আমরা সকলেই জানি যে ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা মানুষকে খুব সহজেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তাড়াতাড়ি। ডায়াবেটিস হলে অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব শরীরে অতিমাত্রায় কড়া নাড়ে। একইভাবে করোনা সংকটকালে বিশেষজ্ঞদের বার্তায় উঠে এসেছে আর এক ভয়ানক সত্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁদের শরীরে ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে, তাঁদের করোনার হাত থেকে কোনোভাবেই মুক্তি নেই। বরং করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পথে দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানা যাচ্ছে, ভারতীয়দের শরীরে করোনা তার মারণ থাবা খুব দ্রুত প্রসারিত করছে। তার কারণ ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসের বড় গন্ডগোল। এ প্রসঙ্গে বৃটেনের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক অসীম মালহোত্রা জানিয়েছেন, ভারতীয়রা প্রচুর পরিমাণে প্রসেসড ফুড খেয়ে থাকেন। যার ফলে মারাত্মক হারে ওজন বেড়ে যায় এবং ওজনজনিত কারণে করোনা ভাইরাসেও খুব সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ভারতীয়রা।

এই চিকিৎসক জানিয়েছেন,’ভারতীয়দের একটা বড় অংশের লাইফস্টাইল এই অসুখের জন্য দায়ী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের টাইপ টু ডায়াবেটিস রয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ আছে, হার্টের অসুখ আছে, তাঁরা কোভিডের হোস্ট হয়ে উঠতে পারেন সহজেই। আর এই সমস্ত অসুখই শরীরে মেদের পরিমাণ বেশি থাকলে সহজে হয় মানুষের।’ এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উক্ত চিকিৎসক ব্রিটেন ও আমেরিকার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা লক্ষাধিক হওয়ার পেছনে খারাপ খাদ্যাভাসের কারণকেই মূল হিসেবে দেখছেন।

স্বাস্থ্য সমীক্ষায় ইদানিং ওবেসিটি একটি অসুখ হিসেবেই ধরা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পরিশ্রম কম হওয়ার কারণে মানুষের শরীরে ইদানিং মেদ জমছে তাড়াতাড়ি। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন রোগ চেপে বসছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়। ডাক্তার মালহোত্রা জানাচ্ছেন, উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, যদি কেউ টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই ব্যক্তির করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

শুধু তাই নয়, এসব রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কাও অত্যাধিক বেশি। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দাবি প্রসেসড এবং জাঙ্ক ফুড থেকে যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হওয়া যায় ততই ভালো। অন্যদিকে, ভারতীয় ডায়েটে যে পরিমাণ শর্করা থাকে, তাতেও সমস্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের বাড়বাড়ন্ত থামাতে অবশ্যই খাদ্যাভাস থেকে আলু,ভাত, চিনি বাদ দিতে হবে। তবে মাছ, মাংস অথবা ডিম বেশি খেলে এধরনের সমস্যা বাড়ার কোনো কারণ নেই বলেই জানা যাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্তি পেতে উঠে-পড়ে লেগেছেন করোনা আক্রান্ত দেশগুলি। গত 4 মাস ধরে যেভাবে করোনা তার ভয়াবহতা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশে, তাতে ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী চরম আতঙ্কিত। তাই এবার বিশ্ববাসীকে বাঁচানোর জন্য খাদ্যাভাসে বদল আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। শরীরে যদি পর্যাপ্ত ইম্যুনিটি তৈরি হয়, তাহলে কোন মতেই করোনা থাবা বসাতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং পর্যাপ্ত ইমিউনিটি তৈরি করতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপরেই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।