বিজেপি কোথাও নেই, লোকসভার ভরাডুবি কাটিয়ে বিধানসভায় ১০০% সাফল্য আনার দাবি হেভিওয়েট মন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ তৃণমূল রাজনীতি রাজ্য June 29, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। আটটি আসনের মধ্যে আটটিতেই পরাজিত হতে হয় রাজ্যের শাসকদলকে। কোচবিহার জেলা তৃণমূলের এককালে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাক্তন যুবনেতা বিজেপিতে নাম লিখিয়ে কোচবিহার কেন্দ্র থেকে নিজের জয় নিশ্চিত করেন। আর নিশীথ প্রামাণিক বিজেপির টিকিটে জয়লাভের পরই কিছুটা হলেও চাপে পড়েন তৎকালীন কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। আর এরপরই রবীবাবুর ডানা ছাটেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে সভাপতি করে কার্যকরী সভাপতি করা হয় রবী ঘোষের অত্যন্ত বিরোধী বলে পরিচিত এই কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। তবে তারপরেও এই জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল অব্যাহত ছিল। বর্তমানে করোনা ইস্যুতে এমনিতেই তৃণমূল সেভাবে ময়দানে নামতে পারছে না। তবে লকডাউন পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ার পরেই এবার সমবেতভাবে ময়দানে নেমে কোচবিহারে বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে রীতিমত উদ্যোগী হল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বস্তুত, এখনও পর্যন্ত কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনি আসতে পারছেন না। তাই তার পরিবর্তে বর্তমানে কোচবিহার জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীকে। জানা যায়, বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে শনিবার মাথাভাঙা মহাকুমার নিশিগঞ্জ নেতাজি সুভাষ সদনে তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ চক্রবর্তী, জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, মিহির গোস্বামী, জগদীশ রায় বসুনিয়া, হিতেন বর্মন, অর্ঘ্য রায়প্রধান সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃত্বরা। আর সেখানেই নিজেদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি কোচবিহার জেলায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যে ভালো ফল করতে হবে এবং সবকটি আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে হবে, তার বার্তা দেন সমস্ত তৃণমূল নেতারা। এদিন এই প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “করোনা আবহে আমরা যেহেতু বড় কোনো সভা করতে পারছি না, তাই সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে বিধানসভা ভিত্তিক সভা শুরু করা হল। মাথাভাঙ্গা বিধানসভা থেকে তার কাজ শুরু করা হলেও, পরবর্তীতে অন্যান্য বিধানসভাগুলোতে এই কর্মীসভা করা হবে। প্রায় তিন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত কোচবিহারের সাংসদকে মানুষ দেখতে পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 25 হাজারের বেশি যেখানে পরিযায়ী শ্রমিক থাকবে, সেখানে গরিব কল্যাণ যোজনা নামে একটি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “এটুকু বলা ছাড়া তার আর কোনো কাজ দেখলাম না। আমাদের জেলায় 43 লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এসেছে। কিন্তু তাদের কথা একবারও স্থানীয় সাংসদ গিয়ে বলেননি। সাংসদ যদি কাজ করত, তাহলে কোচবিহারের শ্রমিকদের গরিব কল্যাণ যোজনায় ঢুকিয়ে দিতে পারত।” এদিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলা থেকে রেকর্ড আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিতে হবে বলে জানান রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, “আমরা একমাত্র দল, যারা করোনা মোকাবিলায় ময়দানে নেমেছি। মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছি। কিন্তু বিজেপি ঘরে ঢুকে বসে আছে। আমরা প্রত্যেক দিন মানুষের পাশে রয়েছি। আজকের সভা থেকে শপথ গ্রহণ করা হয়েছে, এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলায় সবকটি বিধানসভা মমতা ব্যানার্জিকে উপহার দেওয়া হবে।” আর রবীন্দ্রনাথ ঘোষের এই মন্তব্যে এখন কিছুটা হলেও গুঞ্জন তৈরি হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। অনেকে বলছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথবাবু দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কোচবিহার কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তাতে সফল হননি। যার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ডানা ছাটতে শুরু করেন। তবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করার জন্য এখন বিজেপির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, এই জেলার সমস্ত আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে যে শপথ করলেন রবীন্দ্রনাথবাবু, তাতে তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরমহলে। কেননা এই জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল এখনও চরম পর্যায়ে রয়েছে। ফলে নিজেদের ঘর তৃণমূল যদি না সামলাতে পারে, তাহলে কিভাবে তাদের পক্ষে সবকটি আসন নিজেদের দখলে রাখা সম্ভব হবে, তা নিঃসন্দেহে সংশয়ের বিষয়। বিশেষ করে একদা ‘ঘরের ছেলে’ নিশীথ প্রামানিক এখন বিপক্ষ শিবিরের প্রধান কান্ডারি। অন্যদিকে, গুঞ্জন রবীন্দ্রনাথবাবুর জেদের জন্যই নাকি শেষপর্যন্ত টিকিট পান নি পার্থপ্রতিমবাবু। আর তাই, শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথবাবু নিজের কথা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কতটা রাখতে পারেন, তার দিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। আপনার মতামত জানান -