এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > পে-কমিশন নিয়ে রাজ্য সরকারের ঘুম ওড়াতে আগামীকাল বৃহত্তর আন্দোলনের পথে সরকারি কর্মচারীরা

পে-কমিশন নিয়ে রাজ্য সরকারের ঘুম ওড়াতে আগামীকাল বৃহত্তর আন্দোলনের পথে সরকারি কর্মচারীরা

বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন তৎকালীন শাসকদল বামফ্রন্টকে বিঁধে, সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, যে সরকার সরকারি কর্মীদের পাওনা-গন্ডা মেটাতে পারে না, তাদের একমুহূর্তও সরকারে থকাৰ অধিকার নেই। তিনি প্রতিশ্রুতি দিতেন, আর তো মাত্র কয়েকটা দিন, কষ্ট করে মানিয়ে নিন, তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় এলেই, আপনাদের সব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রেখে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরা দুহাত ভোরে তাঁকে সমর্থন করে তাঁকে ২০১১ সালে শাসকের আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

কিন্তু, শাসকের আসনে বসার পর নিজের প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখা তো দূরের কথা, সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের বঞ্চনা বাম আমলকেও ছাড়িয়ে গিয়ে চরমে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে ডিএর ফারাক কখনও ৪৯%, তো কখনও ৫৬% পর্যন্ত হয়েছে। সময়ে ডিএ তো দূরের কথা, উল্টে ডিএর দাবিকে ‘ঘেউ ঘেউ’ করা বলে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এমনকি, এই ন্যায্য ডিএ দেওয়া আটকাতে আদালতে ‘দীর্ঘসূত্রিতার ফর্মুলা’ নিয়েছেন সরকারি আইনজীবীরা বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তবে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুধু ডিএ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগই নয়, সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক মহল থেকে পে কমিশন নিয়েও দীর্ঘ বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর আমলেই সারা ভারতের সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ষষ্ঠ পে কমিশন কমিটি চার বছর পূর্ণ করতে চলেছে। আর এই ডিএ ও পে কমিশনের ক্ষোভ সরকারি কর্মচারীরা এবার উগরে দিয়েছেন ইভিএমে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র পোস্টাল ব্যালটের হিসাবে দেখা গেছে, বাংলার ৪২ টি আসনের মধ্যে ৪১ আসনেই পিছিয়ে আছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।

আর, এই ফলাফলের পরে সকলেই ভেবেছিলেন, রাজ্য সরকার এবার বোধহয় পে কমিশন নিয়ে কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু, কোথায় কি? লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হতেই পে কমিশনের মেয়াদ আরও ৭ মাসের জন্য বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আরও ক্ষোভের জায়গা, একে তো ন্যায্য বকেয়া ডিএ বা পে কমিশন মিলছে না, টের উপরে এই নিয়ে প্রতিবাদ করলে রাজ্য সরকার শুরু করেছে ‘বদলি সন্ত্রাস’! কোনো সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষক এই নিয়ে কোনো ক্ষোভ দেখলে বা আন্দোলন করলেই তাঁদের দূরবর্তী প্রত্যন্ত জেলাতে বদলি করে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও সরকারি কর্মচারী মহলে অভিযোগ উঠেছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু, এতসবের পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, পে কমিশনের রিপোর্টই জমা পরে নি, তাই তিনি পে কমিশন দিতে পারেননি। সেই রিপোর্ট জমা পড়লেই নাকি তাঁর সরকার পে কমিশন নিয়ে বিবেচনা করে দেখত! যদিও, কলকাতার এক সংবাদমাধ্যমকে পে কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার জানিয়েছেন, তিনি কোনো সময় নাকি পে কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা জানান নি, সরকারই নিজে থেকে মেয়াদ বৃদ্ধি করে করে তা চার বছরে নিয়ে গেছে! আর এরপরেই সরকারি মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বিগত দিনে দেখা গেছে পে কমিশন ঘোষণা হয়ে তা বেতন আকারে নির্ধারিত হতে ৬ মাস সময় নিয়েছে।

বর্তমান পে কমিশন সেখানে চার বছর পূর্ণ করতে চলেছে, অর্থাৎ এই পে-কমিশন দেখতে গেলে একদিক থেকে ‘অকর্মন্য ও অযোগ্য’! কিন্তু, এই পে-কমিশনকে নির্বাচিত করেছেন তো মুখ্যমন্ত্রীই! তাই যদি চার বছরেও সেই পে কমিশন রিপোর্ট জমা দিতে না পারে, মুখ্যমন্ত্রী কেন সেই পে-কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আর যদি অভিরূপবাবুর দাবিই সত্যি হয়, তিনি তাহলে কেন জানাচ্ছেন না যে তাঁর রিপোর্ট তৈরী? সরকার যেদিন বলবে সেদিনই তিনি জমা দিয়ে দেবেন সেই রিপোর্ট? কেন, এইভাবে দিনের পর দিন বঞ্চিত হতে হবে সরকারি কর্মচারীদের – এইসব প্রশ্নই কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে সরকারি কর্মীদের মধ্যে।

আর এবার তাই, পে-কমিশনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাটতে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীল জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হতে হতে সরকারি কর্মচারীদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে গেছে। তাই, এবার নিজেদের ন্যায্য পে-কমিশনের দাবিতে আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথে হাঁটতে চলেছি। মুখ্যমন্ত্রী তো জানিয়েই দিয়েছেন, পে-কমিশনের রিপোর্ট জমা পরে নি, তাই তিনি এই ব্যাপারে কিছু করতে পারছেন না। তাই, আর এক মুহূর্তও দেরী না করে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় ১.১.২০১৬ থেকে নয়া বেতন কাঠামো নগদে প্রদানের সুপারিশ করার দাবীতে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে এবার।

দেবাশীষবাবু আরও জানান, পে-কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারকে একটি চিঠি দিয়ে, সরকারি কর্মচারীদের তরফে জানানো হবে, যে তিনি যেন এখনই উপরে উল্লিখিত সুপারিশ জমা দেন, অন্যথায় চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবিলম্বে ইস্তফা দেন। সারা ভারতে আর্থিক ভাবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এই রাজ্যের সরকারী কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টদের কথা ভেবে আমাদের এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো রাস্তা খোলা রাখে নি বর্তমান পে-কমিশন। আর তাই, আগামীকাল সরকারী কর্মচারী পরিষদের ডাকে “পে কমিশন দপ্তর চলো” কর্মসূচী পালন করা হবে। বিধাননগর করুণাময়ী মোড় থেকে দুপুর ২ টোয় রাজ্য সরকারী কর্মচারী ও রাজ্য সরকার পোষিত কর্মচারী বন্ধুদের সম্মিলিত শৃঙ্খলাবদ্ধ মিছিল বিকাশ ভবনের দিকে এগোবে। আমরা এবার সরকারি কর্মচারীদের জন্য পে-কমিশন আদায় করেই ছাড়বো।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!