এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মোদী নিজেই নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেন না, দাবি মমতার, পাল্টা দিলেন মুকুল

মোদী নিজেই নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেন না, দাবি মমতার, পাল্টা দিলেন মুকুল


 

সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিক বিল নিয়ে উত্তাল দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা থেকে শুরু করে মনিপুর, অসম ইত্যাদি রাজ্যের পাশাপাশি আন্দোলনের আগুন ছড়িয়েছে বাংলাতেও। এই আইনের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরাবরই সংশোধিত নাগরিক আইন এবং এনআরসির বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোকে।

কিন্তু এবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে বলতে শোনা গেল, সংশোধিত নাগরিক আইন বিলটিকে নাকি সমর্থন করেন না স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই কারণেই সংসদের দুটি কক্ষেই ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি তাকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই যুক্তিকে পাল্টা কটাক্ষ করলেন এককালে তারই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী বঙ্গ বিজেপি চাণক্য নামে খ্যাত মুকুল রায়।

এদিন পাক সার্কাসের একটি সভায় উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমর্থন করেন না খোদ প্রধানমন্ত্রী। আর সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী এর সমর্থনে ভোট দেননি।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “এতো ভালো প্রধানমন্ত্রী আপনি, ভোট দিলেন না কেন! সংসদে আপনি ছিলেন না। আপনি ভোট দেবেন না তাহলে আপনিও সমর্থন করেন না। সমর্থন না করলে প্রত্যাহার করে নিন।”

তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কটাক্ষকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মুকুল রায় বলেন, “মমতার 8 জন সাংসদ কেন লোকসভায় গরহাজির ছিলেন!

তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!” প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা প্রশ্নের উত্তরে মুকুলবাবু বলেন, “সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়ার আগেই সংশোধিত নাগরিক আইনকে অনুমোদন দেয় ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আর সেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করে মুকুলে রায়ের দাবি, “আপনার সদিচ্ছা থাকলে লোকসভায় তৃণমূলের আটজন সাংসদ ছিলেন না কেন! আর সেই সাংসদের বিরুদ্ধে আপনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন!” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষর করার পরই সংশোধিত নাগরিক বিল সংশোধিত নাগরিক আইনে রূপান্তরিত হয়। আর শুক্রবার থেকেই এই আইনের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, আইন সংবিধান সম্মত হওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু পাক সার্কাসের সভার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা যায় বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আইন প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়।

এই প্রসঙ্গে মুকুলবাবু বলেন, “আইনটা নরেন্দ্র মোদী করেননি। এটা সংসদ করেছে। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেছে। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাহার করতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী।” পাশাপাশি সরকারের অংশ হয়ে দেশের আইনের বিরোধিতা করা সংবিধানসম্মত নয় বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন মুকুল রায়। তার মতে, সরকারের সমস্ত ক্ষমতা ভোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে আইন তো মানতেই হবে।

এখানে সরকারের মধ্যে হিংসা চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুকুল রায় মন্তব্য করেন, “মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে আন্দোলন করলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত ওনার। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লোকসভা এবং রাজ্যসভাতে যখন সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে ভোটাভুটি হয়, তখন সংসদের দুই কক্ষের কোথাও অংশগ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনেকের মতে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক জন্ম নিতে পারে, এই কথা অনুমান করে নিজেকে কিছুটা দূরে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই রণকৌশলে আদতে সুবিধা হয়েছে ভারত সরকারের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই রণনীতিকেই হাতিয়ার করে পার্ক সার্কাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ শানান তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর লোকসভায় যখন ভোটাভুটি হচ্ছিল, সেই সময় উল্লেখযোগ্যভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের 8 জন সাংসদ অনুপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে চলচ্চিত্র অভিনেতা দীপক অধিকারী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহান, শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী, সাজদা আহমেদ, খলিলুর রহমান চৌধুরী, মোহন জাটুয়া প্রমূখ সাংসদ ছিলেন।

সিনেমার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সংসদে ভোটাভুটি পারেননি বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহান। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে যেমন প্রধানমন্ত্রীর ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ না করাকে কটাক্ষ করা হয়েছে, তেমনই মুকুল রায়ের তরফ থেকে তৃণমূলের 8 জন সাংসদের লোকসভায় ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ না করাকে তৃণমূল নেতৃত্বের হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছে।

এমতাবস্থায় বর্তমানে এনআরসি থেকে শুরু করে সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে জমজমাট ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়! সেদিকে নজড় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। ফলে প্রাক্তন নেত্রীর সঙ্গে প্রাক্তন সহযোগী রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবশেষে শেষ হাসি কে হাসেন! সেদিকে লক্ষ্য থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!