এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া > পিআরটি স্কেলের দাবিতে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য জেলায় জেলায় প্রস্তুতি শুরু শিক্ষকদের

পিআরটি স্কেলের দাবিতে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য জেলায় জেলায় প্রস্তুতি শুরু শিক্ষকদের


সর্বভারতীয় বেতন কাঠামো আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত সংগঠন উস্থি ইউনাইটেডের জেলা কমিটির সভা হয় গতকাল পুরুলিয়ার একটি সভাগৃহে। গত ২৯ এবং ৩০ শে অক্টোবর কলকাতায় উস্থি ইউনাইটেড প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের ডাকে অবস্থান কর্মসূচীতে জেলা থেকে ১৫০০-এরও বেশি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ২০১২ সালের এনসিটিই নির্দেশিকা অনুসারে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের বাধ্যতামূলক ভাবে উচ্চমাধ্যমিকে ৫০% এবং দুই বছরের ডিএলএড করানো হয়। পরে ২০১৪ এবং ২০১৬ সালের নিয়োগেও উচ্চমাধ্যমিক ৫০% যোগ্যতাতেই নিয়োগ হয়। কিন্তু বেতন কাঠামো সেই পুরোনো মাধ্যমিক বেতন কাঠামোই রয়ে যায়।

এ বিষয়ে উস্থি ইউনাইটেড ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে রাজ্যের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রকের কাছে লাগাতার আবেদন, নিবেদন করে চলেছে যাতে বেতন কাঠামো সংশোধিত হয়। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে স্মারক লিপি দেওয়া, কলকাতায় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করা, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারী দ্যুষ্মন্ত নারিয়ালাকে স্মারকলিপি দেওয়া, ১ লা জুন অবস্থান বিক্ষোভ করে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া, ৭ ই আগস্ট রাণী রাসমনি রোডে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষকের জমায়েত করে নবান্নের আধিকারিককে স্মারকলিপি দেওয়া, ১ অক্টোবর বিকাশভবনে মানববন্ধন করে স্মারকলিপি দেওয়া – এগুলো সবই একে একে পর্যায়ক্রমে করা হয়েছে।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

সংগঠনের দাবি – তবু নাকি দপ্তর বা শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে কিছু জানেন না! ২৯ শে অক্টোবরের সভায় সব প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন, দলমত নির্বিশেষে শাসক-বিরোধী সব দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। পুরুলিয়া থেকে সব জেলা সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক, প্রাথমিক শিক্ষক এমএলএ উমাপদ বাউরী, মন্ত্রী শান্তিরামবাবুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু কেউ উপস্থিত হননি, তবু সাধারণ শিক্ষকেরা নিজ প্রাপ্য স্কেল আদায়ের জন্য সদলবলে গিয়েছিলেন। শিক্ষকদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে, যখন ২৯ তারিখে এক মিডিয়া চ্যানেলে দেওয়া বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন যে শিক্ষকেরা আগে ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিক। অর্থাৎ প্রকারান্তরে তিনি শিক্ষকদের ‘অযোগ্য’ বলেন।

সংগঠনের আরও দাবি – এর প্রতিবাদে এবং প্রশাসনের সমাধানের প্রতি লাগাতার অনীহার জন্য শিক্ষকেরা প্রতিবাদ স্বরূপ শহীদ মিনারের অদূরে ডোরিনা ক্রসিং অবরোধ করে। দাবী একটাই সরকারকে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে হবে। কিন্তু, সেই শান্তিপূর্ণ অবরোধকে প্রশাসন চরম নির্লজ্জভাবে পুলিশি হস্তক্ষেপে হঠিয়ে দেয়। শিক্ষকদের মারতে মারতে, কলার ধরে টানতে টানতে ভ্যানে তোলে। মোট ১১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয় যার মধ্যে পুরুলিয়া জেলার চন্দন চ্যাটার্জী, অশিউদ্দিন আনসারী, জয়দীপ্ত চট্টরাজ, বিমান চ্যাটার্জী, স্বরূপ নামতা, সুবিনয় ব্যানার্জী ও শিক্ষিকা মৌসুমী রায় ছিলেন।

শিক্ষকদের গ্রেফতার – আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দেয়। মঞ্চ থেকে ঘোষনা হয় গ্রেফতার শিক্ষক শিক্ষিকাদের অবিলম্বে ছাড়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করে দেওয়া হবে। প্রশাসন, অবশেষে শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়। তবু প্রশ্ন রয়েই যায়, শিক্ষক – যাঁরা সমাজ তৈরীর কারিগর তাদের এই হেনস্থা কেন? গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন দমন করতে পুলিশি জুলুম কেন? উস্থি ইউনাইটেডের পুরুলিয়া জেলা কমিটির এক শিক্ষকের বক্তব্য – এনসিটিই অনুমোদিত যোগ্যতা অর্জন করানো হয়েছে, তাই এনসিটিই নিয়ম মেনে বাকী সব রাজ্য যেভাবে বেতন কাঠামো সংশোধন করেছে, ঠিক একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও বেতন কাঠামো সংশোধন করতে হবে। দাবী আদায়ের জন্য জেলে গিয়েছি, প্রয়োজনে আবার জেলে যেতে রাজী – কিন্তু পরিবার-সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে বেতন কাঠামো সংশোধনের আন্দোলন জারী থাকবে।

তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু মহল থেকে এই আন্দোলনের গায়ে রাজনৈতিকতার কালি ছেটানোর অশুভ প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু, আমরা শাসক-বিরোধী সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম কারণ আমরা রাজনীতি চাই না – আমরা দাবী আদায় করতে চাই। আজকের সভায় মেরুদণ্ড সোজা করে ন্যায্য বেতন কাঠামোর দাবিতে যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের চন্দন ও ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়। সভা থেকে বার্তা দেওয়া হয় – শিক্ষামন্ত্রী যেহেতু আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন তাই রাজ্য সমাবেশের মঞ্চ থেকে ১৫ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, সেই সময়সীমার মধ্যে সরকার আলোচনায় বসুক। নইলে আরো বৃহত্তর আন্দোলন করতে শিক্ষকেরা প্রস্তুত। প্রশাসনের উদাসীনতাতেই সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করছে। এখন দেখার সরকার সমাজ গড়ার কারিগরদের দাবী মেনে আলোচনায় বসে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেয়, নাকি অবহেলার নীতি নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে বলে দাবি শিক্ষকদের।

https://www.youtube.com/watch?v=wH7Ci3rBURk

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!