এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > তৃনমূলের ধর্না বিপদ বাড়াচ্ছে মমতার? বড়সড় ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন শুভেন্দু! উচ্ছ্বসিত বিরোধীরা!

তৃনমূলের ধর্না বিপদ বাড়াচ্ছে মমতার? বড়সড় ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন শুভেন্দু! উচ্ছ্বসিত বিরোধীরা!


প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-রাজ্য পুলিশ তাদের হাতে রয়েছে তাই যেমনভাবে হোক, সেভাবেই তাদেরকে কন্ট্রোল করার অভ্যাসটা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাদের নেতারা। রাজ্যের যেখানে নিমিষে সভা করার অনুমতি দেওয়া যায়, সেখানে বিরোধীরা সভা করতে চাইলেও এবং সেই জায়গা ফাঁকা থাকলেও তাদেরকে পুলিশ দিয়ে অনুমতি দেওয়া হয় না। এটাই তৃণমূলের আমলে প্র্যাকটিস হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। কিন্তু রাজ্যটা তৃণমূলের হলেও রাজভবনটা তাদের নয়। সেখানে থাকেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তাই সেই রাজভবনের অদূরে যেখানে 144 ধারা রয়েছে, সেখানে কি করে শাসক দল এবং তাদের নেতারা লাগাতার দিনের পর দিন ধর্না করছেন?

এই প্রশ্ন বাংলার বঞ্চিত চাকরি প্রার্থী, যারা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন, তারা করতে শুরু করেছিলেন। এই প্রশ্ন তুলেছিলেন সরকারি কর্মচারীরাও। এই প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। আর সবদিক থেকেই যখন এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন নিজের বিপদ বুঝতে পেরেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শেষ মুহূর্তে ভাইপোকে তিনি হয়তো জানিয়ে দিয়েছেন যে, না। আর ধর্না চালানো যাবে না। এবার তা তুলে নিতে হবে। তা না হলে বিরোধী দলনেতা যেভাবে তাদের সরকারকে কাবু করছে, তাতে সেই পরিমাণটা আরও বাড়বে। প্রয়োজনে ফল মারাত্মক হতে পারে। অন্যদিকে সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া করতে নারাজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও। শাসক দল যখন রাজভবনের সামনে 144 ধারার মধ্যে ধর্না করছে, তখন নিশ্চয়ই সবার এই রকম ধর্না আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তাই যারা রাস্তায় বসে চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন, যারা ডিএর দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাদের সকলকে রাজভবনের সামনে আন্দোলন করার অনুমতি নিতে বললেন শুভেন্দু অধিকারী।

প্রসঙ্গত, এদিন তৃণমূলের ধর্ণা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “কি হচ্ছে জানি না। কিন্তু এই ধর্না যখন তৃণমূল করছে, তখন আমি শিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা যারা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন, তাদের বলব যে, আপনারা সকলে মিলে রাজভবনের সামনে ধর্না দেওয়ার জন্য আন্দোলন করার জন্য অনুমতি নিন। যদি অনুমতি না পান, তাহলে আপনারা আদালতে যান। কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে এসে আন্দোলন করুন।” আর এখানেই অনেকে বলছেন, একদিকে রাজ্যপাল এবং অন্যদিকে নবান্ন, নিজের এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে দুই পক্ষকেই চাপে ফেলে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যপালের তো উচিত ছিল, অনেক আগেই তৃণমূলের এই ধর্নাকে তুলে দেওয়ার। কিন্তু তিনি অনেকটা সময় নষ্ট করেছেন। তৃণমূলকে এই আন্দোলন করতে দিয়ে সংবিধানকে বিপদজনক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাই যখন তৃণমূলকে এই আন্দোলন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে, তখন কলকাতার রাস্তায় যারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরির দাবিতে আন্দোলনে বসে রয়েছেন, যাদের দিকে সরকার তাকাচ্ছে না, তাদেরকেও এই আন্দোলন করার অধিকার নিশ্চয়ই দেবে রাজভবন। আর যদি তা না দেওয়া হয়, তাহলে সেই রাজভবনের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়েও মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠবে বলেই মনে করছেন একাংশ।

বিরোধীদের দাবি, এই সরকারের আমলে রাজ্যে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। পুলিশকে ব্যবহার করে রাজভবনের সামনে দিনের পর দিন এই ধর্নার নামে নাটক চালিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের যুবরাজ। আর রাজ্যপাল সবকিছু দেখেও হালকা ভাবে নিয়েছিলেন গোটা বিষয়টি। তিনি ভেবেছিলেন যে, কেউ কিছু বলবে না। এভাবেই সবকিছু চলবে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা চেপে ধরার পর রাজভবনও চাপের মুখে পড়ে গিয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত রাজভবনের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিবের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, কেন 144 ধারার মধ্যে এই ধর্না করছে তৃণমূল! কিন্তু এত সহজ একটা প্রশ্ন করে তো গোটা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তৃণমূল আন্দোলন হয়ত এখন তুলে নিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে যখন আন্দোলন করার সময় কোনো বাধা দেওয়া হয়নি, তারা দিনের পর দিন বসেছিল, তখন যারা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাদেরকেও বাধা দেওয়া উচিত নয়। তাই এবার শুভেন্দু অধিকারীর আহবানে যদি চাকরি প্রার্থীরা রাজভবনের সামনে আন্দোলনে বসেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ তাদেরকে তুলে দেবেন না তো? আর পুলিশের সেই লাঠির আঘাত চলার সময় রাজ্যপাল তাদের বাধা দিয়ে নিজের নিরপেক্ষতার প্রমান দেবেন তো? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূলের এই ধর্না নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপদ অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। এখন যদি চাকরিপ্রার্থীরা সত্যি সত্যিই রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসে যায়, তাহলে পুলিশ তেমন কিছু করতে পারবে না। কারণ তখন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠবে যে, আপনারা তৃণমূলের ধর্নার সময় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি কেন? ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ মন্ত্রী তখন জবাব দেওয়ার মতো জায়গায় থাকবেন না। আর রাজ্যপালও এই স্পর্শকাতর আন্দোলনের বিষয় নিয়ে ন্যায্য চাকরিপ্রার্থীদের ওপর কোনো চোখ রাঙানি দেখাতে পারবেন না। কারণ তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠবে যে, আপনিও কি তাহলে শাসকদলের দেখানো পথেই হাঁটছেন? যারা ন্যায্য আন্দোলন করছে, তাদের টুটি চিপে ধরে যে অন্যায় কাজ করছেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা, সেই একই পথে আপনিও পা বাড়াচ্ছেন? ফলে সবদিক থেকেই শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের এই ধর্নার পরে এমন একটা ব্লু প্রিন্ট সাজিয়ে নিলেন, যাতে নবান্ন থেকে রাজভবন, সকলের উভয় সংকট। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!