প্রথম থেকেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে নিজের মত জানিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সম্প্রতি সংসদের দুই কক্ষের পর রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে গিয়েছে। আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হওয়ার পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইতিমধ্যেই মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে সভা-সমিতি করছেন তিনি। আর এবার পার্ক সার্কাসের ময়দান থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী সভা করে সোচ্চার হলেন তৃণমূল নেত্রী। সূত্রের খবর, শুক্রবার পার্কসার্কাসের সভায় প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি বলেন, “সমস্যার মূল বিষয় থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করতে কেন্দ্র। কে কি খাবে, কি পড়বে তাই বলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। নাগরিকত্ব দেওয়ার বিজেপি কে! বিজেপির জন্য গোটা দেশে আগুন জ্বলছে। উত্তরপ্রদেশে পুলিশ আন্দোলনকারীদের গুলি করে মেরেছে। বেপরোয়াভাবে পড়ুয়াদের মারধর করা হচ্ছে। সবাই একসঙ্গে থাকুন। তবেই বিজেপির খেলা বন্ধ হবে।”

এদিকে এদিনের পার্কসার্কাসের ময়দান থেকে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে হেনস্থা করা নিয়েও সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ব্যাঙ্গালুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে মহাত্মা গান্ধীর ছবি নিয়ে পথে নেমেছিলেন রামচন্দ্র গুহ। তাকেও হেনস্থা করা হয়েছে। বিজেপির বিরোধিতা করলেই হেনস্থা করা হচ্ছে।”

আর সব শেষে ফের এনআরসির বিরুদ্ধে নিজের মত স্পষ্ট করে দেন তৃণমূল নেত্রী। কোনোমতেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সংশোধনী আইন যে তিনি মানবেন না, তা নিজের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেশজুড়ে বিজেপি অশান্তির বাতাবরণ তৈরি চেষ্টা করছে। বিজেপির প্ররোচনায় পা দেবেন না। যাদের ভোট নিয়ে বিজেপি জিতেছে, এখন তাদেরকেই বলছে নাগরিক নয়। ওরা সবার মধ্যে অনুপ্রবেশকারী দেখছে। এনআরসি বাতিল হওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের এই আন্দোলন চলবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নেমে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। আর তাইতো প্রতিনিয়ত মিছিল করে সভা-সমিতির মধ্যে দিয়ে “নো এনআরসি, নো ক্যাব” স্লোগান তুলতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তবে শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইন বাতিলের দাবি জানালেও, একবার আইন পাস হয়ে গেলে তা যে বাতিল করা যায় না, তা ভালো করেই জানে রাজ্যের শাসক দলের প্রধান ব্যক্তি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাই শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আন্দোলন কোন আকার ধারণ করে, এখন সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।