এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > পৌরসভার নির্বাচনেও কি বিজেপির পালেই বেশি হওয়া লাগতে চলেছে? জল্পনার পারদ চড়ছে রাজনৈতিকমহলে

পৌরসভার নির্বাচনেও কি বিজেপির পালেই বেশি হওয়া লাগতে চলেছে? জল্পনার পারদ চড়ছে রাজনৈতিকমহলে

লোকসভা ভোটে রাজ্যের যে ফলাফল হয়েছে তাতে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদলের তকমা হারিয়ে ফেলেছে রাজ্যের বামপন্থী দলগুলো বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টি মাথাচাড়া দিয়েছে, সেই বিষয়ে সংশয় নেই কারও। আবার লোকসভা ভোটের ফল যাই হোক না কেন, আগামী পৌরসভা নির্বাচনে বা 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের দলের শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও।

স্বাভাবিকভাবেই এই রকম একটি রাজনৈতিক অবস্থায় রাজ্য রাজনীতি যে প্রত্যেক দিন নতুন নতুন রাজনৈতিক কৌশল দেখতে পাবে, সেই বিষয়ে সংশয় নেই কারও মধ্যেই। আর এই ভাবেই ভিন্ন দল ভিন্নমত এবং ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বাঁকুড়া জেলার পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্মুখসমরে নামতে চলেছে যথাক্রমে তৃণমূল কংগ্রেস ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

পুর ভোটের দিন এখনও ঘোষণা না হলেও আগামী দুই হাজার কুড়ি সালে রাজ্যের মেয়াদউত্তীর্ণ পৌরসভাগুলিতে যে পৌর নির্বাচন হতে চলেছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। সেই মোতাবেক 2020 সালে কার্যকর পূর্ণ করতে যাওয়া বাঁকুড়া পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নামতে শুরু করেছে রাজ্যে প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে যেমন মানুষের সমস্যা শোনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষকে সচেতন হতে বলছে। আবার এই দুই রাজনৈতিক দলের সুর থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী হয়ে মানুষের দাবি-দাওয়া নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কনভেনশন করছে কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী।

আর সকলের উদ্দেশ্য যে আগামীদিনের পৌরসভা নির্বাচন, তা বলাই বাহুল্য। তবে গতবারের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বাঁকুড়া পৌরসভায় 24 টি ওয়ার্ডের মধ্যে 23 টি ওয়ার্ডের এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় বাঁকুড়া পৌরসভার ক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরের পাল্লা যে ভারী, সেই বিষয়ে সংশয় নেই কারও। তবে লড়াইয়ের আগেই আত্মসমর্পণ করতে সম্পূর্ণ নারাজ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের দাবি, লোকসভা নির্বাচন আর পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।

এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বাঁকুড়া পৌরসভার তৃণমূলের পৌর প্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “বিগত পাঁচ বছরে বাঁকুড়া শহরের যে কাজ হয়েছে, অতীতে কখনও তা হয়নি। তাই মানুষ যে আমাদের পক্ষে থাকবেন, এই নিয়ে দ্বিমত নেই।” তবে কৌশল সাজাতে নতুন নতুন রণকৌশল নিতে পিছুপা হচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস।

ইতিমধ্যেই দুর্গা পুজোর আগে এলাকায় সফর করে গেছেন হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা তথা বাঁকুড়া জেলার তৃণমূল পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। আগামী পৌরভোটে নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে পঞ্চায়েত স্তরে যোগ্য তৃণমূল নেতৃত্বকে শহরের ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। এই ক্ষেত্রে শুভেন্দু বাবুর উদ্দেশ্য শহরের যে সমস্ত নেতারা এলাকায় ভালোমতো কাজ করেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার থাকলে অচেনা মানুষদেরকে যদি দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে ভোটারদের কথা বলতে সুবিধা হবে।

কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার দুটি লোকসভা আসনে জয়লাভ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কাজেই 24 টির মধ্যে 23 টি আসনে এগিয়ে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে বাঁকুড়া পৌরসভার পৌর নির্বাচন যথেষ্ট আশা জাগানো নির্বাচন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। সেই বিষয়ে নিজেদের জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয় দেখা যাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাদের মধ্যে। কিন্তু শুধুমাত্র আত্মসন্তুষ্টি নিয়ে বসে না থেকে এলাকাভিত্তিক জনসংযোগে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা। তবে নিজেদের রণনীতি যেন প্রকাশ্যে না চলে আসে, সেই জন্য নিজেদের কর্মসূচি কিছুটা গোপনে রাখছে বিজেপি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

রাজনৈতিক রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে বাঁকুড়ার পৌরসভার ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাকর্মীরা। এদিন এই বিষয়ে বাঁকুড়া জেলা ভারতীয় জনতা পার্টির সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “ভারতবর্ষকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের নেতাকর্মীরাও মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে এই নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে বলছে। শুধু তাই নয়, জলের অপচয় বন্ধ করার জন্য মানুষকে অনুরোধ করছেন তারা।”

কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পৌরসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জনসংযোগ যাত্রা না করে পরিবেশ সচেতনতাকে কেন সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে! তবে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি অত্যন্ত সাংগঠনিক। নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরাসরি কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে না গিয়ে দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্লাস্টিক বিরোধী যাত্রাকে সামনে রেখে আদতে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

বিজেপির বাঁকুড়া জেলার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ বাবু জানিয়েছেন, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে শহরে 139 টি বুথেই কমিটি তৈরি করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ইতিমধ্যেই 127 টি বুথ কমিটি গঠন হয়ে গেছে এবং সেই কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যেই মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে শুরু করেছে। কিন্তু নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

সেক্ষেত্রে দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী রীতিমতো বলে গেছেন, দুর্গাপূজা শেষ হতেই এলাকায় পুনরায় সফরে আসবেন তিনি। এলাকা সফরে এসে সাধারণ মানুষের সমস্যা শুনবেন বলেও জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়ে বাঁকুড়ার সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “পৌরভোটের প্রচার ধাপে ধাপে শুরু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শহরের আগের কমিটিগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে।”

এদিকে রাজ্যের রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া সিপিএমও বাঁকুড়া পৌরসভা ভোটকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট তৎপরতায় রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এই ক্ষেত্রে পুনরায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং নির্বাচনে ফল ভালো করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে বাম শিবির। দলের জেলা সম্পাদক অজিত পতি ইতিমধ্যেই বলেছেন, “জেলার তিনটি পৌরসভায় মানুষের সমস্যা ও দাবি-দাওয়া জানতে আমরা ওয়ার্ড ভিত্তিক কনভেনশন শুরু করেছি। পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।”

কিন্তু যে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেভাবেই পালন করুন না কেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলাজুড়ে যেভাবে ভারতীয় জনতা পার্টির নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন, তাতে আগামী দিনে বাঁকুড়া পৌরসভার নির্বাচন হলে বিজেপির পালেই বেশি হওয়া লাগতে চলেছে। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যদি নিজেদের রণকৌশল পাকাপোক্ত না করে, তাহলে শেষ হাসি কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি হাসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন আগামীদিনে নির্বাচনের দিনক্ষণ কবে ঘোষণা হয়, আর সেই নির্বাচনের ফলাফল কি হয়! সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!