ষষ্ঠ পে কমিশন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা রুখতে আসরে সরকারি কর্মচারী পরিষদ বিশেষ খবর রাজ্য January 3, 2018 ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। জানুয়ারী মাস থেকেই রাজ্য সরকার ১৫% ডিএ দিলেও এখনও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় ৩৯% ডিএ কম পাচ্ছেন তাঁরা। আর এই অভিযোগকেও ছাপিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ আরো বেড়েছে ষষ্ঠ পে কমিশন নিয়ে রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রিতায়, ভেঙে গেছে তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ। আর তাই এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছে বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী এই নিয়ে পে কমিশন অফিসের অদূরে উন্নয়ন ভবনের সামনে দুপুর ২ টো থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। আর এই কর্মসূচির মধ্যমনি তথা প্রধান পুরোহিত বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশীষ শীল একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রিয়বন্ধু বাংলার মুখোমুখি হলেন। প্রিব – রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এরকম এক বিক্ষোভ কর্মসূচি নিতে যাওয়ার প্রধান কারন কি? দেবাশীষবাবু – এই মুহূর্তে সারা ভারতবর্ষে ২১ টি রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মত বাড়তি বেতন ও মহার্ঘ্যভাতা চালু করে দিয়েছে। বেশিরভাগ রাজ্যেই ২০১৬ সালের ১ লা জানুয়ারী বা খুব বেশি হলে ১ লা জুলাইয়ের মধ্যে তা চালু হয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ষষ্ঠ পে কমিশন কোনো সুপারিশই পেশ করে নি। আমরা সবাই জানি যে ‘সেন্ট্রাল পে স্কেল এন্ড ফিক্সেশন’ গোটা দেশে মডেল হয়, অর্থাৎ সোজা ভাষায় ‘এক দেশ, এক বেতন’, এই সরকার আসার আগে পর্যন্ত এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নি, তাহলে এখন কেন হবে? কেন নিজেদের সুপারিশ করতে কমিশন এতো টালবাহানা করবে? প্রিব – কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন সময়মত এবং সাধ্যমত তিনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষা করবেন। দেবাশীষবাবু – ষষ্ঠ পে কমিশনের সুপারিশ পেশের এতো টালবাহানার মাধ্যমেই প্রমাণিত, পুরোটাই রাজ্য সরকারের কর্মচারী স্বার্থ উপেক্ষা ও বঞ্চনার চক্রান্ত। এটা আরো পরিষ্কার হয় যখন দেখি যে ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হলো হঠাৎ করে। এই নিয়ে ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ তিন বছর করা হল, এমন জিনিস গোটা ভারতবর্ষে নজিরবিহীন। এমনকি এ রাজ্যেও অতীতে এমন কখনো হয় নি। এরফলে সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যের সরকারি কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী সহ সংশ্লিষ্ট সবাই আর্থিকভাবে দারুন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রিব – কিন্তু আপনাদের সংগঠন তো বিজেপি প্রভাবিত, রাজনৈতিক রঙ থাকায় সামগ্রিকভাবে সবাইকে পাশে পাবেন? দেবাশীষবাবু – দেখুন আপনাকে আগেই বললাম, রাজ্য সরকারের এই বঞ্চনার জন্য কর্মচারীমহল তথা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সকলেই সামগ্রিকভাবে ক্ষুব্ধ। আর বঞ্চনার তো কোনো রাজনৈতিক রঙ হয় না। আপনি যে দলের সমর্থকই হন না কেন দিনের শেষে আপনি নিজে বা আপনার পরিবার এই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। যেভাবে বারেবারে ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, তাতে সন্দেহ হচ্ছে ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে আদৌ পরিবর্তিত পে স্কেল রাজ্য সরকারি কর্মীদের দেওয়া হবে না। এইভাবে বারবার কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর রাজনৈতিক রঙের কথা যদি বলেন, এই বঞ্চনা নিয়ে প্রতিটা মানুষ ফুঁসছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল প্রভাবিত সংগঠনের মানসিক সমর্থন আমরা নিশ্চয় পাবো। কিছুদিন আগেই তো, রাজ্য সরকারের এই বঞ্চনা আর মানতে না পেরে তৃণমূলের কোর কমিটির প্রাক্তন সদস্য লতিকা মন্ডল ও সমীর ভট্টাচার্য, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত শিক্ষাবন্ধু সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল শীল ও মন্মথ বিশ্বাস, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের সুশান্ত মজুমদার, তুহিন গাঙ্গুলী প্রমুখ আমাদের সংগঠনে সরাসরি যোগ দিলেন। রাজ্য সরকার এখনো যদি এই বঞ্চনার রাজনীতি চালিয়ে যায়, তাহলে আগামীদিনে আরো বড় সংখ্যায় মানুষ আমাদের সঙ্গে আসতে বাধ্য হবেন। প্রিব – রাজ্য সরকারের কাছে আপনাদের প্রধান দাবি কি? দেবাশীষবাবু – এই বঞ্চনার রাজনীতি সরিয়ে রেখে কোনো অজুহাত ছাড়াই ‘অতি দ্রুত ষষ্ঠ পে কমিশনের স্থায়ী সুপারিশ’ এবং ‘সেন্ট্রাল পে স্কেলের’ সমমানের সুপারিশ রাজ্য সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। ডিএ সংক্রান্ত স্থায়ী বন্দোবস্তের (বছরে দুবার বৃদ্ধি) সুপারিশও করতে হবে। আর যেহেতু ভারতবর্ষের বেশিরভাগ রাজ্যেই ২০১৬ সালের ১ লা জানুয়ারী থেকে কেন্দ্রীয় হারে বাড়তি বেতন ও মহার্ঘ্যভাতা চালু হয়েছে তাই এরাজ্যেও ২০১৬ সালের ১ লা জানুয়ারী থেকেই তা লাগু করতে হবে এবং আজ পর্যন্ত সেই বকেয়াও অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। প্রিব – আপনাদের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে শীর্ষ নেতৃত্ত্বকে পাশে পাচ্ছেন? দেবাশীষবাবু – বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আমাদের এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং সেদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে রাজ্যের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে বক্তব্যও রাখবেন। প্রিব – আপনার কি মনে হয় এই কর্মসূচির পরই রাজ্য সরকারের অবস্থান বদলে যাবে? সব সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে? দেবাশীষবাবু – রাজ্য সরকার যদি দ্রুত আমাদের দাবি না মেটায় তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি ‘নবান্নমুখী’ হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের উপর দিনের পর দিন এই বঞ্চনা আর আমরা মুখ বুজে কিছুতেই মেনে নেব না। আমরা তো অন্যায় কিছু দাবি করছি না, নিজেদের প্রাপ্যটুকু শুধু চাইছি। সরকারি কর্মীদের ক্ষোভের আঁচে শাসকদলের সরকারি কর্মচারী সংগঠনে ভাঙন শুরু হয়েছে, ভবিষতে আরো বড় ভাঙন হতে চলেছে। তাই সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং সরকারের এই বঞ্চনার প্রতিবাদে সরকারের কাছে ‘কঠোর বার্তা’ দেওয়ার সময় এসেছে। রাজ্য সরকার তা যত তাড়াতড়ি বুঝে এই ঘৃণ্য বঞ্চনার রাজনীতি বন্ধ করবে তত মঙ্গল, কিন্তু সরকারি কর্মীদের এই বঞ্চনার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিতে আন্দোলন তীব্রতর করবোই। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাবোই। আপনার মতামত জানান -