তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগের আবেদন একাধিক তৃণমূল জনপ্রতিনিধির! পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য October 10, 2019 বাঁকুড়া জেলায় গত লোকসভা নির্বাচনে রীতিমতো পর্যুদস্ত হতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই পদ্ম ফুল ফুটেছে। যার কারণে এই জেলায় নিজেদের সংগঠনের পুনর্বিন্যাস করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘাসফুল শিবিরের পক্ষে। আর এবার তৃণমূল কংগ্রেসের অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়ে পঞ্চায়েতের কাজকর্মের পদ্ধতি নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন তুলে চারজন পঞ্চায়েত সদস্য বড়জোড়ার বিডিও সাহেবের কাছে পদত্যাগ করবার জন্য আবেদন পত্র জমা দেন। যার জেরে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে বড়জোড়া ব্লক সহ সমগ্র বাঁকুড়া জেলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। ক্রমেই এই ব্যাপারে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সকলের প্রশ্ন, তবে কি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ওই চারজন পঞ্চায়েত সদস্য! যদিও তাদের পদত্যাগ জমা দেওয়ার বিষয়ে বড়জোড়ার ভিডিও ভাস্কর রায় জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যদিও নিজেদের পদত্যাগ নিয়ে কোনো রকমই মন্তব্য করতে চাননি পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশকারী ওই চারজন সদস্য। তবে এই বিষয়ে বিষ্ণুপুর সংসদীয় তৃণমূল জেলা সভাপতি শ্যামল সাতরা বলেন, “ওই সদস্যরা যাতে সিদ্ধান্ত বদল করেন, তা নিয়ে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি।” তবে স্থানীয় তৃণমূল স্তর থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশকারী ওই চারজন পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েতের টেন্ডার ডাকার পদ্ধতি সহ একাধিক কাজকর্ম নিয়ে দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এই নিয়ে দলের অন্দরে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছিলেন ওই পঞ্চায়েত সদস্যরা। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - এই বিষয়ে দলীয় কিছু কিছু নেতাকর্মীদের মধ্যেও পঞ্চায়েতে সঠিক নিয়ম মেনে টেন্ডার সহ অন্যান্য কার্য পরিচালনা করা হয় না, পাশাপাশি দলের বিভিন্ন বৈঠক থেকে শুরু করে সভা কর্মসূচি ইত্যাদিতে ঢাকা হচ্ছিল না ওই সদস্যদেরকে। যার কারণে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছেন। তবে গোটা ব্যাপারে পঞ্চায়েতের স্বচ্ছতার উপরে ওঠা সমস্ত প্রশ্নকেই অস্বীকার করেছেন বড়জোড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সরস্বতী ধীবর। এদিন তিনি বলেন, “কাজকর্ম নিয়ম মেনেই করা হয়। উন্নয়নমূলক কাজের সিদ্ধান্তের সময় সমস্ত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। যে সমস্ত সদস্য পদত্যাগ করতে চেয়েছে, তাদের আসল অভিযোগটা কি, তা আমার জানা নেই।” কিন্তু যে যাই বলুন না কেন, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই বড়জোড়া ব্লকে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই হালে পানি পাচ্ছে না রাজ্যের শাসক দল। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী সোহম চক্রবর্তীকে সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হতে হয়। মাঝখানে 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়জোড়া ব্লকের প্রায় সবকটি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় যুক্ত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে শুরু করে, গ্রাম পঞ্চায়েত সর্বত্রই জোড়া ফুলের জয়জয়কার হয়। একটি পঞ্চায়েত আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন বাদ দিয়ে বিরোধীদের কপালে কিছুই জোটেনি। কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে চিত্রটা আমূল পাল্টে যায়। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে এই ব্লকে জয়ী হতে দেখা যায় বিজেপি প্রার্থীকে। তাই বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাঁকুড়া জেলার সাংগঠনিক পরিস্থিতি যে, তৃণমূলের কাছে শুভকর নয়, তা বলাই বাহুল্য। তার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া বড়জোড়া পঞ্চায়েতের এই চার সদস্যের ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করা, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য জমি প্রস্তুত করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। তাই এই ইস্যু নিয়ে রীতিমত মৌন অবস্থান ধারণ করেছেন তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব। জেলা পরিষদ সদস্য কর্মাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে ব্লকের বিশিষ্ট তৃণমূল নেতাদের কাছে প্রশ্ন করতে গেলে তারা জবাবে বলেন, তারা কোন মত প্রকাশ করতে পারবেন না। এই বিষয়ে যা জানানোর জেলার সভাপতি জানাবেন। এদিকে এই প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল সাঁতরা গোটা বিষয়ের উপরে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, “পদত্যাগে ইচ্ছা প্রকাশকারী ওই সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা তা মেটাতে তৎপর।” গোটা ঘটনাকে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। তবে এই বিষয় নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিরোধী দলগুলি। সিপিএম থেকে শুরু করে বিজেপি, সকলেই এই ব্যাপার নিয়ে রাজ্যের শাসক দলকে কটাক্ষ করেছেন। এদিন এই প্রসঙ্গে সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী শাসক দলকে আক্রমণ করে বলেন, “এই ঘটনা সাধারণের সামনে প্রমাণ করল বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতে কিভাবে দুর্নীতি করছে তৃণমূল। তবে বড়জোড়া ব্লকের এই ঘটনা যে একরকম রাজনৈতিক রঙ ধারন করেছে, তাতে করে আগামী দিনে এই ঘটনা যে সরকারের অস্বস্তির মাত্রা বৃদ্ধি করবে, সেই বিষয়ে প্রায় একমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আপনার মতামত জানান -