এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > উপনির্বাচন সাফল্যের চূড়া থেকে আছড়ে ফেলেছে মাটিতে! ময়নাতদন্তে বিজেপি বসছে কাল

উপনির্বাচন সাফল্যের চূড়া থেকে আছড়ে ফেলেছে মাটিতে! ময়নাতদন্তে বিজেপি বসছে কাল

এ যেন চার পায়ে এগিয়ে, দশ পা পিছিয়ে যাওয়া। 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে 18 টি আসন পাওয়া বিজেপি 6 মাস পেরোতে না পেরোতেই তাদের সাফল্যের বেলুন থেকে হাওয়া বের করে দিল। হ্যাঁ, বিজেপিই তাদের সাফল্যের বেলুন থেকে হাওয়া বের করে দিয়েছে। কেননা নিজেদের কিছু ভুলের জন্যই ভারতীয় জনতা পার্টির এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে পরাজয় হয়েছে বলে দাবি করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু কী সেই কারণ!

লোকসভায় সাফল্য পেয়ে বিধানসভাকে যখন টার্গেট করেছিল বিজেপি, ঠিক তখন এই 3 বিধানসভা উপনির্বাচনে তাদের পরাজয় কি আগামী 2021 এর আগে তাদের বড়সড় ধাক্কা দিল না? অনেকে বলছেন, যা হওয়ার তা হয়েছে। কিন্তু এবার এই ফলাফল কেন হল, তা নিয়ে রাজ্যস্তরে পর্যালোচনা বৈঠক করতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, আজ সংসদের অধিবেশন শেষ – এরপর রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ কলকাতায় রওনা দেবেন। আর তারপরই আগামী কাল শনিবার এই উপনির্বাচনের ভরাডুবির পোস্টমর্টেম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

যেখানে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ সাধারণ সম্পাদক শিবপ্রকাশ, দলের সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি সহ অন্যান্যরা। আর এই বৈঠক থেকেই একদিকে যেমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে, ঠিক তেমনই কেন এই হার হল, তার ব্যাপারে বিস্তারিত কাটাছেঁড়া করা হবে বলে খবর। ইতিমধ্যেই তৃণমূল এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি হাওয়া যে আর রাজ্যে নেই, তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

কেননা কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা বিজেপির দখলে ছিল প্রচুর ভোটের ব্যবধানে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হওয়া বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী কালিয়াগঞ্জ থেকে ব্যাপক পরিমাণে লিড পেয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভার ফলাফলের 6 মাস পেরোতে না পেরোতেই কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকার দুই হাজারের বেশি কিছু ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় বিজেপির ভূমিকা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

অনেকে বলছেন, এখানে এনআরসি ইস্যুকে বিজেপি ঠিকমতো মোকাবিলা করতে পারেনি। আর তার ফলেই তাদের এই হার হয়েছে। কিন্তু তার জন্য কি বিজেপির নেতৃত্ব দায়ী নয়? এখন সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরে। অন্যদিকে 2016 সালে খড়্গপুরে জয়লাভ করেছিলেন বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লোকসভাতে সেই লিড বাড়িয়ে নিয়েছিলেন ৪৫ হাজারে। ফলে তার ছেড়ে যাওয়া এই কেন্দ্রে বিজেপি অনায়াসেই জয়লাভ করবে বলে মনে করেছিল একাংশ।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু প্রথম থেকেই প্রার্থী নিয়ে বিজেপির অন্দরে তীব্র মতানৈক্য প্রকাশ্যে আসে। দিলীপবাবু সভাপতি থাকায়, ঘনিষ্ট প্রেমচাঁদ ঝাকে তিনি প্রার্থী করতে সক্ষম হন। আর প্রেমচাঁদবাবুর সেনাপতি হিসেবে এই কেন্দ্রে ব্যাপক প্রচার করেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। তবে যে দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে খড়গপুর থেকে ব্যাপক লিড নিয়েছিলেন, তাঁর ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই সেই খড়্গপুরে বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূলেরই জয়লাভ আদতে দিলীপ ঘোষেরই হার বলে মনে করছে একাংশ।

এদিকে করিমপুর প্রথম থেকেই তৃণমূলের সেফ সিট হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার আক্রান্ত হওয়ায় মানুষ বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেছিল একাংশ। এমনকি বিজেপি নেতাদের কথায় খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জের পাশাপাশি করিমপুর তাদের দখলে আসবে বলে উঠে এসেছিল। তবে শেষপর্যন্ত সেখানেও কার্যত ধূলিসাৎ হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।

আর এই পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের রণকৌশলের অভাবের জন্য তাদের হারতে হয়েছে – বলেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে দলের একাংশ। পাশাপাশি শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকেও এই ব্যাপারে গেরুয়া হাওয়া স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপিকে কটাক্ষ করার পালা শুরু হয়েছে। তবে ফল খারাপ হলে যে বসে থাকলে চলবে না, তা মাথায় নিয়ে এবার কেন এই ফলাফল খারাপ হল! তার ব্যাপারে ময়নাতদন্তে বসতে চলেছে গেরুয়া শিবির। সূত্রের খবর, আগামীকাল বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের এই যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

এদিন এই বৈঠক প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “শনিবার নিজেদের মধ্যে বসে পরাজয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি পরবর্তী ‘রাজনৈতিক কৌশল’ স্থির হবে। জনতার রায় আমরা মাথা পেতে নিচ্ছি। দলের রাজ্য সভাপতিও দৃঢ়তার সঙ্গেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া খড়গপুর আসনে হার নিয়ে বিরোধীদের একাংশের তরফে যে রব তোলা হচ্ছে, তাহলে লোকসভা ভোটে রাজ্য মন্ত্রিসভার যে 13 সদস্য হেরে গিয়েছিলেন, তারা কি পদত্যাগ করেছেন!”

তবে সায়ন্তনবাবু যে কথাই বলুন না কেন, বিধানসভাকে টার্গেট করা বিজেপি এই উপনির্বাচনের ফলাফলের ফলে যে কিছুটা হলেও স্তিমিত, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। রাজ্য জুড়ে যে গেরুয়া হাওয়া চলছিল – তা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল। রীতিমত মুষড়ে পড়েছেন বিজেপি সমর্থকরা! আর এই পরিস্থিতি থেকে যত তাড়াতাড়ি নিজেদের বের করে আনতে পারবে বিজেপি, ততই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। নাহলে, বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত তৃণমূলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন ছাড়া উপায় থাকবে না বলেই মনে করছেন গেরুয়া সমর্থকরা।

সব মিলিয়ে উপ-নির্বাচনে সাফল্য না পাওয়া গেরুয়া শিবির নিজেদের অন্দরমহলের বৈঠকে চর্চা করে কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। বিশেষ করে এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হয় কিনা – সেদিকেই বিশেষ নজর থাকছে। কেননা গেরুয়া শিবিরের একাংশ মনে করছেন – তৃণমূলের প্রচারের মোকাবিলায় করতে পারেননি বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচনে মোদী-হাওয়ায় কিছুটা ভালো ফল হলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখ দ্রুত সামনে না আনলে – বিধানসভায় ভরাডুবি হওয়া নাকি সময়ের অপেক্ষা!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!