এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > পাহাড়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পট-পরিবর্তনের প্রভাব এবার দুর্গাপুজোতেও

পাহাড়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পট-পরিবর্তনের প্রভাব এবার দুর্গাপুজোতেও

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল ঘটেছে ক্ষমতার – রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূত্র ধরে বদলেছে দুর্গা প্রতিমার আদলেও। বিস্ময়কর হলেও, দার্জিলিং উপত্যকায় এমনটাই হয়েছে – যখন সুভাষ ঘিসিং ক্ষমতায় ছিলেন তখন একরকমভাবে দুর্গা পুজো করা হতো। আবার তাঁর হাত থেকে ক্ষমতা যখন বিমল গুরুঙ্গের হাতে আসে তখন আবার দুর্গা পুজো উদযাপনের রকমসকমই বদলে যায়। কিন্তু, বর্তমানে আবার পাহাড়ে অশান্তির প্রেক্ষাপটে প্রায় ২ বছর ধরে বিমল গুরুং ফেরার।

আর, তার জেরে গতবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর পুজোও। বর্তমানে, বিমল গুরুঙ্গের জায়গায় পাহাড়ের রাশ কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিনয় তামাংয়ের হাতে। ফলে, তিনি আবার নতুন উদ্যোগে এবছর দার্জিলিং-এর ম্যালে পুজোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিনয় তমাং জানান, গুরুং বা ঘিসিংয়ের পুজো আসলে মানুষই বন্ধ করে দিয়েছিল। তার সঙ্গে এটাও আশ্বাস দেন, দুর্গাপুজোর সঙ্গে ফুলপাতির অনুষ্ঠানও ধুমধামে পালন করা হবে এবার। পাহাড়ের মানুষকে আনন্দ দিতেই শারদোৎসব পালন করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা – এমনটাই দাবি করলেন তিনি।

পাহাড়ের রাজনৈতিক সূত্রের খবর বলছে, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত চৌরাস্তায় প্রতিবছর পুজো করেছেন সুভাষ ঘিসিং। তবে দুর্গা প্রতিমার মূর্তির রূপ পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। তৎকালীন পাহাড়ের অবিসংবাদী নায়ক সুভাষ ঘিসিং ১৮ হাতের দুর্গা প্রতিমার পুজোর প্রচলন করেছিলেন – এই যুক্তিতে যে নয়জন দেবীর একটি রূপ। যদিও এটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেননি তিনি, পরে মূর্তি পুজো ছেড়ে শিলা পুজার প্রচলন করেছিলেন। যুক্তি, আদিবাসীরা মূর্তি পুজা করেননা তাই। এরপর ২০০৭ সালে সুভাষ ঘিসিংয়ের হাত থেকে ক্ষমতার রাশ আসে বিমল গুরুঙ্গের হাতে।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

আর তারপরেই বন্ধ হয়ে যায় সুভাষ ঘিসিংয়ের দুর্গাপুজো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূত্র ধরে ২০১৪ – ২০১৬ সাল পর্যন্ত ধুমধামে দুর্গাপুজো করেন বিমল গুরুং। এমনকি ২০১৬ সালে ২০ লক্ষ টাকা বাজেটের দুর্গাপুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মহিলা সংগঠন নারী মোর্চাকে, তদারকির দায়িত্ত্বে ছিল দলের যুব শাখা। মহাসপ্তমী থেকে পুজো শুরু হয়েছিল, এমনকি বিমল গুরুং নিজে রোজ সকাল-সন্ধ্যায় পুজোর ৯ দিনই হাজির থাকতেন। কিন্তু, এরপরেই পাহাড়ে অশান্তির সূত্র ধরে বিমল গুরুং কার্যত পাহাড় থেকে ফেরার হয়ে যান এবং এখনও আত্মগোপন করে আছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে, পাহাড়ের টালমাটাল অবস্থা সামলানোর জন্য জিএনএলএফের তরফ থেকে ক্ষমতায় আনা হয় বিনয় তমাংকে। আর তাই এবছর থেকে বিনয় তামাংয়ের চৌরাস্তা মোর্চা টাউন কমিটির উদ্যোগে মহা ধুমধামে নয়দিনের পুজো শুরু হচ্ছে দার্জিলিং ম্যালে। উল্লেখ্য, জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জিম্মা জানিয়েই দিয়েছেন পুজো করতে হলে ক্ষমতায় থাকা একান্ত জরুরি। ক্ষমতায় থাকাকালীন সুভাষ ঘিসিং, বিমল গুরুংরা ধুমধামে পুজো করেছেন। এখন তাঁদের জায়গায় এসেছেন বিনয় তমাং, আর তাই তিনি এবছর থেকে পুজো করছেন।

তবে দুর্গাপুজো করার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই এমনটাই জানালেন টাউন কমিটির দীনেশ গুরুং বা সম্পাদক পূরণ থামিরা। তাঁদের বক্তব্য, পাহাড়ে শান্তি এবং সংস্কৃতি বজায় রাখার জন্য এই পুজো করা হচ্ছে। পাহাড়বাসী এবং পর্যটকদের আনন্দ দেওয়াও অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য এই পুজো উদযাপনের। পুজোর বাজেট ৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে। ফুলপাতি অনুষ্ঠানের দিন ঢাকি আসবে এবং প্রতিমা বিসর্জন হবে ২০ অক্টোবর – এমনটাই জানা যায় তাঁদের সূত্র থেকে। সবমিলিয়ে শারদীয়ার গন্ধে পাহাড়ের বাতাসও ম-ম করে উঠছে ক্রমশ।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!