এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > দলত্যাগী হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রাখছেন দলীয় নেতা নেত্রীরা, মিলেছে প্রমান , বেজায় ক্ষুব্ধ নেত্রী

দলত্যাগী হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রাখছেন দলীয় নেতা নেত্রীরা, মিলেছে প্রমান , বেজায় ক্ষুব্ধ নেত্রী


পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে একেবারে সীমান্তবর্তী এলাকা হলেও দক্ষিণ দিনাজপুরের গুরুত্ব কোনদিনই কম ছিল না। বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে ভারত- বাংলাদেশ বর্ডার লাগোয়া এই জেলায় সিংহভাগ বিধানসভা আসন দখল করে সদর্পে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এরকম একটি সাংগঠনিক শক্তির জেলায় জেলা সভাপতি হিসেবে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন প্রাক্তন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি এবং বর্তমানে বিজেপির অন্যতম নেতা বিপ্লব মিত্র।

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা রাজনীতিতে তৃনমূল কংগ্রেসের অন্দরে “মেজদাই” শেষ কথা ছিল। গঙ্গারামপুরের মিত্র বাড়ির মেজো সন্তান তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র রাজনৈতিকভাবে এতটাই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যে জেলার প্রত্যেকটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থীদের টিকিট নিজে হাতে বিতরণ করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, বিগত দিনে বালুরঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষের জয়ের পেছনে মূল কারিগর ছিলেন বিপ্লব মিত্র বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। কিন্তু প্রথমবার 2014 সালে অর্পিতা ঘোষকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করলেও বিপ্লব-অর্পিতা সম্পর্কের সমাপ্তি কিন্তু মধুর হয়নি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেও দলীয় প্রার্থীকে ভালোমতো মেনে নিতে পারেননি তদানীন্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। অর্পিতাদেবীর ভোট প্রচার নিয়েও হাইভোল্টেজ ড্রামা চলতে থাকে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে।

দলীয় অভিযোগ, নেত্রীর নির্দেশ মতো মুখে অর্পিতা ঘোষকে জেতানোর কথা বললেও নেপথ্যে গোটা তৃণমূল কংগ্রেস দলে নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অর্পিতা ঘোষকে ব্যাকফুটে ঠেলতে থাকে প্রাক্তন জেলা সভাপতি। বিপ্লববাবুর খাসতালুক গঙ্গারামপুর হওয়া সত্ত্বেও সেই গঙ্গারামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েন অর্পিতা। আর নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন পরাজিত প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের গলাতেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে দলীয় অন্তর্কোন্দলের কথা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে বিপ্লব মিত্রের দিকে। প্রশ্ন ওঠে কি করে পিছিয়ে পড়লেন তিনি!

প্রকাশ্যেই এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বালুরঘাট লোকসভা তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। আর এরপরই কালীঘাটের বাড়ি থেকে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনীতিতে বিপ্লব জামানার ঘটেছে। নতুন জেলা সভাপতি হিসেবে অর্পিতা ঘোষের নাম ঘোষণা করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর এর পরেই কালবিলম্ব না করে বিজেপি দলে নাম লিখিয়েছেন বিপ্লববাবু।

দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরই বিপ্লব অনুগামীদেরকে দল থেকে দূরে সরাতে থাকেন অর্পিতা ঘোষ। বিজেপিতে যোগদানকারী জেলা পরিষদের সদস্যদেরকে দলে ফিরিয়ে একদিকে তিনি যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে থাকেন, অন্যদিকে গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান কথা বিপ্লব মিত্রের ভাই প্রশান্ত মিত্রকে দল থেকে বহিষ্কার করে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী। কিন্তু বিপ্লববাবু ভাঙ্গা সত্বেও যেন মচকাননি। তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন এবারের শারদীয়ায় পুজো পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে।

বস্তুত, প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি এবং বর্তমান বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র বিশাল বড় গাড়ির কনভয় নিয়ে এবং শতাধিক কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে করে সপরিবারে দাপিয়ে বেড়ান জেলার এক থেকে শুরু করে আর এক পুজো মন্ডপে। কোথাও তিনি পুজোর উদ্বোধন করেন অথবা কোথাও বা নিজের শুভেচ্ছা বার্তার মধ্যে দিয়েই রাজনৈতিক বার্তাকে স্পষ্ট করে দেন বিপ্লব মিত্র। কিন্তু প্রশ্নের বিষয়, বিপ্লববাবুর এই পুজো পরিক্রমাতে তার সঙ্গে চোখে পড়ে তৃণমূলের ছোট-বড় অনেক নেতাকেই।

উল্লেখ্য, বিপ্লব মিত্র দলত্যাগ করলেও যারা এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনে রয়েছেন সেই সমস্ত নেতারাও বিপ্লববাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপচারিতা করছিলেন পূজার দিনগুলোতে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে ভালো চোখে নিতে পারেননি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি অর্পিতা ঘোষ। শুধু পুজো উদ্বোধনে যাওয়াই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিপ্লববাবু দল ছাড়ার পরে এখনও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব। যার কারণে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূলের সভানেত্রী।

ইতিমধ্যেই অর্পিতাদেবী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কোনো নেতাই যাতে বিজেপির সঙ্গে সংস্রব না রাখেন। তারা যেন দলের স্বার্থে দ্রুত বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপরেও যারা বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন, তারা চাইলে দল ছাড়তে পারেন।” কিন্তু দীর্ঘদিন বিপ্লববাবুর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস দল করে এসেছেন যে সমস্ত নেতারা, এত সহজেই কি বিপ্লব মিত্রের সংশ্রব ত্যাগ করতে পারবেন তারা! উঠছে প্রশ্ন। কারণ দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূলের সংগঠনকে সভাপতি হিসেবে যে বিপ্লব মিত্র শুধু সামলেছেন তাই নয়, ব্যক্তিগত স্তরেও অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে এসেছেন বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র।

তাই সেই সম্পর্ক ব্যক্তি সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষগুলো কি করে দ্রুততার সঙ্গে বিপ্লববাবু সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করবেন! তা নিয়েই সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। কিন্তু বিপ্লব মিত্র প্রসঙ্গে যেমন কড়া মনোভাব পোষণ করে এসেছেন বর্তমান জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ, তাতে অতিসত্বর যদি বিপ্লববাবু সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ না করেন দলীয় নেতারা, তাহলে দলের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদেরকে। এহেন একটা পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনৈতিক মানচিত্র, ঠিক আকার গ্রহণ করে, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!