এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > “উদ্বাস্তু সব কলোনিগুলোকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছি” নৈহাটি উৎসবের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে কড়া বার্তা মমতার!

“উদ্বাস্তু সব কলোনিগুলোকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছি” নৈহাটি উৎসবের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে কড়া বার্তা মমতার!


 

বিভিন্ন মঞ্চ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রে শাসক দল এবং রাজ্যের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে। ব্যতিক্রম নয়, নৈহাটি উৎসবের মঞ্চ। গত শুক্রবার রেল ময়দানে নৈহাটি উৎসবের শুভ সূচনা করেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই উৎসবে সমাজের বিশিষ্ট চিকিৎসক থেকে শুরু করে সংগীতশিল্পী, শিক্ষক থেকে শুরু করে নানান রকম গুণীজনদের সম্মাননা জানানো হয়।

এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী ইত্যাদি পরিষেবা মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর এই অনুষ্ঠান থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নৈহাটি উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নিজের রাজনৈতিক বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে কটাক্ষ করতে ছেড়ে দেননি। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো নাম না করে এদিনের মঞ্চ থেকে ব্যারাকপুরের ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ অর্জুন সিংহকে তীব্র ভৎসনা করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।

এদিন জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “দেখলেন তো একটি আসনে জয়ী হয়ে কত তান্ডব চালিয়েছে‌। এখানে নৈহাটি ষ্টেডিয়ামের লাইট ভাঙচুর করা হয়েছে।” শুধু তাই নয়, এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে এসে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “দীনেশদাকে এতদিন আপনারা নির্বাচিত করেছেন, দেখেছেন কখনও এসব করেছে! নিপাট ভদ্রলোক। আর এখন 16 কোটি টাকা ব্যয় গড়া স্টেডিয়ামটা ভাঙছে।” আর এক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদদের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু ভাঙ্গা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

এই নৈহাটিতে মে মাসে এসেছিলাম। দেখেছিলাম, মানুষের চোখে কত আতঙ্ক! ওই মোড়ের পার্টি অফিসটা তো আমি করেছিলাম। ভয়ে কেউ আসছিল না। বাঙালি অবাঙালিদের উপর খুব অত্যাচার হয়েছে। এই অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে যারা দলে ফিরে এসেছেন, তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “নদিয়া শহর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বহু উদ্বাস্তু মানুষের বসবাসের মধ্যে মাতুয়া ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছে। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব তিনি দিয়েছেন বলে এদিনের মঞ্চ থেকে ফের দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিক আইনকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা জেনুইন সিটিজেন। প্রকৃত নাগরিক।” রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করে রাজ্যের উদ্বাস্তু এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই আইনের স্বপক্ষে ইতিপূর্বে ভারতীয় জনতা পার্টির মেগা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে মতুয়া সম্প্রদায়কে। তাই নৈহাটির অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মতুয়া এবং উদ্বাস্তুদের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রভাব কিছুটা কম করার চেষ্টা করলেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উদ্বাস্তু সব কলোনিগুলোকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছি। স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ আপনি জেনুইন সিটিজেন। স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ আপনি পাট্টা পেয়েছেন। অথবা দু মাস পরে পাবেন। আজ পাবেন না, কাল পাবেন। আমি যখন জীবনের প্রথম যাদবপুরের সংসদে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন যাদবপুরে মানুষ আমায় বলেছিল, আপনি একটা কাজ করবেন, উদ্বাস্তুরা যাতে নিঃশর্ত জমির দলিল পায়‌। আমি কথা রেখেছিলাম। আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, উদ্বাস্তুরা যে জমির দলিল পাচ্ছেন, আমি করে দিয়েছিলাম। অষ্টানব্বই টি কলোনিতে যে উদ্বাস্তুদের বসবাস ছিল, আমি সরকারি স্বীকৃতি করে দিয়েছি। বাদবাকি অনেক কলোনি আছে। কোথাও বেসরকারি জায়গায়, কোথাও রেলের জমিতে, আবার কোথাও কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গায় বারবার করে আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছি। ওদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।”

রাজ্যের উদ্বাস্তু জনগণের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, “গর্বের সঙ্গে বলি, বাংলায় যত উদ্বাস্তু কলোনি আছে, সব সরকারি স্বীকৃতি করে দিয়েছি।” রেল ময়দানে নৈহাটি উৎসবের মঞ্চে উপস্থিত হন স্থানীয় ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা এবং সাংসদদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পর্যন্ত আক্রমণ করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, “একটা রাজনৈতিক দল মিথ্যা কথা বলছে। আপনাদের কাছে একটা কাগজ পাঠিয়ে বলছে তারা নাকি নাগরিকত্ব পাইয়ে দেবে। তাদের অনেকে বোঝাচ্ছে কার্ড দেবে বলে অনেকের কাছে টাকা তুলছে। আমি সব জানি। আপনি কি ভোট দেননি! আগে উদ্বাস্তু সাধারণ মানুষ। আজ তাহলে হঠাৎ করে বলছেন, কেন তোমাকে আমরা নাগরিকত্ব দেব! আমরা সবাই ফালতু!”

জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি নৈহাটি উৎসবের মঞ্চে এই দিন উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তাপস রায়, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিত্বরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল ময়দানে নৈহাটি উৎসবে যোগ দিয়ে একদিকে যেমন নিজের সরকারের উন্নয়নের বার্তা জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন,

অন্যদিকে তেমনই রাজনৈতিক ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টিতে কোণঠাসা করতে কেন্দ্র সরকারের আইনের বিরোধিতা করে এবং উদ্বাস্তু জনসাধারণের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এখন আগামী দিনে প্রকৃত অর্থেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বাস্তুদের মন জয় করতে পারেন, নাকি নাগরিক আইনের প্রভাব তাদের দিকে বেশি পড়ে! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!