তিনি একসময় তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন। প্রায় সব বিষয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে দেখিয়ে দিতেন। অনেকে তো এও বলতেন, তৃণমূল কংগ্রেস দলটার নাম এখন আর তৃণমূল কংগ্রেস নয়, এখন সেই দলটার নাম “তৃণমুকুল কংগ্রেস।” তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন বিশ্বস্ত সেনাপতি মুকুল রায় বেশ কয়েক বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন।

আর যখন মুকুলবাবু বিজেপিতে নাম লেখালেন, তখন তৃণমূলের অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করে এবার তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেবেন। অনেক ক্ষেত্রে মুকুলবাবু নিজের প্রাক্তন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই অস্বস্তি বাড়িয়েও দিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে 19 টি আসন পাইয়ে দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, তিনি বঙ্গ বিজেপির চাণক্য।

তবে মাঝে মধ্যেই মুকুল রায় দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হওয়ার কোনো যোগ্যতাই ছিল না। তার দোষ ত্রুটিগুলোকে ঢেকে বামেদেরকে সরানোর জন্য তাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। তবে তার জন্য তিনি অনেক অপরাধ করেছেন। তাই এখন পাপ মোচনের জন্য তিনি বিজেপির হয়ে প্রচার করছেন। সূত্রের খবর, এবার ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন তার প্রাক্তন সৈনিক তথা বঙ্গ বিজেপির হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায়।

এদিন তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরাই মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছি। অনেক কিছু ঢেকে রেখে তাকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হয়েছিল।” কিন্তু কেন এরকম কথা বললেন মুকুল রায়! জানা যায়, এদিন এই বক্তব্য রাখার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্ঞানের ভান্ডার সকলের সামনে তুলে ধরেন বঙ্গ বিজেপির চাণক্য। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্ঞান খুবই সীমিত। তাই তো তিনি বলেন, রামমোহন রায় রাজ্য বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তাই তো তিনি বলেন, গান্ধীজিকে ফলের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়েছিল। তাহলেই বুঝুন, মমতার কতটা জ্ঞান রয়েছে!”

বিশ্লেষকরা বলছেন, মুকুল রায় মন্তব্য হাস্যকর হলেও অত্যন্ত সত্য। মাঝেমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলের মুখে পড়েছে। আর এবার নিজের প্রাক্তন নেত্রীর সেই সমস্ত মন্তব্যকে কোট করেই মুকুল রায় প্রমাণ করলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। আর বিজেপির মুকুল রায়ের এহেন মন্তব্য এবার রাজ্য রাজনীতিতে যে শাসক-বিরোধী তরজাকে আরও বাড়িয়ে দেবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল।

এখন গোটা পরিস্থিতি ঠিক কোন দিকে এগোয়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এ বক্তব্য নেহাতই মুকুলবাবুর রাজনৈতিক চাপের খেলা! অন্যদিকে আরেকাংশের মতে, মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই তৃণমূলের চাপ বেড়েছিল! আর তাই বিজেপির মধ্যে মুকুল ডেকেই সবথেকে বেশি আক্রমন করতে দেখা যায় তৃণমূলকে! এই পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে তিনি যদি রাজ্যে বিজেপির সরকার আনতে পারেন – তবেই তাঁর আজকের মন্তব্য যথার্থতা পাবে।