এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ১৯৭১-কে সামনে রেখেই ২০১৯-এ ফেরার আশায় গেরুয়া শিবির

অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ১৯৭১-কে সামনে রেখেই ২০১৯-এ ফেরার আশায় গেরুয়া শিবির


লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই, দিল্লির রাজনীতি যাঁরা ‘কভার’ করেন তাঁদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় যা জানা যাচ্ছে, এই বছরের শেষের দিক অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকেই পুরোদমে লোকসভা নির্বাচন নির্ভর রাজনৈতিক গতিবিধি চালু হয়ে যাবে। অর্থাৎ হাতে রয়েছে সাকুল্যে মাস চারেক। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই সবার মনে প্রশ্ন – কি হবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে? একদল দাবি তুলছেন – ২০১৯, বিজেপি ফিনিশ! অন্যদল পাল্টা দিচ্ছে – মোদী সরকারের বিকল্প আরেকটা মোদী সরকার! অর্থাৎ কেন্দ্রে সরকার গড়তে শাসক বা সম্মিলিত বিরোধী সবাই সমানভাবে আশান্বিত। কিন্তু, কোথাও গিয়ে গেরুয়া শিবিরের – ২০১৯-এ ফিরে আসবই, সেই বার্তা যেন সামান্য টোলে গেছে। এর প্রধান কারণ – বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে দীর্ঘদিনের বৈরিতা ভুলে বিরোধী শক্তি ক্রমশ সম্মিলিত হচ্ছে। আর তার ফলও মিলছে হাতেনাতে – যা আমরা বিগত দিনের উপনির্বাচনগুলিতে দেখতে পেয়েছি। সম্মিলিত বিরোধী ভোট এক হয়ে যেতেই আর মাথা তুলতে পারছে না পদ্ম-শক্তি।

আর সেটাই অতি স্বাভাবিক – কেননা আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষের ইতিহাসে কোনো দল একক ভাবে ৫০%-এর উপর ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে নি। যেকোন শাসকদলকেই নির্ভর করতে হয়েছে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার দিকে। কিন্তু এখন যেহেতু বৈরিতা ভুলে বিরোধী শক্তিরা এক হয়ে যাচ্ছে, তাই কর্নাটকে একক বৃহত্তম দল হয়েও সরকার গঠন করতে পারল না বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে যদি সত্যিই একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিতে পারে সম্মিলিত বিরোধীরা তাহলে অঙ্কের নিয়মেই বিজেপির আসন সংখ্যা নেমে আসতে পারে ১৫০-এরও নীচে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টি যে নেহাত ফেলনা নয় তার প্রমান – কংগ্রেসও মাথা নুইয়ে স্বাধীনতার পর প্রথমবার মাত্র ২৫০ আসনে লড়াই করতে চাওয়ায়। অর্থাৎ দিনের শেষে কোথাও গিয়ে – গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক জোর আর মোদী-ম্যাজিকে ভর করে নিজেদের ভোট বিজেপি ৪০-৪২% পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেও, সম্মিলিত বিরোধী জোট ৫০-৫৫% ভোট পেয়ে বাজিমাত করতে পারে সরল ঐকিক নিয়মে।

তাহলে কি সত্যিই ২০১৯-এ বিজেপির কোনো আশা নেই? এই অবস্থায় গেরুয়া শিবিরকে অক্সিজেন যোগাচ্ছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দুটি বিশ্লেষণ তথা তথ্য। প্রথমটি – ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচন – ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই কোনঠাসা বিরোধীরা সম্মিলিত হয়েছিলেন। নিজেদের অস্তিত্ত্ব রক্ষার্থেই সেইসময় সকল বৈরিতা ভুলে সম্মিলিত বিরোধীরা একযোগে ডাক দিয়েছিলেন – ইন্দিরা হঠাও। আর সম্মিলিত বিরোধীদের সেই স্লোগানের বিরুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী দিলেন মহা স্লোগান – গরীবি হঠাও। সেই এক মহামন্ত্রেই খড়কুটোর মত উড়ে গেল বিরোধীরা। সম্মিলিত প্রয়াসেও আটকানো যায়নি ইন্দিরা গান্ধীকে, যে ঘটনার সঙ্গে এবারের নরেন্দ্র মোদীর অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ২০১৯-এও তো অনেকটা সেই একজনকে আটকাতে সম্মিলিত বিরোধীদের প্রয়াস!

আর এর থেকেও বড় হয়ে উঠছে দ্বিতীয় কারণটি – যা হল মিলি-জুলি সরকার নিয়ে ভারতবাসীর অতীত অভিজ্ঞতা। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে আটকাতে জনতা পার্টির মোরারজি দেশাইকে সামনে রেখে হল ভারতের ইতিহাসে প্রথম জোট-সরকার, কিন্তু আড়াই বছর না পেরোতেই জাঠ নেতা চৌধুরী চরণ সিংয়ের উচ্চাকাঙ্খা সেই সরকারের পতন ডেকে আনল। চরণ সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্ত্বও অবশ্য ১৭০ দিনের বেশি স্থায়ী হল না – মানুষ আবার ১৯৮৪ সালে আস্থা রাখলেন ইন্দিরা গান্ধীর উপর। এরপরে আবার রাজীব গান্ধীকে আটকাতে জনতা দলের বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৯৮৯ সালে তৈরী হল জোট সরকার, এক বছরও টিকল না সেই সরকার, প্রধানমন্ত্রী হলেন চন্দ্র শেখর – সেই সরকার টিকল আরোও কম দিন। লোকসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন হতেই ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। এরপর ১৬ দিনের বাজপেয়ী সরকারকে ফেলে দিয়ে ১৯৯৬ সালে দেবেগৌড়ার নেতৃত্ত্বে আবারও একটি মিলি-জুলি সরকার পেল ভারতবাসী। কিন্তু এবারেও বিধি বাম – সরকার টিকল না এক বছরও! তাকে সরিয়ে দিয়ে ইন্দ্র কুমার গুজরালকে প্রধানমন্ত্রী করে আরেকটা শেষ মরিয়া প্রচেষ্টা চালাল সম্মিলিত বিরোধীরা – কিন্তু তাও টিকল না এক বছর। অগত্যা পুনরায় নির্বাচন এবং ভারতবাসীর আস্থা সেই একক দল বিজেপি ও অটল বিহারি বাজপেয়ীর উপর। ২০১৯ সালেও যতই আঞ্চলিক দল গুলির সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস মাত্র ২৫০ আসনে লড়াই করুক – সম্মিলিত বিরোধী শক্তি বা ফেডারেল ফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস খুব কম করে ১০০-এর উপর আসন পাবে। বাকি কোনো আঞ্চলিক দলই খুব স্বাভাবিকভাবে সেই সংখ্যার আশেপাশে যাবে না – আর সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী জানিয়েই রেখেছেন তিনিই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন। কিন্তু তা ফেডারেল ফ্রন্টের বড় শরিক মমতা-চন্দ্রবাবু-মায়াবতী-অখিলেশ-লালুরা মেনে নেবেন তো? আর মেনে না নিলে সেই মিলি-জুলি সরকারের অভিজ্ঞতা কিকরে অতীত দিনের থেকে আলাদা হয়? অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সেই একই স্থায়িত্ত্বের প্রশ্নে ভারতবাসী কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর পাশেই দাঁড়িয়ে যেতে পারেন – যদি না সম্মিলিত বিরোধীরা নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা এক প্রধানমন্ত্রী মুখ তুলে আনতে পারেন!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!