এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > তৃণমূল নেতার অভিযোগে, তড়িঘড়ি জানলা-দরজা ভেঙে সাংবাদিক গ্রেপ্তার করে আদালতে ধাক্কা পুলিশের!

তৃণমূল নেতার অভিযোগে, তড়িঘড়ি জানলা-দরজা ভেঙে সাংবাদিক গ্রেপ্তার করে আদালতে ধাক্কা পুলিশের!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন, সাংবাদিকরা নির্ভয়ে নিজেদের কাজ করতে পারছেন না, সরকার বিরোধী কথা বা প্রতিবেদন পেশ করলেই সাংবাদিকদের উপরে নেমে আসছে সরকারের খড়গহস্ত, রাজ্যের পুলিশও আর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে, সরকারের আজ্ঞাবাহী যন্ত্রে পরিনত হয়েছে – এসব একাধিক অভিযোগ যখন রাজ্যের বিরোধী শিবির থেকে বারবার আসতে শুরু করেছে, সেই পরিস্থিতিতে হুগলি জেলার আরামবাগের পুলিশের নাম এক বিরাট অভিযোগ উঠে এলো।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ সে জুলাই ভোররাতে ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন ও আরামবাগ টিভির সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে অকস্মাৎ গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে সফিকুল ইসলামের দুই শিশু সন্তানকেও থানায় আটক করে । সূত্রে জানা গেছে, যে অভিযোগের কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে, সেই অভিযোগ সেদিন মধ্যরাতে ১২.১০ মিনিটে আরামবাগ থানায় দায়ের করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির জনৈক প্রাক্তন সদস্য।

অভিযোগ পাবার পরেই পুলিস বিনা নোটিসে অতি সক্রিয় হয়ে তাঁদের গ্রেফতার করেছে। এমনকি যে ঘটনার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেটাও ছিল তিন মাস আগের ঘটনা। তিনমাস আগের এই ঘটনার অভিযোগ কেন এতদিন পর দায়ের করা হলো, তারও কোন উল্লেখ অভিযোগপত্রে পাওয়া যায় নি। তার উপরে সফিকুল ইসলামের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে যে, আরামবাগ থানার আইসি পার্থ সারথি হালদারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী সফিকুল ইসলামের বাড়ির জানালা, দরজা ভেঙে তাঁদের গ্রেফতার করেছে।

তাই অভিযোগ উঠেছে পুলিশের গ্রেফতার পদ্ধতি নিয়েও। ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদককে পুলিশের এভাবে গ্রেফতার করায় শোরগোল পরে যায় রাজ্যজুড়ে। সফিকুল ইসলামের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা যায় রাজ্যের বিভিন্ন বিরোধী দল, কিছু বিশিষ্ট আইনজীবী ও কিছু মানবতাবাদী সংগঠনকে। সফিকুল ইসলামের বিধিভঙ্গ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। হাইকোর্টে মামলার শুনানি চলাকালীন সওয়াল করতে গিয়ে বামপন্থী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য তীব্র বিরোধিতা করেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তিনি বলেন, “এই গ্রেপ্তার সুপ্রিম কোর্টের একাধিক জাজমেন্টকে অমান্য করা হয়েছে। একটি সাংবাদমাধ্যমের গণতন্ত্রকে হরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। সংবিধানকেও লঙ্খন করা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে বিকাশবাবু আরও বলেছেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ‘আরামবাগ টিভি’র সম্পাদক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ, এই আরামবাগ টিভি (Arambag TV) সরকার ও পুলিশের একাধিক অনৈতিক কাজ সামনে এনেছে।”

বিকাশবাবু অভিযোগ তুলেছেন, “লকডাউনে যখন গৃহবন্দি মানুষ, সেই সময় আরামবাগ থানা থেকে ৫৭ টি ক্লাবকে এক লক্ষ টাকা করে চেক দেওয়া হয়েছে। সেই খবর সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘আরামবাগ টিভি’তে। এছাড়াও, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বালির লরি আটকে পুলিশের ঘুষ নেওয়ার ছবি দেখিয়ে ছিলেন সফিকুল-সুরজরা। সেই কারণেই, একটি মিথ্যা মামলায় তাঁদের অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামী দিনে আদালতে সেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে।”

উক্ত মামলার সঙ্গে যুক্ত হাইকোটের অপর এক বিশিষ্ট আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় সফিকুল ইসলামের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলেছেন, “সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরামবাগ টিভির সম্পাদক ও সাংবাদিকদের। যে অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে কোনও ভাবেই আগাম নোটিস ছাড়া গ্রেপ্তার করা যায় না। আমরা আদালতের নজরেও সেই বিষয়টি তুলে ধরেছি। সেইসঙ্গে, যেভাবে একের পর এক কেস দেওয়া হচ্ছে, সেটাও আদালতের নজরে আনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, দ্রুত পুলিশের এই অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে।”

এই মামলার সঙ্গে যুক্ত অপর দুই বিশিষ্ট আইনজীবী সামীম আহমেদ ও পিন্টু কাঁরারেও পুলিশকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। গতকাল শুক্রবার হাইকোর্টে ছিল এই মামলার শুনানি। যে পদ্ধতিতে পুলিশ সফিকুল ইসলামের পরিবার সহ, সাংবাদিক সুরজ আলী খানকে গ্রেফতার করেছে, তাতে সংবিধানের বিধিভঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে করছে হাইকোর্ট। মামলার প্রাথমিক শুনানির পর পুলিশের এই গ্রেফতার পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে খতিয়ে দেখতে ও হাইকোর্টে রির্পোট দাখিল করার নির্দেশ দিলেন ডিজিপিকে মাননীয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।

সেইসঙ্গে, পূর্বে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল অর্নেশ কুমার-ললিতা কুমারী মামলায়, সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় পুলিশ লংঘন করেছে কিনা, সে বিষয়েও প্রদত্ত রিপোর্টে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উক্ত রিপোর্ট হাতে পাবার পরেই সফিকুল ইসলামের বিধিভঙ্গ গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত পুলিশদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে বলে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে, তৃণমূল নেতার অভিযোগে, তড়িঘড়ি জানলা-দরজা ভেঙে সাংবাদিক গ্রেপ্তার করে আদালতে বড়সড় ধাক্কা খেল পুলিশবাহিনী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!