এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > ছিঃ ছিঃ, ধর্ষকের পাশে মমতার সরকার? শুভেন্দুর মন্ত্রেই বাজিমাত শঙ্কুর! বেসামাল নবান্ন!

ছিঃ ছিঃ, ধর্ষকের পাশে মমতার সরকার? শুভেন্দুর মন্ত্রেই বাজিমাত শঙ্কুর! বেসামাল নবান্ন!


 

প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- 2013 সালে এক নারকীয় ধর্ষন এবং হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় বাংলার কামদুনিতে। যার ভয়াবহতায় সিউড়ে উঠেছিলেন বাংলার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই সময় অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ফাস্টট্র্যাক কোর্ট গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া চলবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার সম্পূর্ণ রূপে ব্যাবস্থা করা হবে। কোনো অভিযুক্ত যেন ছাড়া না পায়, সেই বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখা হবে।” কিন্তু সম্প্রতি মহামান্য উচ্চ আদালত কামদুনি কান্ডের রায় দিয়েছেন। যাতে একজনকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়নি। দুইজনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে। আর এই নিয়েই সর্বত্র প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় শিরোধার্য। কিন্তু একথা প্রত্যেকেই জানে, আইন অন্ধ, বিচারকে অবলম্বন করেই সে এগিয়ে চলে। আইনকে অক্সিজেন যোগায় প্রমান এবং সাক্মী। আর সেই সাক্ষ্য প্রমাণ যোগার করার কাজ করে রাজ্যের পুলিশ। যার নিয়ন্ত্রক স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, নিম্ন আদালতের পর কোলকাতা হাইকোর্টে যেদিন রায়দান পর্ব হয়, সেইদিন কোর্টের বাইরে স্বজনহারা কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার এবং পরিজনদের বুকফাটা কান্না বাংলা দেখেছে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা থাকলেও এত ভয়ানক কান্ডের এত লঘু শাস্তি হয়ত আশা করেনি বাংলার কোনো নাগরিক। তাহলে গলদটা কোথায় থেকে গেল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন অভিযুক্তকে ফাঁসির তক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে প্রশাসন এবং তদন্তকারীকে যে পরিমাণ কালঘাম ছোটাতে হয়, বাংলার পুলিশ, তদন্তকারী অফিসারগন এবং দন্ডমূলের কর্ত্রী তার সিকিভাগও করেননি। কোনো এক অদৃশ্য লোভে হয়ত মামলাকে শিথিল করে দেওয়ার মধ্যেই নিজেদের মঙ্গল খুঁজে পেয়েছিলেন কর্তা ব্যক্তিরা। যার কারণেই হয়ত প্রকৃত বিচার পেলেন না মৃত নির্যাতিতা হতভাগিনী।

বস্তুত, কামদুনি কান্ডের রায়দানের পরেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল বাংলার বিচার প্রার্থী মানুষেরা। প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল, রাজ্যের বিরোধী দল এবং তাদের দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর প্রশ্নের বিষয় সেই একটাই ঘটনার পর যে মুখ্যমন্ত্রী লম্বা চওড়া ভাষন দিয়েছিলেন, ফলাফলের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশ্বাস এমন বুমেরাং হলো কি করে? তাই বলে শুধু অভিযোগ করে থেমে থাকেননি বিরোধী দলনেতা। তার উদ্যোগে নির্যাতিতার পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া নাড়েন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিশ্লেষণ সামনে এসেছে। যেখানে হাইকোর্টের রায়ের ওপরে স্থগিতাদেশ দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত, এটা ঠিক।

কিন্তু অভিযুক্তরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে এবং শীর্ষ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওপরে যেন কড়া নজরদারি রাখা হয়, সেই বিষয়ে সুনিশ্চিত করেছে সর্বোচ্চ আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষনে সম্পূর্ণ খুশি নয় ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপির অন্যতম নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ তদন্ত এবং নজরদারি যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অধীনে হয়, তাহলেই প্রকৃত বিচার পাবেন মৃতা নির্যাতিতার পরিবার। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষন রীতিমতো ঝামা ঘষে দিয়েছে রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা এবং প্রশাসনের সর্বধিনায়িকার মুখে।‌

গোটা রাজ্যের মানুষ দেখছেন, যেখানেই সরকারের কাছ থেকে হতাশ হচ্ছে রাজ্যবাসী, সেখানেই পরিত্রাতার ভূমিকায় হাজির হচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংঘর্ষ ভোটেই হোক বা কোর্টে, তৃনমূলের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী যেন একাই একশো। আর এবার এই স্পর্শকাতর বিষয়ে যেখানে সরকারের ভূমিকায় হতাশ সর্বস্তরের মানুষ, সেখানে দিল্লিতে নিজের দূত শঙ্কুকে পাঠিয়ে বিচারপ্রার্থীদের শেষ আশা যেভাবে বাঁচিয়ে দিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক, তাতে করে সকলেই বলছে, কোর্টকে নাড়িয়ে, দিল্লিকে নাড়িয়ে মমতাকে কি করে টাইট দিতে হয়, তা হাতেনাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এখন তার এই পদক্ষেপে যদি সত্যিই আশা মোতাবেক ফল হয়, তাহলে নবান্নে ভূমিকম্প আসা দেওয়ালের লিখন। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য তেমনটাই বলছেন।

বিরোধীদের মতে, রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা তো তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালনই করেননি। যার কারণে বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন দুজন বড়সড় অভিযুক্ত। আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তাদের তদন্ত যে সঠিক, সেই বিষয়ে রীতিমতো সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। কাজেই এটা স্পষ্ট, প্রশাসন কার পক্ষে রয়েছে? নির্যাতিতার পক্ষে, নাকি অভিযুক্তদের পক্ষে? এই কারনেই শঙ্কুদেব পন্ডা বলছেন, এখন ঘোমটার নিচে খ্যামটা নাচা বন্ধ করে সরাসরি অভিযুক্তদের হয়ে মাঠে নামুক রাজ্য সরকার, যাতে করে তারা আরও ভালোভাবেই বেকসুর খালাস পেয়ে যায় এবং নির্দিধায় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গোটা ঘটনাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষনের রাজনীতি বলেই ধরছে বাংলার সাধারণ মানুষ। একটা নির্দিষ্ট ভোটব্যাংকেকে খুশি করার জন্য অতি জঘন্য অপরাধকেও প্রশ্রয় দিতে পারেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

অনেকে তো আবার এটাও বলছেন, যত বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার মত অপরাধী রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই তো তৃনমূল দলের সদস্য। দলের ছোট, মেজো এমনকি শীর্ষ নেতাদের ওপরেও আদালতের নির্দেশে নজরদারি চলছে, যাতে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন। এখন চোরে চোরে যদি মাসতুতো ভাই হয়, তার মধ্যে অপরাধের কি রয়েছে? তবে যে যাই বলুক, কামদুনি কান্ডের এই নয়া মোড় তৃনমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তির ওপরে একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। তারা ভদ্রলোকের সরকার বলে পরিচিত হবেন, নাকি সমাজবিরোধীদের জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হবেন? পরিশেষে এই ঘটনাক্রম আগামী দিনে কি আকৃতি ধারণ করে, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!