আমপানে ক্ষতিপূরণ! দুর্নীতিতে রাশ টানা যাচ্ছে না, দ্বিতীয় দফাতেও ভুয়ো আবেদনপত্রের পাহাড়! রাজ্য August 18, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – অম্ফান ক্ষতিপূরণের দ্বিতীয় দফার তালিকায় প্রকৃত তদন্ত করতে গিয়ে সরকারের ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় অবস্থা’ তালিকা থেকে বাদ গেল বহু ভুয়ো আবেদনকারীর নাম। পড়ুন বিস্তারিত —, গত মে মাসে রাজ্যে ধেয়ে আসে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। যে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন বহু মানুষ। রাজ্যের দুর্গতি লক্ষ করে রাজ্য সরকারকে এক হাজার কোটি টাকা অর্থসাহায্য বরাদ্দ করেন প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর আম্ফান ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকার কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ঝড়ের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা বসতবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়া দুর্গতদের অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করতে নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। প্রথম দফায় বেশকিছু মানুষ সরকারের অর্থ সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদল সহ বেশকিছু মহলের অভিযোগ ছিল প্রথম দফার এই অর্থ সাহার্যের তালিকায় অনেক ভুয়ো ব্যক্তি কিংবা সচ্ছল ব্যক্তির নাম এসে গেছে। যাদের সাহায্যের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাদ পড়েছেন বেশ কিছুমানুষ, যাদের প্রকৃত সাহায্যের প্রয়জন আছে। এই অভিযোগের দ্বিতীয় দফায় সরকারকে অনেকটা সাবধানী পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছিল। জমা পড়া আবেদন গুলি সরকার যাচাই করে তবেই অর্থ সাহায্য দানে প্রস্তুত হয়। প্রসঙ্গত বেশ কিছুদিন আগেই অনেক দ্বিতীয় দফাতে অর্থ সাহায্যের আবেদন করতে সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । বসত বাড়ি ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যাতে সরকারি সাহায্য থেকে কোন ভাবেই বঞ্চিত না হন এ কারণেই গত ৬ ই ও ৭ ই আগস্ট পুনরায় ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এ কারণে ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া সমস্ত জেলাতেই বহু আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই জমা পড়া আবেদন গুলির উপযুক্ত তদন্ত করা হয়েছে। আর তদন্ত করতে গিয়েই সরকারের ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় অবস্থা’। কারণ বেশিরভাগ আবেদনই ভুয়ো বলে বিবেচিত তথা বাতিল হয়েছে। দেখা গেছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তর আবেদন করা বেশিরভাগ মানুষের আছে দোতলা, তিনতলা বাড়ি। আর এই সমস্ত বাড়ি গুলোর ঝরে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় নি। উপরন্তু, ক্ষতিগ্রস্থের এই আবেদনকারীদের মধ্যে আছেন চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক, ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলাতেই চোখে পড়ছে প্রায় একইরকম চিত্র। প্রথমে আসি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কথায়। প্রসঙ্গত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পার্থ ঘোষ ক্ষতিগ্রস্থের আবেদন প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় প্রায় ২ লক্ষ ১১ হাজার মানুষ ক্ষতিপূরণের জন্য তাদের আবেদন জমা করেছেন। কিন্তু সরকারি তদন্তের পর মাত্র ৬৪,৮০৬ জন মানুষ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও ১,৪২৩ জন মানুষ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিবেচিত হয়েছেন। প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫১৫ জন মানুষ এর আবেদন বাতিল বলে গণ্য করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও একই অবস্থা। এই জেলাতে ৭৬% আবেদনকারীর আবেদন ভুয়ো হিসেবে গণ্য করে সরকারের তরফ থেকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এই জেলায় আবেদন করা প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার আবেদনের আবেদনের মধ্যে ১ লক্ষ ৯৯ আবেদনই বাতিল বলে গণ্য হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই জেলার কোশিয়ারি ব্লক থেকে বাসস্থানের ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন করেছিলেন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নার্স , স্থানীয় স্কুলের কিছু পার্শ্বশিক্ষক, সরকারি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পর্যন্ত । কিন্তু সরকারি আধিকারিকেররা এই ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন এদের পাকা বাড়ি সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে কেন তাঁরা আবেদন করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে এক ব্যবসায়ী দাবি করেছেন ‘‘আমার নামে অন্য কেউ আবেদন করতে পারে।’’ আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - একই চিত্র দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাতে। এই জেলাতে বিভিন্ন ব্লক অফিসের তালিকা থেকে বেশিরভাগ আবেদনকারীর নাম বাতিল করা হয়েছে। যেমন এই জেলার ক্যানিং ১ ব্লকে মোট ৬২৯১ টি আবেদন জমা পড়েছিল। কিন্তু সংশোধনের পর মাত্র রয়েছে ৬৫৬ টি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলারও হুবহু চিত্র চোখে পড়ছে। এই জেলার দেগঙ্গা ব্লকে পূর্বের আবেদনকৃত ২৮৩৯ আবেদনের মধ্যে কেবল মাত্র ৯০৩ আবেদন বৈধ বলে বিবেচিত। এই জেলার বাগদা ব্লকে জমা পড়া ১১,৯৪০ টি আবেদনকারীর তালিকা থেকে কেবলমাত্র ২,২০৬ আবেদনকারীর নাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ও বিস্ময়কর ভাবে মাত্র ৩ জনের নাম আছে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থের তালিকাতে। এভাবেই পূর্ব বর্ধমান জেলার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মোট ৫,৩১৪ টি আবেদনের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থের আবেদন মাত্র ২৯৭ টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থের আবেদন ১,৪৯৪ বৈধ বলে বিবেচিত। এই জেলার মেমরি ১ ব্লক থেকে সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছিল। কিন্তু সরকারি তদন্তের পর ৬০ % আবেদন ভুয়ো বলে গৃহীত হয়েছে। দেখা গেছে আবেদনের ফর্মে দেওয়া ফোন নম্বর, ঠিকানা অনেকাংশেই মিথ্যা। হাওড়া, হুগলি, নদীয়া জেলাতেও একই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। নদীয়া জেলার প্রায় ১৬ হাজার আবেদনের মধ্যে ৯৮ জনের আবেদনপূর্ণ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ বলে বিবেচিত ও ৭২১৪ জনের আবেদন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলাতে দ্বিতীয় দফায় কোন ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েনি। তাই এক্ষেত্রে পুরনো তালিকা অনুযায়ীই ক্ষতিপূরণ দানের কথা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। আপনার মতামত জানান -