প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গেছে‌। আর পাঁচটা বিধানসভা নির্বাচনের থেকে এই বারের নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রে আলাদা। কারণ এই প্রথম রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত হতে চলেছে ভারতবর্ষের শাসক দল তথা বিশ্বের সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত ভারতীয় জনতা পার্টির। তাই শুধুমাত্র রাজ্যস্তরে নয়, সর্বভারতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে অনেকেরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াচ্ছে 2021 সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। আবার এই নির্বাচনের ফলাফল কি হয়, তা নিয়েও জনমানুষের মধ্যে আগ্রহের অন্ত নেই।

প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার তরফ থেকে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের 30 টি আসনের ফলাফল বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। অবশ্যই বিধিসম্মতভাবে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, আমাদের বিশ্লেষণ কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। নির্বাচন কোনো ভাবে প্রভাবিত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যে চিত্র উঠে আসছে, তা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রথমেই দৃষ্টি দেওয়া যাক, প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষায় বাদ চলে গিয়েছিল পুরুলিয়ার বলরামপুর আসন। তাই প্রথমেই দেখে নিই, কি হতে চলেছে সেই বলরামপুর আসনে! আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই বলরামপুর আসনে জয়লাভ করতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী বানেশ্বর মাহাতো। এবার সরাসরি চলে আসি, দ্বিতীয় পর্যায়ের 30 টি আসনের সমীক্ষায়। যার নির্বাচন হতে চলেছে আগামী 1 এপ্রিল। যার মধ্যে রয়েছে নন্দীগ্রাম বিধানসভা।

যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর হাইভোল্টেজ লড়াই হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রথমে আমরা চলে আসি দক্ষিণ 24 পরগনা জেলায়। দক্ষিণ 24 পরগনা গোসাবা বিধানসভায় আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী বরুণ প্রামানিক। অন্যদিকে পাথরপ্রতিমা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অসিত কুমার হালদারকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন তৃণমূল প্রার্থী সমীর কুমার জানা।

কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরাকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী দীপংকর জানা। সাগর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাকে পরাজিত করে বিজেপি প্রার্থী বিকাশ কামিল্লা ফুটিয়ে দিতে পারেন পদ্মফুল।এবার দ্বিতীয় দফায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যে 9 টি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে, সেই 9 টি আসন নিয়ে আলোচনা করব আমরা।

প্রথমেই আমরা লক্ষ্য রাখব, তমলুক বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী হরেকৃষ্ণ বেরা। পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী ফুঠতে চলেছে পদ্মফুল। যেখানে তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব রায় চৌধুরিকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী দেবব্রত পট্টনায়েক।

অন্যদিকে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে বর্তমান বিধায়ক ফিরোজা বিবিকে পরাজিত করে বিজেপি প্রার্থী সিন্টু সেনাপতি এই আসন ছিনিয়ে নিতে পারেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাতে এবার জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী অশোক দিন্দা। এবারে নন্দকুমার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার দে জয়লাভ করতে পারেন। যেখানে পরাজিত হতে পারেন বিজেপি প্রার্থী নীলাঞ্জন অধিকারী।

অন্যদিকে মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে এবার জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ ব্যানার্জি। মহিষাদলের পর হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী তৃণমূল প্রার্থী স্বপন নস্করকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী তাপসী মন্ডল। আর পূর্ব মেদিনীপুর তথা রাজ্যের সব থেকে হাইভোল্টেজ বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রাম আসন নিয়ে এবার সমীক্ষা প্রকাশ করব আমরা।

যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছেন। আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী ইঙ্গিত আসছে, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে পেতে পারেন 40 শতাংশ ভোট। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী পেতে পারেন 48 শতাংশ ভোট। অর্থাৎ এই বিধানসভা কেন্দ্রের আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।

এবারে চন্ডীপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ট অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। কিন্তু তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে এখানে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী পুলককান্তি গুড়িয়া। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর এবার আলোচনা করব পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নিয়ে। যেখানে এই পর্যায়ে 9 টি বিধানসভা আসন রয়েছে। প্রথমেই খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করব আমরা। যেখানে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার পরাজিত করে দিতে পারেন বিজেপি সেলিব্রিটি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে।

এবারে বামেদের একসময়কার শক্ত ঘাঁটি নারায়ণগড় বিধানসভা কেন্দ্রে এবার জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী রমাপ্রসাদ গিরি। অন্যদিকে আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী সবং বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অমূল্য মাইতিকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন তৃণমূলের মানস রঞ্জন ভূইয়া। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম একটি বিধানসভা কেন্দ্র পিংলা। এখানে তৃণমূল প্রার্থী অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ অজিত মাইতিকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী অন্তরা ভট্টাচার্য।

অন্যদিকে এই জেলার ডেবরা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রাক্তন দুই আইপিএস কর্তার লড়াই হতে চলেছে এবার। যেখানে তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীর এবং বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। প্রিয়বন্ধু বাংলার সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীরকে পরাজিত করে এখানে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। এবারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দাসপুর বিধানসভা। এখানে তৃণমূল প্রার্থী মানস রঞ্জন ভূইয়ার স্ত্রী মমতা ভূইয়াকে পরাজিত করে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপি প্রার্থী প্রশান্ত বেরার।

তৃণমূলের অত্যন্ত শক্ত ঘাঁটি ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্র। এবার সেখানে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী শীতল কপাট, প্রিয়বন্ধু বাংলার সমীক্ষায় অন্তত তেমনটাই উঠে আসছে। চন্দ্রকোনা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ঝড়কে রুখে দিয়ে জয়লাভ করতে পারেন তৃণমূল প্রার্থী অরূপ ধারা। একইভাবে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপিকে কিছুটা পেছনে ফেলে দিয়ে জয়লাভ করতে পারেন তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের 9 টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আলোচনার পর এবার আমরা কথা বলব, বাঁকুড়া জেলার আটটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। প্রথমেই বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের তালডাংরা কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করব আমরা। যেখানে তৃণমূলের নতুন প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী শ্যামল কুমার সরকার। বাঁকুড়া সদর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে বিশিষ্ট অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জিকে। কিন্তু হেভিওয়েট প্রার্থী দিলেও তৃণমূল কংগ্রেসকে চাপে রেখে এখানে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী নীলাদ্রি শেখর দানা।

অন্যদিকে বাঁকুড়ার বড়জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী এবং সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী। এবারে বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্রে উঠতে পারে গেরুয়া ঝড়। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী অরূপ কুমার খানকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী অমরনাথ শাখা। গত লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুরের বিজেপির প্রভাব যথেষ্ট লক্ষ্য করা গেছে। আর এবারেও সেখানে অটুট থাকতে পারে গেরুয়া ঝড়। যেখানে তৃণমূলের অর্চিতা বিদকে হারিয়ে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী তন্ময় ঘোষ।

কিছুদিন আগেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বদল করা হয়েছে। আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী আভাস মিলেছে, এখানে জয়লাভ করতে পারেন তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা মালিক। অন্যদিকে ইন্দাস বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপি প্রার্থী নির্মল কুমার ধারার। আর দ্বিতীয় দফার ভোটে শেষ আসন বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্র। যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরাকে পরাজিত করে জয়লাভ করতে পারেন বিজেপি প্রার্থী দিবাকর ঘরামি।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফার 60 টি বিধানসভা কেন্দ্রের সমীক্ষা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম আমরা। যার মধ্যে 13 টি তৃণমূল কংগ্রেস, 45 টি বিজেপি এবং 2 টি আসনে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন। কিন্তু এই আসনগুলোর আসল ফলাফল কি হয়, তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে 2 মে পর্যন্ত। সব মিলিয়ে বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই চিত্র উঠে আসছে প্রিয়বন্ধু বাংলায়।