরে ফেলেছি বলেই কি শালাবাবু পালাচ্ছে?  এই সব নিয়েই খাওয়া শেষ হলো। বাড়ি এলো ধ্রুবরা।

নীরার মনটা খারাপ হয়ে গেলো হটাৎ করে , কেন? বুঝতে পারছে না। ইরার ও তাই। ইসশ সব জেনেও কিছু করতে পারছে না। প্রকাশদাকে বলবে, এক ভাইয়ের জন্য অন্য ভাইয়ের কাছে খারাপ হবে কি ? তাছাড়া ধ্রুবদা তো স্বীকার করছে না। এদিকে বিয়েরদিনও কাছে চলে আসছে। …. কি যে করে ?শেষ চেষ্টা করবেই।  ধ্রুব বাড়ি যাবার আগেই ধ্রুবকে ধরবেই। যে করেই হোক।

ধ্রুবর মন ভালো নেই। কাল চলে যাবে। বিয়েতে আসবে না সেটা নিজেও জানে। আর কোনোদিনই দেখা হবে না নীরার সাথে। মনে হলো নীরার লেখাগুলোতো পড়তে পারবে। সেটাও কম কি ? এতদিন তো খালি ভাবতো এত সুন্দর গল্প কে লেখে? দেখতে কেমন? কে সে? এখন তো জানে। সেটা নিয়েই কাটাবে সারাজীবন।

নীরা ভাবছে কি বলতে যাচ্ছিলো ধ্রুব। সত্যি কি ধ্রুব নীরাকে ? কি করে ? ধ্রুব জানে নীরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। নীরার মন জুড়ে শুধুই অনিমেষ। আর কাউকে নীরা বসতে দেবে না। কিছুতেই না। ভাববে না ধ্রুবর কোনো কথা।

 

আগের পর্ব –  বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৭

 

 

পরের পর্ব – বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা – কলমে – অপরাজিতা – পর্ব ৯

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!