এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৩

রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৩


সমীরকে কল করেছিল রনো।সমীর অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে তার একটারও উত্তর রনো দিতে পারেনি। কেন সে শ্রী র ব্যাপারে কিছুই জানে না। সমীর বলেছে আগে জানা দরকার ওর পাস্ট সম্পর্কে। সে রণকে সাজেস্ট করেছে ওর সাথে যেন বন্ধুত্ব করে ওর থেকে সব জানে। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে রনো। না অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু শ্রী কথা তো বলিনি। পাস্ কাটিয়ে চলে গেছে। কদিন খুব কাজের চাপ ছিল রনোর। তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে বের হতেও পারেনি, আজ বের হয়েছে। লেকের পাস্ দিয়ে যাবার সময় মনে হলো শ্রী আছে কি ভেতরে? গিয়ে দেখলো আছে সেদিন যেমন দেখেছিলো আজ তেমনি বসে জলে কিছু একটা দেখছে।

আজকেও পাশে বসলো রনো। আজ দেখেছে শ্রী। রনো বসার সাথে সাথেই শ্রী উঠে পড়লো। রনো বললো – একটু কথা বলা যায় না।

বসলো শ্রী।

রনো – সেদিনের জন্য সরি , আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি ওটা তুমি, আপনি আমি ভেবেছিলাম অদিতি। সরি।

শ্রী- আমারও ভুল ছিল ওই ভাবে রিএক্ট করা ক্ষমা করবেন।

রনো – আসলে আমি ওর সাথে বেট ধরে ছিলাম সো। তুমি রং আপনি খেলেন না কেন?

একটু চুপ থেকে শ্রী বললো – অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমাকে যেতে হবে।

চলে গেলো শ্রী। না আর ডাকেনি রনো। আস্তে আস্তে কথা হওয়ায় ভালো।

——————————————————————————

পর পর কয়েকদিন রনো লেকে গিয়ে দেখলো শ্রী নেই। হয়তো রনো যাচ্ছে বলেই আর যায়না। কিন্তু এবার কথা বলবে কি করে? প্রায় এক বাড়িতে থাকলেও দূরত্ত্বটা হাজার মাইলের বেশি।আর এই দূরত্বটা যত বেশি হচ্ছে তাতো রনো এগোচ্ছে শ্রীর দিকে।

এদিকে মিসেস মুখার্জীকে যতটা কড়া মনে হয়েছিল ততটা তিনি নন। শাসন থাকলেও ভালোবাসাও মিশে আছে।
এদিন মিসেস মুখার্জী ধরলেন রনো আর রাহুলকে – এই ছেলেদুটো তোমরা না ডাক্তার। লোককে জ্ঞান দাও। এই করবেন না ,ওই করবেন না।আর নিজেরা সিগারেট খাচ্ছ?

রাহুল – না আন্টি, আমরা ওসব ছুঁয়েও দেখিনা। কেউ খেলে তাকেও মানা করি।

মিসেস মুখার্জী – আচ্ছা, কালকে আউট হাউসের বারান্দায় দুটো ভূত এসে সিগারেট খাচ্ছিলো? কি মনে হয় তোমাদের আমার বয়েস হয়ে গেছে বলে আমি চোখে কম দেখি ?

রনো – না আন্টি আসলে কাল খুব ট্রেস গিয়েছিলো , নাহলে আমরা খাই না। কাউকে খেতেও দি না। আমাদের ডাক্তারিতে এসব মানা। আমরা ভালো ছেলে।

মিসেস মুখার্জী – আমি রিপোর্ট পেয়েছি। গাদা গাদা সিগারেট রয়েছে তোমাদের ঘরে। সীতা বলেছে – সে ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেছে।

রাহুল – আসলে আন্টি, সকালে পেট পরিষ্কার করতে লাগে, গরম না পড়লে হয়না।

অদিতি কোনো মতে হাসি চেপে রেখেছে। এগুলো ম্যানেজ করতে রনো আর রাহুল খুব ভালো করে জানে। কিন্তু না এবারে হলো না।

মিসেস মুখার্জী – গরম জল খেয়ে কাল থেকে পেট পরিষ্কার করবে। আমি সকালেই পাঠিয়ে দেব সীতাকে দিয়ে। আর যেন ওসব খেতে না দেখি।
আজকালকার ছেলেরা সব হয়েছে গাঞ্জা, সিগারেট, – এই তোমরা ওসব মদ টড খাও নাকি? মাতাল হয়ে রাস্তায় পরে থাকবে, লোকের বাড়ি ঢিল ছুড়বে আর লোকে আমাকে বলবে কাদের রেখেছে, এসব হবে না।
ডায়লগটা চেনা যেদিন থাকবে বলে কথা বলতে এসেছিলো রনো আর রাহুল এই কথাই বলেছিলেন মিসেস মুখার্জী।

রনো বললো -ছি ছি আন্টি আপনি আমাদের এতটা খারাপ ছেলে ভাবলেন। গাঞ্জা, সিগারেট মদ ওসব খাইনা, ওসব ছোঁওয়া মানে পাপ , আমরা জানি। আমাদের বাড়ি থেকে ওসব মানা করে দিয়েছে। আমরা ভালো ছেলে।

রাহুল – আমি মদ জানি কিন্তু খাইনা ? তবে টড বলে কিছু জানিনা। আমরা সত্যি ভালো ছেলে।

মিসেস মুখার্জী – মুখ দেখলেই বোঝা যায় কতটা ভালো ছেলে। শোনো মনে রেখো আমি কলেজে পড়িয়েছি। আমি অনেক ছেলে মানুষ করেছি, আমাকে নতুন করে শিখতে হবে না , মুখ দেখলেই বুঝতে পারি কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা ? আর তোমাদের মুখ দেখলেই বুঝতে পারছি কতটা শান্ত শিষ্ট আর ভালো ছেলে তোমরা।

রনো – আন্টি আপনি আমাদের এইসব বলছেন, ভাবছেন আমরা খারাপ ছেলে, মিথ্যা বলছি আমরা কথাটা শুনে কিন্তু খুব দুঃখ পেলাম।

রাহুল – হ্যাঁ , বুকটা চিরে দেখতে পারলে দেখতাম কতটা কষ্ট পেয়েছি।

এবার মিসেস মুখার্জী বললেন – চুপ করো, একদম নাটক করবে না। শোনো আমার আর কি? যেদিন বাবা হবে বুঝবে সন্তানের জ্বালা। আমি একটাকে হারিয়েছি তাই ভয় হয়, চাইনা অন্য কেউ হারাক।

রনো – সরি আন্টি? আমরা মজা করছিলাম। হারিয়েছেন মানে ?
অদিতি ,রাহুল, রনো কেউই জানতো না এই কথা।

মিসেস মুখার্জী বললেন ওনার একটা ছেলে ছিল, কলেজে পড়ার সময় ক্যান্সার হয়ে মারা গেছে। তার ধারণা সিগারেট মদ খেয়েই এইসব হয়েছে তাই একেবারে তিনি এসব পছন্দ করেন না। বললেন আজ সে থাকলে কি আর আমার এমন হতো বলো। এই বয়সে বাজার যাওয়া, দরকারি সব কিছু নিজে করা। সে থাকলে সেই করতো।

অদিতি – সরি আন্টি আমরা জানতাম না। আসলে কোনো পিকচারও তো দেখিনি তাই।

মিসেস মুখার্জী – না বাইরে রাখিনি। চোখের সামনে মালা পোড়ানো ছবি দেখলে, সহ্য হতো না।

রনো – আপনার আর কোনো ছেলে মেয়ে নেই।

মিসেস মুখার্জী – আছে এক মেয়ে, সে বিয়ে করে অন্য জায়গায় থাকে। আসে মাঝে মাঝে , যাই হোক আমি আজ বেরোবো তোমাদের খেতে দিতে বলছি। সীতা – ওদের খেতে দাও।

রনো বললো কোথায় যাবেন ? চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।

মিসেস মুখার্জী – না থাক, পরে আবার কথা শোনাবে।

রাহুল – আমরা একটু আধটু সিগারেট খাই কিন্তু আমরা এতটাও খারাপ ছেলে নয় আন্টি, আর ওসব সত্যি ছুঁই না।

রনোর দিকে তাকিয়ে বললেন। আমার কিন্তু অনেকটা সময় লাগবে তুমি তখন বলবে না তো যে বুড়িটাকে এনে ফেঁসে গেলাম।

রনো – নারে বাবা, একটু বিশ্বাস করুন না।

খাওয়া হলে রনো আর মিসেস মুখার্জী বেরোলেন বাইকে করে। অনেকক্ষন পরে এলেন দুজনে। আসার সময় রনো দেখলো শ্রী আসছে। যেমন আগেও দেখেছে কোনো দিকে কোনো খেয়াল নেই। শুধু রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। রনো জিজ্ঞাসা করলো। শ্রী কি বরাবরই এমন ?

মিসেস মুখার্জী বললেন – ওকে ওর মতো থাকতে দাও রনো।

আর কোনো কথা হলো না।

 

রনো ফিরে এসে দেখলো রাহুল আর অদিতি শ্রীকে নিয়েই আলোচনা করছে। রনোরও মনে হয়েছে কথাটা।

রাহুল – আমরা যা ভাবছি তুই ও কি তাই।

রনো – হুম, তার মানে শ্রী মিসেস মুখার্জীর ছেলের বৌ বা ভাবি স্ত্রী, এই মিসেস মুখার্জীর ছেলে মারা যাওয়াতে শ্রী নিজেকে এইভাবে গুটিয়ে রেখেছে। আর মনে হয় বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিল যে কারণে শ্রীর বাড়ির লোক ওর সাথে সম্পর্ক রাখে নি।

রাহুল – ইয়েস।

অদিতি – আমি আগেই তোকে বলেছিলাম না মিসেস মুখার্জি সব জানেন।তবে শ্রী কিন্তু আন্টিকে আন্টিই বলে, মা বলে না।

রাহুল – আরে আমাদের তো রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে কিন্তু তুই এখনো আমার মাকে আন্টি বলিস, না আমি তোর মাকে আন্টি বলি এখানেও সেম।

অদিতি – হুম।

রনো – বুঝেছি। কিন্তু আশ্চর্য আন্টিও চান না যে শ্রী এর থেকে বের হোক। তাই আজ আন্টিকে শ্রীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন – ওকে ওর মতো থাকতে দাও।

অদিতি – মে বি শ্রীর মধ্যে ছেলেকে খোঁজেন। মে বি ভাবেন শ্রী ওনার ছেলের স্মৃতি।

রাহুল – হতে পারে কিন্তু তবুও এটা কোনো যুক্তি নয়। শ্রীর বয়স কতটুকু ? সারাজীবন পরে আছে ওর। আন্টির কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে ওকে? কোথায় থাকবে ও?

অদিতি – আমরা চাইলেই বা কি করতে পারি বল। শ্রী নিজেও তো চায় না।

রনো মুখে কিছু বললো না। কিন্তু ও শ্রীকে এইভাবে বং ছাড়া কিছুতেই থাকতে দেবে না। তার জন্য যা করতে হয় করবে রনো। যতদূর যেতে হয় যাবে।

রনো আর রাহুলের সাথে বেশ মিশে গেছেন মিসেস মুখার্জী। মিসেস মুখার্জী এখন ওরা কি খেতে ভালোবাসে, কি চায় না চায় সব জেনে রান্না করেন। যা কথা হয়েছিল তার থেকে বেশিই করেন। এদিকে রাহুল আর রণও নিজেদের পছন্দ মতো চিকেন, মটন, মাছ এনে দেয় না টাকা নেয়না মিসেস মুখার্জীর থেকে। মিসেস মুখার্জীর দরকারি অনেক কাজ করে দেয় ওরা।একেবারে নিজের লোক উঠছে আস্তে আস্তে।

এসব তো বেশ চলছে কিন্তু রনো চায় শ্রী এর থেকে বেরিয়ে আসুক। ও চেষ্টা করবেই আন্টিকে লুকিয়েই। কিন্তু আর কথা বলতে পারছে না শ্রীর সাথে। দেখাই হয় না। কেন যেন রোনোর মনে হয় শ্রী ইচ্ছা করে লুকিয়ে থাকে ওর থেকে। রনো ওর সাথে কথা বলতে চাইছে সেই কারণে। কিন্তু সেদিন ভালো লাগছিলো না রনোর খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছে ও হাসপাতাল থেকে। অদিতির থেকে জেনেছে কোন স্কুলে পড়ায় শ্রী। সেখানে গেছে। বাইরে ওয়েট করেছে। শ্রী কেন দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো হেঁটে ওর পাস্ দিয়ে চলে গেছে। রনো বাইক নিয়ে এগিয়ে এসে শ্রীকে বলেছে – আমি বাড়িতেই যাচ্ছি, এসো পৌঁছে দিচ্ছি।
শ্রী না করে দিয়েছে।

রনো লক্ষ রেখেছে কখন সকালে বের হচ্ছে শ্রী। রণও বেরিয়ে পড়েছে বাইক নিয়ে। দেখেছে সকালে ও লেকের ধরে যায়। সেখানে বসে থেকে। কতকগুলো বাচ্চা ওর কাছে আসে। তারা ওকে অনেক কথা বলে। শ্রী জোর করেই হালকা হাসে। ওদের কথা শোনে ওদের সাথে কথা বলে। ওদেরকে খাবার দে। ওরা চলে গেলে বসে থাকে চুপ করে। কিছুক্ষন পর উঠে স্কুলের দিকে যায়। সবটাই লক্ষ করেছে রনো। কিন্তু এবারে শ্রীকে রনো দেখা দেয়নি। ২- ৪ দিন লুকিয়ে শ্রীর রোজকার রুটিন দেখেছে রনো।

রনোর মাথা জুড়ে শুধুই শ্রী কিভাবে কথা বলবে ,জানবে এইসব চলছে। রনো জানে শ্রী শুধু মাথা অবধি আছে কিন্তু মনের কোনটার খোঁজ এখনো নেওয়া হয়নি রনোর।

কি মনে হয় শ্রী এমন কেন? সত্যি কি ও মিসেস মুখার্জীর ছেলের বৌ। নাকি অন্য কিছু ? নাকি একটা এমন অতীত যেখানে। ……………………..

আপনাদের কি মনে হয়। কমেন্ট করে জানান আমাদের। দেখি শ্রীর অতীতের ব্যাপারে কেউ বোঝেন কিনা ?

পূর্ববর্তী অংশ – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ২

 

পরের পর্ব – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৪

 

 

 

 

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!