এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শোভনকে আটকাতেই কি বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন দেবশ্রী, তদন্তে নামছে গেরুয়া শিবির

শোভনকে আটকাতেই কি বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন দেবশ্রী, তদন্তে নামছে গেরুয়া শিবির


যোগদান পর্ব সময় থেকে আধ ঘণ্টা পিছিয়ে হলেও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান। কিন্তু ইংরেজি ক্রাইম থ্রিলার সিনেমার মতো এখন রাজ্য-কেন্দ্র দুই জায়গাতেই বিজেপি নেতাদের কাছে তদন্তের বিষয় দেবশ্রী রায়।

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল কলকাতা পৌরসভার ভূতপূর্ব মেয়র পূর্বমন্ত্রী তথা একাধিক দপ্তরে দায়িত্বে থাকা দলের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। আর এই টানাপোড়েন ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন প্রতিস্থাপনকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও পরবর্তীতে তার মান অভিমানে এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যেখান থেকে আর কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি দল এবং শোভনবাবু।

সম্পর্ক ও সম্পর্কের টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মর্যাদা। তার কেরিয়ারের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই 2019 সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পরেই যখন তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার মাটিতে নিজেদের জমি হারানোর আশঙ্কায় উঠছে, তখন দলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদকে।

কিন্তু ততদিনে পর্দার আড়ালে খেলতে শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের নেতৃত্বরা। তারা ভালই বুঝতে পেরেছিল শোভন-বৈশাখী বিতর্কে যখন সম্মুখ সমরে, তৃণমূল কংগ্রেস এবং শোভনপত্নী রত্নাদেবী তখন কিছুটা ব্যাক ফুটে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের দলে যোগদান করাতে পারলে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ব্যাপক লাভবান হবে ভারতীয় জনতা পার্টি। যেমনটা হয়েছিল মুকুল রায় যোগদানের পরে। ফলে তার কিছুটা অংশ শোভনবাবুর মধ্যে দিয়েও দল পেতে পারে। তাই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন, সুব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমূখ যোগাযোগে ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।

যদিও এক সময় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। দিদি ভালোবেসে একাধিক দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বানিয়েছিলেন প্রিয় ভাই কাননকে। শুধু তাই নয়, কলকাতা পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি একাধিক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন শোভনবাবু। আবার নিজের জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতিও ছিলেন। এককথায় স্পষ্ট, এহেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ক্ষমতায় থাকা শোভনবাবুর পক্ষে দলত্যাগের সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পাশাপাশি পরবর্তীতে নিজেদের অবস্থান পাল্টে একের পর এক হেভিওয়েট নেতা আসলে নেমে শোভনবাবুর মান ভাঙাতে চেষ্টা করে। শেষ খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনবাবুকে মৎস্য দপ্তরের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে আসতে আহ্বান জানালে হিতে বিপরীত হয়। ইস্তফা দেন শোভন বাবু। আর তারপর গত বুধবার দলের সঙ্গে সব মোহমায়া ত্যাগ করে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দপ্তরে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন কাউন্সিলর তথা বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু এদিনের সভায় যোগদানের আগে বিজেপি দপ্তরের মধ্যে দিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বাংলার খ্যাতনামা অভিনেত্রী কলকাতার রসগোল্লাক্ষ্যাত রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে। তখন কেন্দ্রীয় দপ্তরে বিজেপি সম্পাদক অরবিন্দ মেননের ঘরে বসে ছিলেন শোভন-বৈশাখী এবং রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়প্রকাশ মজুমদার। এর মধ্যেই কাচের ঘরের বাইরে অর্ধেক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় দেবশ্রী রায়কে।

সকলে ভাবেন, দেবশ্রীদেবী বুঝি শোভনবাবুর সঙ্গে দলে যোগদান করতে এসেছেন। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে দেবশ্রীকে দেখামাত্র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ও দলে যোগ দিলে আমি যোগদানের মধ্যে নেই।” সকলের মধ্যে তখন একটা বিষম পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ শোভনবাবুর যোগদান পর্ব যথেষ্ট গোপনীয় রাখা হয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্বের মনে ভয় ছিল, শোভনবাবুর যোগদানের কথা জানতে পেরে তাকে ভুয়া মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করে নিতে পারে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। তাই সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে একেবারে শেষ মুহূর্তে সার্বজনীন করা হয় শোভন-বৈশাখীর যোগদানের বিষয়।

এমত অবস্থায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়ার পর বিজেপি কার্যকারী সভাপতি জেপি নড্ডা শরণাপন্ন হওয়ার পরে দলীয় সূত্রে ঘোষণা করা হয়, আপাতত দলে যোগদান করছেন না দেবশ্রী রায়। তারপর এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় সাড়ে চারটে নাগাদ। বিজেপিতে যোগদান করে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, দেবশ্রী রায়ের রাজনীতির হাতেখড়ি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার বিধায়িকা হওয়ার সুবাদে শোভন বাবুর সঙ্গে সম্পর্ক ভালই ছিল দেবশ্রীর।

কিন্তু পরবর্তীতে বৈশাখীদেবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পরে দেবশ্রীর সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা হতে শুরু করে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। যার কারণেই দেবশ্রীকে বিজেপিতে যোগদান করতে আসা দেখে নিজে যোগদান থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছিলেন শোভনবাবু। কিন্তু রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনে প্রশ্ন, যখন শেষ মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস জানতে পেরেছে যে, শোভন বিজেপিতে যোগ দিতে দিল্লি উড়ে গেছে, তখন কি আর এই যোগদান পর্বকে ভণ্ডুল করার জন্যই দেবশ্রীকে ব্যবহার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস!

আর এর মধ্যে কি দলের কোনো নেতৃত্বের সহযোগিতা রয়েছে! কারণ তৃণমূল পাঠালেও টপ টু বটম নিরাপত্তায় মোরা বিজেপি কেন্দ্রীয় দফতরে হুটহাট করে কেউ ঢুকে যেতে পারে না। যদি না তাতে কোনো নেতৃত্তের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা থাকে। জল্পনা আরও বেড়েছে শোভনের বিজেপি যোগদানের পড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে এদিন।

দেবশ্রী রায় প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে পার্থবাবু বলেন, “বিরোধী দলের কার্যালয়ে দলের কাউকে দেখা গেলে কি তাকে বহিষ্কার করতে হবে নাকি!” আর এই মন্তব্য যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, পার্থবাবুর মন্তব্য অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। দেবশ্রী রায়ের বিজেপি অফিস যাত্রার উদ্দেশ্য নিয়ে এখন শোভন-বৈশাখী যোগদানে দেবশ্রী বাধা রীতিমত চর্চার বিষয় রাজ্য রাজনীতির অন্দরে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!