এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > লোকসভায় ১০০% কাজ না করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের তুলোধোনা তৃণমূল সাংসদের, জেনে নিন বিস্তারিত

লোকসভায় ১০০% কাজ না করায় দলীয় নেতা-কর্মীদের তুলোধোনা তৃণমূল সাংসদের, জেনে নিন বিস্তারিত

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে তৃনমূলের ফলাফল খুব একটা ভালো হয়নি। ৩৪ থেকে ২২ এ নেমেছে রাজ্যের শাসক দল। অন্যদিকে বিজেপি ২ থেকে ১৮ তে পৌঁছে গিয়েছে। আর দলের এই খারাপ ফলাফলের পরই ফলাফল বিশ্লেষণে বসে তৃনমূল অনুধাবন করতে পারে যে তাদের এই খারাপ ফলাফলের পেছনে দলের একাংশেরই ভূমিকা রয়েছে।

আর এবার এই বিষয়ে সোমবার রামপুরহাটে লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যালোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একহাত নিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। এদিন তিনি বলেন, “লোকসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই বারবার রামপুরহাট বিধানসভায় খারাপ ফলের ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। কিন্তু নেতা-কর্মীরা তাঁদের কাজ একশো ভাগ করেননি। তাই এই বিধানসভায় দলের হার হয়েছে। যেটা লজ্জার নয়, দুঃখের।”

সূত্রের খবর, এদিন রামপুরহাট পুরসভার অনুষ্ঠান ভবনে লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যালোচনার আয়োজন করে তৃণমূল। যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল রামপুরহাট-১ ব্লকের সমস্ত জনপ্রতিনিধি, শহরের কাউন্সিলার ও নেতাদের। তবে বেশ কিছু জনপ্রতিনিধি এদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। আর সেই অনুষ্ঠানেই প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত শতাব্দী রায়কে শুরুতেই শহর ও ব্লকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক ও শাড়ি তুলে দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এদিকে লোকসভা ভোটের পর রামপুরহাটে নিজের প্রথম বৈঠকে শতাব্দী রায় বলেন, “নির্বাচনী পর্যালোচনা করা হলে কিছু অপ্রিয় কথা আমাকে বলতে হবে। যেটা আপনাদের খারাপ লাগবে। লোকসভা নির্বাচনের আগেই আপনাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বলেছিলাম রামপুরহাটের ফলাফল ভালো হওয়ার কথা নয়, আপনারা দেখুন। কিন্তু আপনারা একশো ভাগ কাজ করেননি। ২০০৯সাল থেকে রামপুরহাটে রেলের ছ’ফুঁকো দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। তাছাড়া টিআরডিএ’র মাধ্যমে এখানে অনেক বেশি উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। যেটা মুরারই, সাঁইথিয়া বা অন্য কোথাও সম্ভব হয়নি। এত কাজের পরও এই বিধানসভায় এই ফলাফল হলে তা লজ্জার নয়, দুঃখের। লজ্জা নয় এই কারণে যে আমি সাংসদ হিসেবে কাজ করেছি। কাউন্সিলাররা ওয়ার্ডের জন্য যা চেয়েছেন, তাই দিয়েছি। তার মানে আমার কাজ ১০০শতাংশ করেছি। কিন্তু আপনারা একশো ভাগ কাজ করেননি। এই ফলাফল আমাদের প্রাপ্য ছিল না। আমি পুরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে যেতে বলেছেন প্রচারে গিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে আগামী পুরসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে যাতে আর এরকম না হয়, সেই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করে দেন শতাব্দী রায়। পাশাপাশি লোকসভায় তাকে জেতানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, “অন্যান্য বিধানসভাগুলি লিড না দিলে আমার জেতা সম্ভব ছিল না। তাঁদের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে লজ্জা ও দুঃখ করে তো রাজনীতি হবে না। সামনে পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচন। এবার জোর দিয়ে ভোট করবেন। না হলে আপনাদের নিজেদেরই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। দল থেকে যেসমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ফাঁকি না দিয়ে সেগুলি অনুসরণ করুন।”

দলে অনেকেই যে জেতার ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন এবং তা যে ঠিক ছিল না সেকথাও এদিন স্বীকার করে নেন শতাব্দী রায়। এদিন তিনি বলেন, “আমরা ওভার কনফিডেন্সে ভুগছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন। এখন থেকেই যদি উঠেপড়ে লাগা যায় তাহলে নিশ্চয়ই পরিবর্তন আসবে। মানুষের কাছে গিয়ে সরকারের কাজকর্ম তুলে ধরুন। মানুষের যে ভালোবাসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ছিল সেটা আমাদের জন্য কোথায় কোথায় নষ্ট হয়েছে সেগুলি পুনরুদ্ধার করুন। পরপর দু’টি লোকসভাতেই রামপুরহাটে ফল খারাপ হয়েছে। কোথায় গলদ হচ্ছে সেটা দেখার দরকার আছে। রামপুরহাট আমার কাছে চ্যালেঞ্জের জায়গা হয়ে উঠছে। এত উন্নয়নের পরও কেন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেটা পর্যালোচনার প্রয়োজন। আশিসদা(কৃষিমন্ত্রী) খুব ভালো মানুষ। যদি এখন থেকে কেউ আমাদের জন্য আশিসদাকে ভুল বুঝছে সেটার মেরামত করুন। যাতে বিধানসভা ভোটে ফলাফল ভালো হয়। মনে রাখবেন, লোকসভায় এতগুলি বিধানসভা ছিল বলে বেঁচে গিয়েছি। বিধানসভায় সেই সুযোগ নেই। এলাকায় দলের এমএলএ থাকলে তবেই আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে। তাই এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন।”

তবে শতাব্দীদেবী এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেও কোনও বক্তব্য রাখেননি কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “লোকসভা ভোট পরবর্তী এই বিধানসভা অনেক শক্ত জায়গায় এসেছে। পুরসভা, বিধানসভা দু’টি ভোটেই আমরা জয়লাভ করব।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা ভোটের নিরিখে রামপুরহাট শহর ও ১ ব্লক এলাকায় প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি রামপুরহাট পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫ টিতেই হার হয়েছে শাসকদলের। সব মিলিয়ে দলীয় কর্মীদের আত্মতুষ্টিতে না ভোগা এবং জনসংযোগের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করলেন শতাব্দী রায়।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!