রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্ঘাতে কি ইতি! জোর গুঞ্জন! কলকাতা রাজ্য December 29, 2019 রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল এবং রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ওঠানামার আলো-আঁধারির খেলা বিগত বেশ কিছু মাস ধরে চলছে। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনকার যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে সাংবিধানিক প্রধানকে মন্তব্য করতে দেখা যায়। পাশাপাশি একাধিক জায়গায় নিজের মতো করে প্রশাসনিক বৈঠক করতে চাওয়ায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে প্যারালাল গভর্মেন্ট চালানোর অভিযোগ ওঠে। বলাই বাহুল্য, বিগত দিনে রাজ্যপালের ডাকা প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিদের শুরু করে বিশিষ্ট সরকারি আমলারা যোগদান করেননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের উদ্দেশ্যে একাধিকবার ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। কিন্তু এবার একটি ঘটনা প্রসঙ্গে সকলে আশা করছে, হয়ত ইতি পড়তে চলেছে রাজ্যপাল- মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাতের সম্পর্কে। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লেখেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। কিন্তু দ্রুততার সহকারে সেই চিঠির উত্তর আশায় একমত উৎসাহিত রাজ্যপাল সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যপালের চিঠির উত্তরে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা প্রসঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজভবনে পাঠানোর কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে মৃদু আরেকটি জটিলতা রয়েই যাচ্ছে। কারণ সম্প্রতি রাজ্যপালের আচরণকে নিন্দা জানিয়ে রাজভবন একটি কড়া চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে দেখা গেছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজভবনে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণের পরেই মনে করা হচ্ছে, রাজ্য- রাজ্যপাল সম্পর্কে কিছুটা স্বস্তি দেখা যেতে পারে। রাজ্যপালের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যায় যে চিঠি লেখা হয়েছিল, তার প্রতি উত্তরে রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে রাজ্যপালকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন স্বয়ং রাজ্যপাল। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - শুধু সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াতে জানানোই নয়, এব্যাপারে রীতিমতো খুশি ব্যক্ত করতে দেখা গেছে প্রশাসনিক প্রধানকে। তিনি জানিয়েছেন, “রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তার সুফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত 25 তারিখ আমি রাজ্য সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চলা অসাংবিধানিক ও অরাজক কিছু পরিস্থিতি প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। উনি তারপরের দিন উত্তর দিয়েছেন। তিনি বিষয়টি শিক্ষা দপ্তর সংক্রান্ত বলে আমারকাছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। আমি মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য আমি অপেক্ষায় আছি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী কবে আসবেন, সেই সংক্রান্ত কোনো নথি এখনও পর্যন্ত জানা নেই।” রাজভবনের সচিবালয়ের পাশাপাশি রাজ্যপাল বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর কোনো চিঠি পাইনি। তবে যাই হোক গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আইন ও সংবিধান রক্ষার স্বার্থে এটা জরুরী।” তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে অবশ্য রাজভবন একটি চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই চিঠিতে যাদবপুর এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কর্মচারী বা কর্তৃপক্ষের আচরণ কর্তব্য সম্পর্কে রাজ্যপাল বিভিন্ন সময় যে সমস্ত মন্তব্য করেছিলেন, সেই মন্তব্যকে রীতিমতো কড়া ভাষায় নিন্দা করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রীর থেকে ঠিক করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আচার্য হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের এক্তিয়ার সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাওয়া হয়েছিল সাংবিধানিক প্রধানকে। পাশাপাশি রাজ্যপালকে কেন্দ্র করে ছাত্র-ছাত্রীদের তরফ থেকে যে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছিল, সেই বিক্ষোভকেও শিক্ষামন্ত্রীর থেকে লিখতে চাওয়া এই চিঠিতে বৈধ বলে ঘোষণা করতে চাওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মচারীদের গণতান্ত্রিক বিক্ষোভের অধিকারকে যে কোনো মতেই রাজ্য সরকার ব্যাহত করতে পারে না, সেই কথা উল্লেখ থাকত চিঠিতে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষামন্ত্রীর তরফ থেকে এই ধরনের চিঠি পাওয়ার পরে রাজ্যপালের কি প্রতিক্রিয়া হয়! তা দেখার পরেই সাংবিধানিক প্রধানের দর্শন করতে চান শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি সদ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত বিধি নিয়ম নিয়ে এবং আচার্যের ক্ষমতাকে খর্ব করার বিষয় নিয়েও আইন বিশারদ রাজ্যপাল শিক্ষামন্ত্রীকে বিভিন্ন রকমের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে। তাই এই সব বিষয় ভেবে এখন শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা সাংবিধানিক প্রধান জগদীপ ধনকর কিন্তু তার আচরণের মাধ্যমে ইতিপূর্বেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি কোনমতেই শিথীলতার পক্ষে নয়। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতিক এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দুদিন যেভাবে তাকে বিক্ষোভের কারণে ফিরে আসতে হয়েছে, সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্যের উপরে বেজায় চটেছেন রাজ্যপাল। শুধু তাই নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর সুরঞ্জন দাসের কাছে দুদিনের এই বিক্ষোভের ঘটনার বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে রাজ্যপালের তরফ থেকে। সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরও রাজ্যপাল বেজায় ক্ষুব্ধ বলে জানা যাচ্ছে। কারণ রাজ্যপালের তরফ থেকে তলব করা হলেও সোনালীদেবী তার সঙ্গে দেখা করেননি। এমনকি দেখা না করার কোনো কারণও জানাননি। তাই তার বিরুদ্ধে রীতিমতো কড়া মনোভাব পোষণ করে রেখেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নতুন করে কোনো সুযোগ দেবেন না বলেও ঠিক করেছেন তিনি। তাই আগামী দিনে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে! সেই বিষয়ে রাজ্যপাল বিবেচনা করছেন বলে জানা যাচ্ছে রাজভবন সূত্রে। সবকিছু মিলিয়ে একদিকে যেমন রাজ্যপালের চিঠিতে উত্তর দিয়ে রাজ্য রাজ্যপাল সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে তেমনই আগামী দিনে পুনরায় সম্পর্কের অবনতি ঘটার কিছু অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ আগেও বহুবার দেখা গেছে, রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক উন্নতি হওয়ার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছানোর পরে আবার বিগড়ে গিয়েছে। তবে আগামী দিনের সমস্ত ঘটনার উপরে নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের। আপনার মতামত জানান -